রোহিঙ্গা গণহত্যায় নিজেদের সাফাই গাইছে মিয়ানমার

আইসিজেতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর ও এজেন্ট অং সান সু চি। দ্য হেগ, নেদারল্যান্ডস, ১১ ডিসেম্বর। ছবি: রয়টার্স
আইসিজেতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর ও এজেন্ট অং সান সু চি। দ্য হেগ, নেদারল্যান্ডস, ১১ ডিসেম্বর। ছবি: রয়টার্স

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে আজ বুধবার দ্য হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমার বক্তব্য শুরু করেছে। শুরুতে বক্তব্য দিচ্ছেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর ও এজেন্ট অং সান সু চি।

সু চি তাঁর বক্তব্যের শুরুতে আন্তর্জাতিক আইন ও সনদসমূহের বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে আদালত সহায়তা করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, গণহত্যা সনদের বিধান রুয়ান্ডা ও সাবেক ইয়োগোস্লাভিয়ায় প্রয়োগ করা হয়নি। গাম্বিয়ার দাবিতে বিভ্রান্তিকর তথ্য রয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার আইসিজেতে ১৭ জন বিচারপতির উপস্থিতিতে প্রথম দিনের শুনানি হয়। এদিন আদালতে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির উপস্থিতিতে অভিযোগকারী আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু মানবতাবিরোধী নৃশংসতার অভিযোগগুলোর সারাংশ তুলে ধরেন। আজ মিয়ানমারের কর্মকর্তা ও আইনজীবীরা তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরবেন।

গতকাল অভিযোগকারী দেশ গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী তামবাদু বলেন, বিশ্ববিবেকের কালিমা মোচনে আর দেরি করা চলে না। একমাত্র এই আদালতই শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারে, আশা জাগাতে পারে। আন্তর্জাতিক বিচারব্যবস্থাকে অবশ্যই কার্যকর করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আইসিজে মিয়ানমারকে বলুক যে এখনই রোহিঙ্গা শিশুদের হত্যা বন্ধ করতে হবে, নৃশংসতার অবসান ঘটাতে হবে।’

গাম্বিয়ার পক্ষে আদালতে গণহত্যার উদ্দেশ্য, গণহত্যার কার্যক্রম, ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতা, গাম্বিয়া এবং মিয়ানমারের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টির পটভূমি, আদালতের এখতিয়ার এবং অন্তর্বর্তী পদক্ষেপ হিসেবে কী কী ব্যবস্থা প্রয়োজন, সেগুলো তুলে ধরেন আরও সাত আইন বিশেষজ্ঞ।

রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা ও তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে গাম্বিয়া যেসব অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যাসহ সব ধরনের নিপীড়ন বন্ধ রাখা, গণহত্যার কোনো আলামত নষ্ট না করা, জাতিসংঘের তদন্তকারীসহ অন্যদের আরাকানে ধ্বংসপ্রাপ্ত রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোতে অবাধে প্রবেশাধিকার দেওয়া।

আইসিজেতে আজ বুধবার দ্বিতীয় দিনের শুনানি চলছে। দ্য হেগ, নেদারল্যান্ডস, ১১ ডিসেম্বর। ছবি: রয়টার্স
আইসিজেতে আজ বুধবার দ্বিতীয় দিনের শুনানি চলছে। দ্য হেগ, নেদারল্যান্ডস, ১১ ডিসেম্বর। ছবি: রয়টার্স

আদালতের প্রথম দিনের কার্যক্রম শেষে শুনানি মুলতবি করা হয়। আদালতের প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবদুলকোয়াই আহমেদ ইউসুফ ঘোষণা করেন, শুনানির দ্বিতীয় দিন বুধবার মিয়ানমারের বক্তব্য শোনা হবে।

কাল বৃহস্পতিবার আদালত বসবেন দুই বেলা। এদিন সকালে গাম্বিয়া ও বিকেলে মিয়ানমারের জবাব ও নতুন কোনো যুক্তি থাকলে সেগুলো শোনা হবে।

আদালতের রেজিস্ট্রারের দপ্তর থেকে ধারণা দেওয়া হয়, চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে আদালত সিদ্ধান্ত দিতে পারেন।

সূর্য ওঠার আগেই সু চির সমর্থনে পিস প্যালেসের সামনে মিয়ানমারের নাগরিকেরা জমায়েত হয়েছেন। সেখানে একজন বৌদ্ধ ভিক্ষুকেও দেখা যায়, যিনি মিয়ানমারের একটি টিভি চ্যানেলে সরাসরি সাক্ষাৎকার দেন।

এদের হাতে সু চির ছবির সঙ্গে ‘আমরা তোমার পাশে আছি’ (উই স্ট্যান্ড উইথ ইউ) স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড এবং ব্যানার ছিল।

মামলায় মিয়ানমারের এজেন্ট অং সান সু চি। তবে বিকল্প এজেন্ট হিসেবে রয়েছেন স্টেট কাউন্সেলর দপ্তরের ইউনিয়নমন্ত্রী চ টিন্ট সোয়ে।

মিয়ানমারের পক্ষে অন্য যেসব আইনজীবী প্রতিনিধিত্ব করছেন তাঁরা হলেন দেশটির আন্তর্জাতিক সহযোগিতামন্ত্রী ট টিন, যুক্তরাজ্যের এসেক্স চেম্বারসের ক্রিস্টোফার স্টকার, মিডলসেক্স ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক অপরাধ এবং মানবাধিকার বিষয়ের অধ্যাপক উইলিয়াম সাবাস, কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক আইনের পাবলিক ইন্টারন্যাশনাল ল’র অধ্যাপক ও কেনিয়ার হাইকোর্টের আইনজীবী মিস ফোবে ওকোয়া, হার্ভাডের আন্তর্জাতিক আইনের অধ্যাপক অ্যান্ড্রিয়াস জিমারম্যান এবং যুক্তরাজ্যের এসেক্স চেম্বারসের মিস ক্যাথেরিন ডবসন।