সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা চাই

রাশেদা কে চৌধূরী
রাশেদা কে চৌধূরী

ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগের সম্মেলন হতে যাচ্ছে। সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমরা যারা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নই, তারা অনেক প্রত্যাশা নিয়ে সম্মেলনের দিকে তাকিয়ে আছি। বাংলাদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই দল সব গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে একজন প্রাণপুরুষের ডাকে সারা বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। পরবর্তী সময়ে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও এই সংগঠন ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিল। যে কারণে তাদের ঐতিহ্যের বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকতে পারে না।

কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এই দলের কাছে আমাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে ফারাক থেকে যায়। তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায়। আমরা দেখেছি, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির অভিযোগ এসেছে। এগুলো আমাদের প্রত্যাশার সঙ্গে যায় না। আওয়ামী লীগ শক্তিশালী সংগঠন। কারণ, তৃণমূল পর্যায়ে দলটির শক্তিশালী নেটওয়ার্ক আছে। এমন একটি দলের মধ্যে এই দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি থাকা মোটেই কাম্য নয়।

আওয়ামী লীগ বা এর সহযোগী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, তা থেকে পরিত্রাণ পেতে দলটির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের একমত হতে হবে যে চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ ও সন্ত্রাসীদের স্থান এই দলে নেই। আমরা সাম্প্রতিক কালে দেখেছি সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এই সতর্কবার্তা বারবার উচ্চারিত হয়েছে। কিন্তু তারপরও নানাভাবে মাদক ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে চাঁদাবাজদের অনেকেই এই দলের নেতা-কর্মীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকছেন। এ বিষয়টি সাধারণ মানুষ পছন্দ করে না।

আওয়ামী লীগের যিনি প্রধান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায়। বিশ্বব্যাপী তাঁর নেতৃত্ব এখন স্বীকৃত। এটা বাংলাদেশের জন্য গর্বের জায়গা। ইতিহাসেও বিরল যে একজন নারী সরকারপ্রধান দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। নারী আন্দোলনের একজন কর্মী হিসেবে বিশ্বাস করি, এই নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক অঙ্গনে নারীর পদচারণ এখন দৃশ্যমান। এমনকি ক্রীড়াক্ষেত্রেও নারীরা নিজেরা স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু তারপরও আমরা দেখি আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তাদের দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ন্যূনতম এক-তৃতীয়াংশ নারীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। সেটি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। এই সম্মেলনে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, রাজনীতির বিভিন্ন স্তরে আওয়ামী লীগ নারী নেতৃত্ব বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।

দীর্ঘদিন ধরে সরকারের দায়িত্ব পালন করছে এই দল। তাই স্বাভাবিকভাবেই সুশাসন প্রতিষ্ঠায়, মানবাধিকার ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে এই দলের শক্তিশালী ভূমিকা ভবিষ্যতে আমরা দেখতে চাই। শুধু সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নয়, দলের নেতৃত্বের সব পর্যায় থেকে আমরা এই ভূমিকা দেখতে চাই।

আওয়ামী লীগ প্রথম ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার সময় যেসব শিশুর বয়স সাত-আট বছর ছিল, তারা এখন ভোটার এবং টগবগে তরুণ। তারা আওয়ামী লীগের বেশ কিছু ভালো দিক অন্তরে ধারণ করে। যেমন ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে এই সরকারের নানাবিধ কর্মসূচি এবং জঙ্গিবাদ দমনে কঠোর অবস্থান। সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় যদি আওয়ামী লীগ ও বর্তমান সরকার আন্তরিকভাবে পদক্ষেপ নেয় এবং দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে সঠিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে এবং তার সঙ্গে যদি যুক্ত হয় সুদৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গীকার, তাহলে আওয়ামী লীগের এই সম্মেলন মানুষকে আশাবাদী করবে। এ দেশের জনমানুষ উন্নয়নের মহাসড়কে সহযাত্রী হতে চায়। কিন্তু একই সঙ্গে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা এবং স্বাভাবিক মৃত্যুর অধিকারও চায়।

রাশেদা কে চৌধূরী: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা