কেরানীগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডে আরও ৮ জনের মৃত্যু

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের প্লাস্টিক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ আরও আটজন মারা গেছেন। এ নিয়ে নিহত মানুষের সংখ্যা ৯ জনে পৌঁছাল। চিকিৎসকেরা বলছেন, দগ্ধ লোকজনের মধ্যে অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক।

গতকাল বুধবার রাত থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ লোকজনের মৃত্যু ঘটে।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হিজলতলা এলাকার একটি প্লাস্টিক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আহত ব্যক্তিদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঢাকা, ১১ ডিসেম্বর। প্রথম আলো ফাইল ছবি
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হিজলতলা এলাকার একটি প্লাস্টিক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আহত ব্যক্তিদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঢাকা, ১১ ডিসেম্বর। প্রথম আলো ফাইল ছবি

প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাহমিনা সাত্তার আটজনের মৃত্যুর তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনের নাম জানা গেছে। তাঁরা হলেন ইমরান, বাবলু, রায়হান, খালেক ও সালাউদ্দিন। বাকি তিনজনের নাম এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি।

গতকাল বিকেলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়ার হিজলতলা এলাকার প্রাইম প্লেট অ্যান্ড প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের কারখানায় ভয়াবহ আগুন লাগে। এতে গতকালই ১ জন নিহত ও ৩৪ জন দগ্ধ হন।

কী কারণে বা কীভাবে আগুন লাগে, তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি। কারখানার শ্রমিকদের ধারণা, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে আগুন লাগতে পারে। অগ্নিকাণ্ডের পর কথা বলার জন্য মালিকপক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি।

ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের উপসহকারী পরিচালক কাজী নজমুজ্জামান গতকাল জানান, এর আগেও কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল আগুন লাগার পর বিকেল ৪টা ২৯ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে সন্ধ্যা পৌনে ছয়টায়।

সন্ধ্যায় দগ্ধ লোকজনকে দেখতে হাসপাতালে যান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এবং কেরানীগঞ্জের সাংসদ নসরুল হামিদ। এ সময় তিনি অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, কারখানাটির অনুমোদন ছিল না বলে জানা গেছে। নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে থাকা কারখানাগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে তিনি স্থানীয় সরকার ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে বলেছিলেন। কিন্তু কারখানাগুলো সরানো যায়নি।

এর আগে চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় আগুন লেগে ৭০ জন নিহত হন। ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর টাম্পাকো প্যাকেজিং ফ্যাক্টরিতে আগুনে নিহত হন ২৪ জন।

জানা গেছে, কারখানাটিতে বিরিয়ানির প্লেট, প্যাকেট ও একবার ব্যবহার উপযোগী (ওয়ান টাইম ইউস) গ্লাস তৈরি করা হয়। পুরান ঢাকার ওয়ারী এলাকার ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম কারখানাটির মালিক। কারখানায় কর্মীর সংখ্যা প্রায় ২০০। যে ইউনিটে আগুন লাগে, সেখানে কর্মরত ছিলেন ৮০ জন।


শ্বাসনালি পুড়েছে ৩২ জনেরই
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের আবাসিক চিকিৎসক পার্থ শঙ্কর পাল গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে ভর্তি অগ্নিদগ্ধ লোকজনের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। প্রত্যেকের শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। ভর্তি রোগীদের অবস্থা এতই খারাপ যে তাঁরা কোনো কথাই বলতে পারছেন না।

দগ্ধ ব্যক্তিদের ১০ জনের বয়স ১৪ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত। বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, দগ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে আলম, জিনারুল ইসলাম, ফারুক, মেহেদী ও রাজ্জাকের শরীরের শতভাগ পুড়ে গেছে। ৯০ শতাংশ পুড়েছে দুর্জয় ও সুজনের। ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত পুড়েছে ১০ জনের।