খালেদার মেডিকেল রিপোর্ট পরিবর্তন করা হচ্ছে, আশঙ্কা ফখরুলের

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার যে মেডিকেল রিপোর্ট দিয়েছে, তা পরিবর্তন করে ভিন্ন রিপোর্ট আদালতে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ বুধবার গুলশানের একটি হোটেলে ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস’ উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। ৫ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার মেডিকেল রিপোর্ট দাখিল ও জামিনবিষয়ক শুনানি হওয়ার কথা ছিল। তবে সেদিন রিপোর্ট দাখিলের জন্য বিএসএমএমইউ সময় চাওয়ায় ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে তা দাখিল করতে নির্দেশ দেন আদালত। আগামীকাল এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। শুনানির এক দিন আগে মির্জা ফখরুল তাঁর আশঙ্কার কথা জানালেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘খালেদা জিয়ার যে মেডিকেল রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে, সেই রিপোর্ট এখনো আসেনি। আমরা যেটুকু জানতে পেরেছি, বিএসএমএমইউ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যে রিপোর্ট দিয়েছিল, সেটিকে সরিয়ে অন্য কোনো রিপোর্ট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, বেআইনিভাবে খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটক রাখার জন্য সরকার সচেতনভাবে কাজ করছে এবং বড় রকমের মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার মতো একই ধরনের মামলায় অন্য আসামিদের জামিন হয়ে গেছে। কিন্তু খালেদা জিয়ার জামিনে সরকার বিভিন্নভাবে বাধা দিচ্ছে।

বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি ভয়াবহ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশে ভিন্নমত ও ভিন্ন রাজনৈতিক চিন্তার কারণে প্রায় ৩৫ লাখ মানুষকে মামলার আসামি করা হয়েছে। রাজনৈতিক মামলাসহ নানা ধরনের মামলা দেওয়া হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৪ হাজার ৮১৪টি। ২০০৯ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত সরকার এবং আওয়ামী লীগের হাতে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা মারা গেছেন ১ হাজার ৫২৬ জন। সব মিলিয়ে গুম হয়েছেন ৭৮১ জন। মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, সরকারকে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যই বেআইনি কাজগুলো করতে হচ্ছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার মানুষকে বোকা বানিয়ে উন্নয়নের কথা বলে। উন্নয়ন দিয়ে কখনো জনগণের সমস্যার সমাধান করা যায় না। গণতান্ত্রিক পরিবেশ না থাকলে উন্নয়ন কখনোই টেকসই হবে না। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

গোলটেবিলে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ ১৫টি দেশের কূটনীতিকেরা অংশ নেন। বিএনপির সম্পাদনায় ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা তথ্যসংবলিত গ্রন্থ ‘অ্যাবসেন্স অব ডেমোক্রেসি অ্যান্ড সিস্টেমেটিক হিউম্যান রাইটস ভায়োলেশনস বাই স্টেট অ্যাপারেটাস’–এর মোড়ক উন্মোচন করেন বিএনপি মহাসচিব। বিএনপির মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান সূচনা বক্তব্যে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরেন। বৈঠকে ভারত ও পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনাররা নিজ নিজ দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন।

মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে এবং সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও ফারজানা শারমিনের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি চিকিৎসক জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ মাহবুবউল্লাহ, অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, সাবেক সচিব এ এইচ এম মোফাজ্জল করীম প্রমুখ।