চীনের নাগরিককে শ্বাসরোধে হত্যার পর মাটিচাপা

রাজধানীর বনানী এলাকায় জিয়ানহুই গাও (৪৭) নামে চীনের এক নাগরিকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, তাঁকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। এরপর লাশ গুম করতে ভবনের পেছনের সীমানাপ্রাচীরের ভেতরে খালি জায়গায় মাটিচাপা দেওয়া হয়।

আজ বুধবার দুপুরে বনানীর এ ব্লকের ২৩ নম্বর সড়কের ২৮ নম্বর বাড়ির সীমানা দেওয়ালের ভেতর থেকে মাটিচাপা অবস্থায় জিয়ানহুই গাওয়ের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁর গলায় আঘাতের চিহ্ন ছিল।

জিয়ানহুই গাও পদ্মা সেতুতে পাথর সরবরাহের ব্যবসা করতেন। তাঁর লাশ উদ্ধারের পর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সুদীপ চক্রবর্তী সাংবাদিকদের বলেন, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব বা ব্যক্তিগত বিরোধের জের ধরে জিয়ানহুই গাওকে তাঁর ফ্ল্যাটে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। সেখান থেকে লাশ লিফট বা সিঁড়ি দিয়ে নামালেও ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসি) অকেজো থাকায় সেই দৃশ্য ধরা পড়েনি। কিন্তু কর্তব্যরত নিরাপত্তাকর্মীদের এটি দেখার কথা। এ ঘটনায় গাড়িচালক, গৃহকর্মী, ভবনের নিরাপত্তা কর্মীসহ ছয়জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

ঘটনাস্থলে ডিএমপি গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) উত্তর বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নির্মাণ প্রতিষ্ঠান সিসি ক্যামেরা চালু না রাখার জন্য দায়ী। সিসি ক্যামেরা চালু থাকলে হত্যাকারীরা সহজে শনাক্ত হতো।

জিয়ানহুই গাও বনানীর এ ব্লকের ২৩ নম্বর সড়কের ৮২ নম্বর ১১ তলা বাড়ির ছয়তলায় (৬-বি নম্বর) ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন। তাঁর বাড়ি চীনের ফুজিয়ানে। সেখানে তাঁর এক ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রী রয়েছে। চীন থেকে মাঝেমধ্যে এখানে তাঁর স্ত্রী-সন্তানেরা বেড়াতে আসতেন।

বাড়ির নিরাপত্তা কর্মী আবদুর রউফ প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে জিয়ানহুই গাও গাড়িতে বাসায় ফেরেন। এরপর গাড়িচালক সুলতান আহমেদ ও তাঁর গৃহকর্মী বাসা থেকে বেরিয়ে যান। সন্ধ্যার পর তিনি বাসা থেকে বের হননি। আজ সকালে গাড়িচালক ও গৃহকর্মী এসে জিয়ানহুই গাওকে বাসায় পাননি। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে গাড়িচালক সুলতান বাড়ির পেছনে সীমানা প্রাচীরের ভেতরে একজনের লাশ মাটিচাপা দেওয়া অবস্থায় দেখতে পান। লাশের পা, মাথার চুল ও পা বের হয়েছিল। ঘটনাটি তিনি এসে নিরাপত্তাকর্মী লাবলু আহমেদকে জানান। পরে লাবলু বনানী থানায় জানালে পুলিশ এসে মাটি সরিয়ে জিয়ানহুই গাওয়ের লাশ উদ্ধার করে।

বনানী থানার পুলিশ জানায়, খবর পেয়ে গুলশান বিভাগের ডিসি সুদীপ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে একদল পুলিশ দুপুর ১২টার পর ঘটনাস্থলে যান। এ সময় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অপরাধ শনাক্তকরণ দল, ডিবি, র‍্যাব এবং চীনা দূতাবাসকে খবর দেওয়া হয়। সিআইডির অপরাধ শনাক্তকরণ দল ঘটনাস্থল ও ওই বাসা থেকে পায়ের ছাপের আলামত সংগ্রহ করে। সবাই ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর পুলিশ মাটি সরিয়ে লাশ উদ্ধার করে। এ সময় জিয়ানহুই গাওয়ের লাশ শনাক্ত করা হয়। তাঁর নাক, মুখ ও কান দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল এবং গলায় আঘাতের চিহ্ন ছিল।

আজ বিকেলে দেখা যায়, হলুদ ফিতার বেষ্টনী দিয়ে ঘটনাস্থল ঘিরে রাখা হয়েছে। বাড়িটির নিচতলায় চীনের নাগরিকদের ভিড় ছিল। জিয়ানহুই গাওয়ের ফ্ল্যাট অনুসন্ধানের পর পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বাসার ভেতরে দরজার কাছে ধস্তাধস্তি হয়েছে, পায়ের এমন ছাপের চিহ্ন ছিল। এ ছাড়া এক জোড়া স্যান্ডেলের ওপর দু-তিন ফোঁটা রক্ত জমাট বেঁধেছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জিয়ানহুই গাওয়ের ফ্ল্যাটের মালিক জানান, দেড় বছর আগে জিয়ানহুই গাও ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন। প্রত্যেক মাসের ১০ তারিখের মধ্যে তিনি ভাড়া পরিশোধ করতেন। তাঁর আচরণ ও স্বভাব ভালো ছিল।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, গত ২০ নভেম্বর স্ত্রী ও সন্তানকে চীনে পৌঁছে দিয়ে গত ৭ ডিসেম্বর ঢাকায় ফেরেন জিয়ানহুই গাও। জিয়ানহুই গাওয়ের পাসপোর্টে দেখা যায়, তিনি এ পর্যন্ত ১৮ বার চীন-বাংলাদেশে যাতায়াত করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের ঢাকায় আসার কথা ছিল। আগে তিনি উত্তরায় কাপড়ের ব্যবসা করতেন।