বেতন ছাড়া খাটলেন যাঁরা, এমপিওভুক্তিতে বাদ তাঁরা

>

এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়ায় ওই দুজনকে বাদ দিয়ে তালিকায় ঢোকানো হয়েছে নতুন দুটি নাম। তাঁদের একজন মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতির ছেলে।

মাদ্রাসার বয়স ২২ বছর। এর মধ্যে প্রায় ১৭ বছর বিনা বেতনে চাকরি করেছেন দুজন। সম্প্রতি মাদ্রাসাটি এমপিওভুক্ত (মাসিক বেতনের সরকারি অংশ) হয়েছে। এখন চাকরি এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়ায় ওই দুজনকে বাদ দিয়ে তালিকায় ঢোকানো হয়েছে নতুন দুটি নাম। তাঁদের একজন মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতির ছেলে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নাম আলহাজ ডালিম উদ্দিন আহাম্মদ মহিলা দাখিল মাদ্রাসা। অবস্থান পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর এলাকায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সভাপতি মো. ফজলুর রহমান মাদ্রাসাটি এমপিওভুক্ত হওয়ার পর নিয়োগ–বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই দুই ব্যক্তি ১১ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৭ সালে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০২ সালের ১২ মার্চ এক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এর মাধ্যমে তেঁতুলিয়া উপজেলার বুড়াবুড়ি-মন্ডলপাড়া এলাকার মোছা. সফুরা বানু করণিক পদে এবং পঞ্চগড় সদরের সাতমেড়া-সাহেবীজোত এলাকার আমির হোসেন নৈশপ্রহরী পদে যোগদান করেন। মাদ্রাসাটির তৎকালীন সভাপতি ও তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) স্বাক্ষরিত রেজল্যুশন অনুযায়ী তাঁদের নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। তখন মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন ফজলুর রহমান, যিনি এখন সভাপতি। ফজলুরকে করণিক পদের জন্য সফুরা বানু তিন লাখ টাকা এবং নৈশপ্রহরী পদের জন্য আমির হোসেন আড়াই লাখ টাকা দেন। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় আজ পর্যন্ত বেতন-ভাতা ছাড়াই তাঁরা চাকরি করে আসছেন। এ অবস্থায় গত ২৩ অক্টোবর মাদ্রাসাটি এমপিওভুক্ত হয়। এরপর সভাপতি ফজলুর রহমান করণিক সফুরা ও নৈশপ্রহরী আমিরের কাছে আরও সাত লাখ টাকা করে দাবি করে বসেন। কিন্তু এত টাকা দেওয়ার সক্ষমতা ওই দুজনের নেই। ফলে বেশ কয়েকবার আলোচনায় বসার পর তাঁরা আরও কিছু টাকা দিতে সম্মত হন। কিন্তু পরিমাণে সন্তুষ্ট হতে পারেননি সভাপতি ফজলুর। তিনি টাকা না দিলে দুজনকেই ছাঁটাই করা হবে বলে হুমকি দেন। একপর্যায়ে তাঁদের মাদ্রাসায় আসতে নিষেধ করেন।

ভুক্তভোগী দুজনের ভাষ্য, এই জালিয়াতির অংশ হিসেবে সভাপতি ফজলুর ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য পরিসংখ্যান ব্যুরোতে (ব্যানবেইস) একটা তালিকা পাঠিয়েছেন। এতে মাদ্রাসাটির শিক্ষক, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী মিলে ১৮ জনের নাম আছে। কিন্তু করণিক পদে সফুরা বানুর পরিবর্তে শাপলা নামের এক নারীর ও নৈশপ্রহরী পদে আমির হোসেনের পরিবর্তে সভাপতির ছেলে নুর জামালের নাম পাঠানো হয়। লিখিত অভিযোগে সভাপতির এমন জালিয়াতির হাত থেকে প্রতিকার পেতে কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন সফুরা ও আমির।

নৈশপ্রহরী আমির হোসেন বলেন, ‘আমি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই মাদ্রাসার সঙ্গে আছি। ঘর নির্মাণ থেকে শুরু করে প্রতিটি কাজে আমি যুক্ত ছিলাম। এত দিন বিনা পয়সায় চাকরি করেছি। চরম কষ্টে সংসার চালিয়েছি। এখন মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত হয়েছে। আশায় ছিলাম, বেতন শুরু হলে পরিবারের কষ্ট ঘুচবে। কিন্তু রেজল্যুশন, নিয়োগপত্র, যোগদানপত্র সবকিছুই থাকার পরও এখন আমাকে বাদ দিয়ে সভাপতি নিজের ছেলেকে চাকরি দিতে চাইছেন। আমি নিরীহ মানুষ, তাই সভাপতি (ফজলুর রহমান) আমাকে মামলাসহ বিভিন্নভাবে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন।’

টাকা লেনদেনের মাধ্যমে কাউকে নিয়োগ এবং নতুন করে টাকা দাবির অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন সভাপতি ফজলুর রহমান। তিনি বলেন, যাঁরা অভিযোগ করেছেন, তাঁরা ঠিকমতো মাদ্রাসায় আসেননি। এমপিওভুক্তির খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন। 

পঞ্চগড় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহিন আকতার বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তেঁতুলিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’