নিজের স্বার্থেই সেই বাহিনীর পক্ষে দাঁড়ালেন সু চি

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গতকাল মঙ্গলবার শুনানি শুরু হয়েছে। শুনানিতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি সেই সেনাবাহিনীর পক্ষেই দাঁড়িয়েছেন, যে সেনাবাহিনী প্রায় দুই দশক তাঁকে গৃহবন্দী করে রেখেছিল। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা অনেক দেশের কাছেই সু চির এই অবস্থান অসমর্থনযোগ্য।

তবে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে আইসিজেতে মিয়ানমারের পক্ষে দাঁড়ানোর এই সিদ্ধান্ত নিজ দেশে সু চির অবস্থান আরও দৃঢ় করেছে। আগামী বছর মিয়ানমারে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

বিশ্লেষক ও সু চির চিন্তাভাবনার সঙ্গে পরিচিত ব্যক্তিরা বলেছেন, মিয়ানমারের স্থানীয় পর্যায়ের পরিস্থিতির কারণেই সু চি শুনানিতে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো তাঁর ব্যক্তিগত ও দলের সমর্থন জোরদার করা এবং সেনাবাহিনীকে হাতে রাখা। মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক সরকার থাকলেও সেনাবাহিনীই ক্ষমতা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করে।

জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতের শুনানিতে অংশ নিতে সু চি গত রোববার দেশত্যাগ করেন। এদিন তাঁর সমর্থনে লাখো মানুষ মিছিল করেছে। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়ে তাঁর জন্য প্রার্থনা হয়েছে। 

মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার সু চির দেশত্যাগের খবরটি দিয়ে বলেছে, তিনি জাতীয় স্বার্থের পক্ষে অবস্থান নেবেন।

আজ বুধবার শুনানিতে অংশ নেবেন সু চি। তবে আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ মামলার রায় আসতে আসতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের আন্তর্জাতিক বিচার কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক পরম–প্রীত সিং বলেন, বিশ্বাসযোগ্য একটি আদালতে রাখাইনে সেনাবাহিনীর নৃশংসতার জন্য এবারই প্রথম তাদের জবাব দিতে হবে। তিনি বলেন, কোনো বড় শক্তি যে কাজটি করতে পারেনি, গাম্বিয়ার মতো ছোট একটি দেশ তা করে দেখিয়েছে। তাদের এই মামলার কারণে নতুন এক দ্বার উন্মোচিত হয়েছে, যা এর আগে ছিল না।

ইয়াঙ্গুনভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক রিচার্ড হোরসে বলেন, সু চি মনে করেন, দ্য হেগে মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষেত্রে তিনিই একমাত্র উপযুক্ত ব্যক্তি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে মিয়ানমারের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে তিনি ওয়াকিবহাল। তবে তাঁর মনোযোগ নিজ দেশের ভোটারদের দিকেও রয়েছে।