ক্যাসিনো-কাণ্ডে গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ

ঠিকাদারিকাজে অনিয়মের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে গণপূর্ত অধিদপ্তরের একজন নির্বাহী প্রকৌশলীসহ দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ সোমবার সকাল থেকে দিনভর দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদকের একটি দল। দুদকের মুখপাত্র প্রণব কুমার ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

যাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, তাঁরা হলেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইলিয়াস আহমেদ ও উপসহকারী প্রকৌশলী আলী আকবর সরকার।
এর আগে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. রোকন উদ্দিন, আবদুল মোমেন চৌধুরী ও নির্বাহী প্রকৌশলী স্বপন চাকমা, মোহাম্মদ শওকত উল্লাহ, মোহাম্মদ ফজলুল হক, আবদুল কাদের চৌধুরী ও মো. আফসার উদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এঁদের সবার বিরুদ্ধে জি কে শামীমের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ আছে। তাঁদের ঘুষ দিয়ে শামীম গণপূর্তের বড় কাজগুলো বাগিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ। একই অভিযোগে গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম ও হাফিজুর রহমান মুন্সী এবং অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুল হাইয়ের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান চলছে।

চলমান ‘শুদ্ধি অভিযান’–এর প্রথম থেকে দুদক অবৈধ সম্পদের যে অনুসন্ধান শুরু করেছে, তার অংশ হিসেবে তাঁদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে সংস্থাটি।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে প্রথম দিনই রাজধানীর ফকিরেরপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে গ্রেপ্তার হন ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক (পরে বহিষ্কৃত) খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন অভিযানে একে একে গ্রেপ্তার হন যুবলীগের কথিত নেতা ও ঠিকাদার জি কে শামীম, মোহামেডান ক্লাবের ডাইরেক্টর ইনচার্জ মো. লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী ওরফে সম্রাট, সম্রাটের সহযোগী এনামুল হক ওরফে আরমান, কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি মোহাম্মদ শফিকুল আলম ওরফে ফিরোজ, অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান ওরফে মিজান ও তারেকুজ্জামান রাজীব।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বিপুল অর্থের মালিক হওয়া, অর্থ পাচারসহ নানা অভিযোগ ওঠে। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁদের অপকর্মে সহযোগী ও পৃষ্ঠপোষক হিসেবে সাংসদ, রাজনীতিক, সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্নজনের নাম উঠে আসে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তের পাশাপাশি তাঁদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে মাঠে নামে দুদক।

৩০ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনো-কাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়। পরে আরও দুজনকে দলে যুক্ত করা হয়। দলের অন্য সদস্যরা হলেন উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. সালাহউদ্দিন, সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম, আতাউর রহমান ও মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী।

অনুসন্ধান দলের সদস্যরা গণমাধ্যমে আসা বিভিন্ন ব্যক্তির নাম যাচাই-বাছাই করে একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেন। সংস্থার গোয়েন্দা শাখার পক্ষ থেকে এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়। পাশাপাশি র‍্যাব ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধানেরা দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করেন। সেসব তথ্য ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ইতিমধ্যে ১৯টি মামলা করে দুদক দল।