নার্সারিতে শীতের ফুল

ফুল গাছের চারা পছন্দ করছেন এক ক্রেতা। সম্প্রতি আগারগঁাওয়ের একটি নার্সারিতে।  প্রথম আলো
ফুল গাছের চারা পছন্দ করছেন এক ক্রেতা। সম্প্রতি আগারগঁাওয়ের একটি নার্সারিতে। প্রথম আলো

শীতের দিনগুলোতে ফুল ভালো ফোটে। আর শীতকালের ফুলও প্রচুর। ফুলপ্রেমী নগরবাসী শীতকালে বাসার বারান্দা–ছাদবাগান রাঙিয়ে তোলেন রংবেরঙের ফুলে। তাঁদের চাহিদা মেটাতে নানান জাতের শীতের ফুলের গাছে সেজেছে নার্সারিগুলো। ফুলের গাছ কিনতে সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন ফুলপ্রেমীরা।

তাঁদের একজন শরিফা ইসলাম। বাড়ি মিরপুরের শেওড়াপাড়ায়। বাড়ির ছাদে বড় বাগান করেছেন। সেখানে শীতকালীন ফুল, সবজির চাষও হচ্ছে। বাগানের জন্য নতুন গাছের চারা আর সার কিনতে এসেছেন শেরেবাংলা নগরে এক নার্সারিতে। শরিফা ইসলাম বলেন, ‘নিজের তৃপ্তির জন্য বাগান করি। এখন শীতের ফুল ও সবজির চারা লাগানোর সঠিক সময়। এই নার্সারিতে এসে নিয়মিত গাছের চারা, সার কিনে নিয়ে যাই।’

শরিফাকে দেখা গেল কৃষিবিদ উপকরণ নার্সারিতে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন চারা দেখছেন। এরপর কয়েকটি ফুলের চারা, মরিচের চারা এবং সার, নিম খইল ও সাধারণ খইল কিনেন।

আগারগাঁওসহ রাজধানীর নার্সারিগুলোতে এখন সবচেয়ে বেশি মিলছে ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, ভারবেনা, গাঁদা, পেটুনিয়া, গাজানিয়া, ক্যালেন্ডুলা, জিনিয়া, সালভিয়া, জারবেরা, অ্যাস্টর, স্টার, ভেনটাস, ভিনকা। হাজারি গোলাপ নামের রংবেরঙের ফুল মিলছে এসব নার্সারিতে। পাওয়া যাচ্ছে নানান জাতের সুপরিচিত গাঁদা ফুল।

আগারগাঁওয়ে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আগে একসঙ্গে ২৫টির মতো নার্সারি ছিল। মেট্রোরেলের কাজের কারণে সেগুলো সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব নার্সারি শেরেবাংলা নগর, আগারগাঁও, পঙ্গু হাসপাতালের সামনের সড়ক, সরকারি কর্মকমিশনের সামনের সড়ক, জাতীয় গণগ্রন্থাগার ভবনের সামনে, রায়েরবাজারসহ ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে–ছিটিয়ে গেছে। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের সামনের ফুটপাত, মধ্য বাড্ডার গুদারাঘাট, বনশ্রী আইডিয়াল স্কুলের পূর্বে পুকুরপাড় এলাকা, গুলশান ও মহাখালীর মাঝামাঝিতে সড়কের দুই পাশে লেকের পাড়ের নার্সারিতে ফুল, সবজি ও প্রায় সব ধরনের দেশি-বিদেশি গাছের চারা বিক্রি হয়। এ ছাড়া ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ভ্যানে করে শীতের ফুলের চারা ও টব বিক্রি করতে দেখা যায়।

নার্সারিগুলোতে শীতের ফুলের চারার পাশাপাশি ছাদকৃষির উপকরণ, বাগানের সরঞ্জাম, শোভাবর্ধনকারী গাছ, চারা, কলম, বিভিন্ন প্রকার সবজিবীজ, সার, মাটি বিক্রি করা হয়।

শেরেবাংলা নগরে সুষমা গ্রিন হাউস নার্সারির তত্ত্বাবধানকারী মো. জলিল বলেন, এখন লোকজন এসে শীতের ফুল, সবজি, টমেটো, বেগুনের চারা কিনছেন। এখানে এসব চারার দাম ১২ টাকা থেকে শুরু। বিক্রিও ভালো হচ্ছে।

আরেকটি কৃষিবিদ উপকরণ নার্সারির তত্ত্বাবধায়ক বাবুল হোসেন বলেন, আগারগাঁওয়ের নার্সারি তুলে দেওয়ার পর নার্সারিও দুই জায়গায় ভাগ হয়ে গেছে। এখন এখানে কেবল পরিচিতজনেরাই চারা কিনতে আসেন। তাঁদের আরেকটি নার্সারি রায়েরবাজারে নেওয়া হয়েছে।

নিকেতনে ছাদবাগান আছে শাহান আরা জাকিরের। তিনি বাগানের জন্য মাটি ও টমেটোর চারা কিনতে এসেছেন আগারগাঁওয়ে। তিনি বলেন, শীতের মৌসুমে তো বটেই, সব সময়ই গাছের চারা কেনেন তিনি। তবে কোনো কোনো বিক্রেতা বলছেন, বেচা–বিক্রি আগের চেয়ে কমে গেছে। সরকারি কর্মকমিশনের সামনের সড়কের পাশে থাকা ঢাকা সিটি নার্সারির আরিফুর রহমান বলেন, শৌখিন মানুষেরা এখন কম আসছেন। ধুলাবালুতে গাছ কেনা কমে গেছে। প্রতিবছর মৌসুমের শুরুতে গাছ কিনতে আসতেন মানুষ। এবার উৎসাহ অনেক কম দেখা যাচ্ছে।