বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের নিষ্পাপ শিকার: হাছান মাহমুদ

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ (ফাইল ছবি)
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ (ফাইল ছবি)

বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের নিষ্পাপ শিকার বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের হিসাবমতো বাংলাদেশের মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণের হার মাত্র শূন্য দশমিক ৫ টন। সেখানে উন্নত দেশগুলোর মাথাপিছু গড় কার্বন নিঃসরণ ৬ টন।

স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার রাতে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে এক সভায় সভাপতির বক্তৃতায় তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক ‘কনফারেন্স অব পার্টিস’–এর (কপ) ২৫তম সম্মেলনে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই পার্শ্বসম্মেলন হয়।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়। বাংলাদেশ, কোরিয়া ও জাপান যৌথভাবে ওই পার্শ্বসম্মেলনের আয়োজন করেছিল। এই অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মির্জা শওকত আলী।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বৈশ্বিক উষ্ণতা ইতিমধ্যে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। বর্তমান হারে কার্বন নির্গমন হতে থাকলে এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রাক্‌-শিল্প যুগের চেয়ে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাবে। অথচ ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির ভয়ানক পরিণতি এখন পৃথিবী দেখছে। এই তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেলে পৃথিবীর অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যাবে। এই অবস্থায় পৃথিবীকে বাঁচাতে হলে সব দেশের সম্মিলিত ও সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তাই আমরা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বিশ্বের সব দেশের ঐক্যবদ্ধ ও সমন্বিত উদ্যোগ চাই।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, দায়ী না হয়েও বাংলাদেশ সীমিত সম্পদ নিয়ে নিজ উদ্যোগে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সারা দেশে ৫০ লাখেরও বেশি সোলার সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে।

হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন দৃশ্যমান। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা বেড়ে চলেছে। দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে মরুকরণ দেখা দিয়েছে। সম্ভাবনার চেয়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কম হচ্ছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের পানির প্রধান উৎস হিমালয়ের বরফ দ্রুত গলছে। এর ফলে বাংলাদেশ এখন জলবায়ু পরিবর্তনের বহুমাত্রিক হুমকির মুখে।

হাছান মাহমুদ বলেন, ক্ষুদ্র দ্বীপদেশগুলোও জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে। এসব দেশে মরুকরণেরও সুযোগ নেই। তা ছাড়া এসব দেশের জনসংখ্যা কম। কিন্তু বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলেই ৪ কোটি ২০ লাখ মানুষের বসবাস—এ কথা উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশ অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অংশ নেন সাংসদ জাফর আলম ও রেজাউল করিম, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আহমেদ কায়কাউস ও পরিবেশসচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নূরুল কাদের। বাংলাদেশে অভিযোজন প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তাকারী দেশগুলোর মধ্যে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধিরা তাদের কার্যক্রম এ অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, সীমিত সম্পদ সত্ত্বেও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই অগ্রপথিক। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থে ৭২০টি অভিযোজন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।