খনন করা খাল নাম বদল করে পুনঃখনন

কুমিল্লা
কুমিল্লা

তিন বছর আগে একবার খাল খনন করা হয়েছে। সেই খাল আবার খননের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ জন্য খালের নামই বদলে দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদারের লোকজন খাল পুনঃখনন করতে গিয়েছিলেনও। তবে এলাকাবাসীর বাধায় তাঁরা ফিরে গেছেন। এলাকাবাসী বলছেন, সরকারের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য একটি চক্র ভুয়া এই প্রকল্প বানিয়েছে।

নাম আমতলি-মানিকমুড়া খাল। অবস্থান কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার জোড্ডা পূর্ব ইউনিয়নে। নতুন করে নেওয়া প্রকল্পে খালের নাম বদলে বালোঘর খাল দেখানো হয়েছে। মোট ৯ দশমিক ২৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই খালের বড় অংশ পড়েছে জোড্ডা পূর্ব ইউনিয়নের বালোঘর এলাকায়।

এলাকাবাসীসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে খালটি পুনঃখননের জন্য ১ কোটি ১৬ লাখ ৪১ হাজার ৯৫০ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরে দরপত্র আহ্বান করে। পরে ফেনীর মেসার্স সালেহ আহমেদ এন্টারপ্রাইজ ১ কোটি ৪ লাখ ৭৭ হাজার ৭৫৫ টাকা চুক্তিতে কাজটি পায়। ২০২০ সালের ৩০ মের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল কাজ শুরুর কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শুষ্ক মৌসুমের অপেক্ষায় ছিল। তারা কাজ শুরু করে ১৪ ডিসেম্বর সকালে। খবর পেয়ে এলাকাবাসী ওই দিন বিকেলে এ কাজে বাধা দেন। পরে ঠিকাদারের নিযুক্ত শ্রমিকেরা চলে যান। এরপর থেকে কাজ বন্ধ রয়েছে।

নাঙ্গলকোট উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক নুরুল আফছার বলেন, ‘খালটি পুনঃখননের কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এই কাজ দ্রুত বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি।’

খাল পুনঃখননের প্রতিবাদে গত সোমবার বিকেলে নাঙ্গলকোট উপজেলার জোড্ডা পূর্ব ইউনিয়নের শ্রীহাস্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সমাবেশ করেন এলাকাবাসী। এতে ইউনিয়নের শ্রীহাস্য, হানগড়া, কৈরাশ ও শংকরপুর গ্রামের বাসিন্দারা অংশ নেন। এসব গ্রামের ওপর দিয়েই প্রবাহিত হয়েছে খালটি।

সমাবেশে এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, বালোঘর খাল নামে এলাকায় কোনো খাল নেই। একটি স্বার্থান্বেষী মহল ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে সরকারের কোটি টাকা আত্মসাতের জন্য খালটি পুনঃখননের উদ্যোগ নিয়েছে। তাঁরা আরও বলেন, তিন বছর আগে জরিপ করে সীমানা নির্ধারণ করেই খালটি খনন করা হয়েছিল। এরপর খালের পারে থাকা ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে এলাকাবাসী গাছ লাগিয়েছেন। এ ছাড়া খালসংলগ্ন ও খালের পারে শত শত কৃষকের ফসলি জমি ও বাড়িঘর রয়েছে। স্বার্থান্বেষী মহল খালটি আরও সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। এ কারণে নিরীহ মানুষজনে ফসলি জমি ও বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সরকারিভাবে খালটির মুখের অংশ বাড়াতে হলে জমি অধিগ্রহণ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে সেটিও করা হয়নি।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আবু তালেব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পের অধীনে এই খালটি পুনঃখননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা গুগল ম্যাপ থেকে সার্ভে করে বালোঘর খাল নাম নিয়ে প্রকল্প পাস করেছি। যদি খাল খননের প্রয়োজন না থাকে, তাহলে আমরা খাল খনন করব না।’

প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক নুরুল আফছার, জোড্ডা পূর্ব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল আলিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী আক্কাছ তালুকদার, ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি শাহজাহান সাজু, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আলী আজগর মিয়াজী,  হানগড়া গ্রামের কৃষক মাহবুবুল হক প্রমুখ।

কুমিল্লা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল লতিফ বলেন, এলাকাবাসী না চাইলে কাজ হবে না। কিন্তু এখন কাজের সময়। কাজ না করে বিল নেওয়ার সুযোগ নেই। তিন বছর আগে ভালোভাবে কাজ হয়নি। তাই নতুন করে কাজ হচ্ছে। খালের নাম একেকজনে একেকভাবে বলেন। নথিতে বালোঘরই আছে।