আপিল বিভাগে খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি শুরু

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি

খালেদা জিয়ার সবশেষ স্বাস্থ্যগত অবস্থা সম্পর্কিত মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগে আজ বৃহস্পতিবার সকালে উপস্থাপন করা হয়েছে। আপিল বিভাগে খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি শুরু হয়েছে।

সকাল ১০টা ১০ মিনিটের দিকে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন আদালতে জমা দেন।

এর আগে সকাল ১০টা ৬ মিনিটের দিকে এজলাসে আসেন প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিরা। এ সময় আদালত খালেদা জিয়া ও রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা কেউ কথা শোনেননি।’

আদালতে প্রবেশের পথে পুলিশের সতর্ক অবস্থান। হাইকোর্ট ভবন, ঢাকা, ১২ ডিসেম্বর। ছবি: দীপু মালাকার
আদালতে প্রবেশের পথে পুলিশের সতর্ক অবস্থান। হাইকোর্ট ভবন, ঢাকা, ১২ ডিসেম্বর। ছবি: দীপু মালাকার

শুনানি শুরু হওয়ার আগেই আজ সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের দিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও খালেদা জিয়ার পক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের উদ্দেশে আপিল বিভাগ বলেছিলেন, আজকের শুনানিতে উভয় পক্ষের ৩০ জন করে আইনজীবী থাকবেন।

কিন্তু শুনানি শুরু হলে দেখা যায়, উভয় পক্ষের কেউ-ই আপিল বিভাগের ওই কথা শোনেননি। সেই প্রসঙ্গেই আদালত উভয় পক্ষকে বলেন, ‘আপনারা কেউ কথা শোনেননি।’

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের ওপর আজ সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে আপিল বিভাগে শুনানি শুরু হয়।

আদালতে প্রবেশ করছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। হাইকোর্ট ভবন, ঢাকা, ১২ ডিসেম্বর। ছবি: দীপু মালাকার
আদালতে প্রবেশ করছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। হাইকোর্ট ভবন, ঢাকা, ১২ ডিসেম্বর। ছবি: দীপু মালাকার

প্রথমে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদনের বিষয়ে কথা বলেন।

পরে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন তুলে ধরেন।

জয়নুল আবেদীন বলেন, কয়েক মাসে খালেদা জিয়ার এত উন্নত চিকিৎসা হয়েছে যে, তিনি পঙ্গু। আর ছয় মাস গেলে হয়তো লাশ হয়ে বের হবেন। মানবিক কারণ বিবেচনায় তাঁর জামিন চাইছি। আপনারা সর্বোচ্চ আদালত। আপনারা ছাড়া এই কথা বলার আর কোনো জায়গা নেই। তার ওপরে আছেন আল্লাহ।

শুনানির এই পর্যায়ে বেলা ১১টার দিকে আদালত বিরতিতে যান।

আদালত প্রাঙ্গণে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের বিক্ষোভ। হাইকোর্ট ভবন, ঢাকা, ১২ ডিসেম্বর। ছবি: দীপু মালাকার
আদালত প্রাঙ্গণে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের বিক্ষোভ। হাইকোর্ট ভবন, ঢাকা, ১২ ডিসেম্বর। ছবি: দীপু মালাকার

খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদনের শুনানি পেছানোকে কেন্দ্র করে গত ৫ ডিসেম্বর আদালতকক্ষে বিএনপির সমর্থক আইনজীবীদের অবস্থান ও হট্টগোলের কারণে প্রায় তিন ঘণ্টা আপিল বিভাগের কার্যক্রমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। ওই দিন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত অবস্থা সম্পর্কে মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন জমা না পড়ায় জামিনের আবেদনের শুনানির জন্য সময় চান অ্যাটর্নি জেনারেল। সেই প্রেক্ষাপটে শুনানি পিছিয়ে ১২ ডিসেম্বর (আজ) ধার্য করেছিলেন আপিল বিভাগ। এরপর বিএনপির আইনজীবীরা শুনানির তারিখ এগিয়ে আনতে আদালতকক্ষের ভেতরে হইচই শুরু করেন।

খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে আজ সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

আদালত প্রাঙ্গণে মুখোমুখি বিএনপিপন্থী ও আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা। হাইকোর্ট ভবন, ঢাকা, ১২ ডিসেম্বর। ছবি: দীপু মালাকার
আদালত প্রাঙ্গণে মুখোমুখি বিএনপিপন্থী ও আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা। হাইকোর্ট ভবন, ঢাকা, ১২ ডিসেম্বর। ছবি: দীপু মালাকার

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় দেওয়া দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে হাইকোর্টে জামিন চেয়ে বিফল হয়ে গত ১৪ নভেম্বর আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন খালেদা জিয়া। এই জামিন আবেদনের শুনানিতে গত ২৮ নভেম্বর আপিল বিভাগ খালেদা জিয়ার সর্বশেষ স্বাস্থ্যগত অবস্থা সম্পর্কে জানাতে মেডিকেল বোর্ড গঠন করে বোর্ডের মেডিকেল রিপোর্ট ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেদিন (৫ ডিসেম্বর) প্রতিবেদন জমা না পড়ায় শুনানি পিছিয়ে ১২ ডিসেম্বর (আজ) তারিখ ধার্য করা হয়।