'নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও আগুনের মধ্যে দৌড় দিই'

রোববার গাজীপুরের একটি ফ্যান কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রথম আলো ফাইল ছবি
রোববার গাজীপুরের একটি ফ্যান কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রথম আলো ফাইল ছবি

গাজীপুরের ফ্যান কারখানাটির তিন তলায় কাজ করতেন দুই শ্রমিক আনোয়ার (২২) ও হাসান (২৫)। প্রতিদিনের মতো রোববার সন্ধ্যায়ও তিন তলার টিনশেড ঘরে ফ্যান বার্নিশ করার কাজ করছিলেন তাঁরা। এর মধ্যেই হঠাৎ বিকট শব্দ। চোখের পলকে আগুন জ্বলে ওঠে চারদিকে। শুরু হয় চিৎকার-চেঁচামেচি, শ্রমিকদের ছোটাছুটি। মৃত্যুভয়ে শঙ্কিত আনোয়ার এরপর কোনো কিছু না ভেবেই আগুনের মধ্য দিয়ে দৌড় দেন। আনোয়ারকে দেখে দৌড় দেন হাসানও। এরপর কিছু মনে নেই। চেতনা ফিরলে দেখেন তাঁরা হাসপাতালে।

শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের শয্যায় শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে ভয়াবহ সেই অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন আনোয়ার ও হাসান। আগুন যখন দ্রুত ছড়িয়ে যায়, তখন তাঁরা বেঁচে থাকার আশা একপ্রকার ছেড়েই দিয়েছিলেন। চারদিক ছেয়ে গেছে ধোঁয়ায়, বের হওয়ারও কোনো উপায় নেই। প্রাণ হাতে নিয়েই তাই আগুনের মধ্য দিয়ে দৌড়ান দুজন। কীভাবে কারখানার গেট পর্যন্ত পৌঁছালেন, জানেন না দুজনের কেউই। পরে দ্রুত হাসপাতালে আনা হয় তাঁদের।

আনোয়ার বলেন, ‘আগুন দেখে আমি জীবনের আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। এর মধ্যে হঠাৎ মনে হলো, মরতে তো হবেই, আগুনের মধ্যে দিয়েই দৌড় দেব। এরপর নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও আগুনের মধ্য দিয়ে দৌড় দিই।’ আরেক আহত শ্রমিক হাসান জানালেন, আগেও ওই কারখানায় কয়েকবার ছোটখাটো আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে, ‘মাঝে মধ্যেই ছোট-খাটো আগুন লাগত। স্যাররা (মালিক) সবাই জানতেন, তাও কোনো ব্যবস্থা নিতেন না। গত দুই সপ্তাহ আগেও এক মেয়ে বিদ্যুতের তারে শক খায়।’

অগ্নিকাণ্ডে আহত এই দুই শ্রমিককে রাখা হয়েছে হাসপাতালের পাশাপাশি শয্যায়। আনোয়ারের দুই হাত ও পায়ের বিভিন্ন অংশ পুড়ে গেছে। আর হাসানের পা পুড়েছে। হাসপাতালের আবাসিক কর্মকর্তা প্রণয় ভূষণ দাস বলেন, দুজনের মধ্যে আনোয়ারের ক্ষত একটু বেশি। তবে দুই তিন সপ্তাহের মাঝেই ঠিক হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

গতকাল রোববার গাজীপুর সদর উপজেলায় রওজা হাইটেকের লাক্সারি ফ্যান কারখানায় আগুন লেগে ১০ শ্রমিক নিহত হন। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। আজ সোমবার বিকেলে নিহত শ্রমিকদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য লাশের নমুনা সংগ্রহ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।