শীতার্তদের পাশে দাঁড়াতে 'বস্ত্রভান্ডার'

বস্ত্রভান্ডার থেকে শীতের পোশাক নিচ্ছেন এক বৃদ্ধা। ছবি: প্রথম আলো
বস্ত্রভান্ডার থেকে শীতের পোশাক নিচ্ছেন এক বৃদ্ধা। ছবি: প্রথম আলো

বিদ্যালয়ে ঢোকার পথেই ভবানীগঞ্জ-আত্রাই সড়কের পাশে চোখে পড়ে একটি বাঁশের তৈরি আলনা। আলনায় সাজানো আছে শার্ট, প্যান্ট, জ্যাকেট, সোয়েটারসহ নানা ধরনের গরম কাপড়। অনেকক্ষণ ধরে খুঁজে নিজের পছন্দমতো দুটি গরম কাপড় নিয়ে চলে গেলেন স্থানীয় একটি বাজারের নৈশপ্রহরী মুনজুর রহমান (৫৭)। দিনমজুর শামসুর রহমানও (৪৫) পছন্দমতো একটি সোয়েটার গায়ে জড়িয়ে চলে গেলেন। কিন্তু দুজনের কাউকেই টাকা দিতে হলো না। শুধু তাঁদের নয়, এই আলনা থেকে পোশাক নিতে টাকা দিতে হয় না কাউকেই। ‘মানুষ মানুষের জন্য’ ব্যানারের এই আলনাটি আদতে একটি উন্মুক্ত গরম কাপড়ের ভান্ডার।

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার সাঁকোয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রবেশপথে বসানো হয়েছে এই গরম কাপড়ের ভান্ডার। শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এলাকার ছয় ব্যক্তি মিলে এই ভান্ডার স্থাপন করেছেন। এখান থেকে শীতার্ত লোকজন তাঁদের পছন্দের পোশাক বিনা পয়সায় নিয়ে যেতে পারেন। যে কেউ স্বেচ্ছায় পোশাক দানও করতে পারেন।

১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিন এই ভান্ডারের পথচলা শুরু। স্থানীয় বাসিন্দা মনিমুল হকের ভাবনা থেকে এই উদ্যোগের শুরু। পরে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন একজন কলেজ অধ্যক্ষসহ আরও পাঁচ ব্যক্তি। নিজেদের কিছু অতিরিক্ত গরম কাপড় ও বাজার থেকে কিছু কাপড় কিনে এনে তাঁরা এই আলনায় রাখেন। এখান থেকে নিজেদের পছন্দ ও প্রয়োজনমতো গরম কাপড় নিয়ে যান শীতার্ত ব্যক্তিরা। ইচ্ছে করলে নিজেদের অতিরিক্ত কাপড়ও রেখে যেতে পারেন যে কেউ। উদ্যোগটির নাম তাঁরা দেন ‘ইজি সোসাইটি’। নিজেদের উদ্যোগের কথা জানাতে ফেসবুকে প্রচারণাও চালানো হয়েছে।

গত সোমবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, যাওয়া-আসার পথে পছন্দ অনুযায়ী শীতের পোশাক নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। শীতলাই গ্রামের কৃষক আবদুল জলিল (৪৬) বলেন, গত কয়েক দিনের তীব্র শীতে কাতর হয়ে পড়েছেন। তীব্র ঠান্ডার মধ্যে মাঠে কাজ করতে হয়। এ জন্য বস্ত্রভান্ডার থেকে নিজের পছন্দের একটি জ্যাকেট নিয়েছেন। এটি গায়ে দিয়েই এখন মাঠে কাজ করছেন। বৃদ্ধ মেহের জান বেওয়া (৭২) বলেন, লোকজনের কাছ থেকে জানতে পেরে তিনিও এসে একটি সোয়েটার নিয়ে গেছেন।

কমিটির সদস্য মমতাজুল ইসলাম বলেন, এই কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। বাগমারা ছাড়াও এই পথ দিয়ে যাতায়াত করা শীতার্ত লোকজন এসে এই বস্ত্রভান্ডার থেকে গরম কাপড় নিয়ে যাচ্ছেন। শিশুদের জন্যও পোশাক রাখা হয়েছে। এটি চালুর পর থেকে প্রায় আড়াই শ লোক এসে তাঁদের পছন্দের পোশাক নিয়ে গেছেন। তবে গত চার দিনের তীব্র শীতে চাহিদা কিছুটা বেড়েছে। চাহিদার কথা মাথায় রেখে ‘ইজি সোসাইটি’র চেয়ারম্যান নিজ অর্থে আরও কিছু গরম কাপড় কিনে দিয়েছেন।

এই উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত স্থানীয় সালেহা-ইমারত ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ জিয়াউর রহমান মোল্লাহ বলেন, নিয়মিতভাবে ভান্ডারে নজর রাখা হলেও কোনো পাহারা দেওয়া হয় না। কী ধরনের পোশাকের চাহিদা বেশি, তা খেয়াল করে ওই ধরনের কাপড় সেখানে রাখার চেষ্টা করা হয়। কাপড়গুলো যাতে নষ্ট হয়ে না যায়, সেদিকেও খেয়াল রাখা হয়।

যাঁর ভাবনা থেকে এই উদ্যোগের শুরু সেই ইজি সোসাইটির চেয়ারম্যান মনিমুল হক প্রথম আলোকে বলেন, গরিব শীতার্ত মানুষদের সেবার জন্যই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নিজেদের চায়ের খরচ বাঁচিয়ে তা দিয়ে শীতবস্ত্র কিনে ভান্ডারে রেখেছেন। ভবিষ্যতেও এ রকম কাজ করার ইচ্ছা আছে বলে জানান তিনি।

বাগমারা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বস্ত্রভান্ডারটি আমিও লক্ষ করেছি। যাঁরা এর সঙ্গে জড়িত, তাঁরা নিঃসন্দেহে ভালো কাজ করছেন। এই উদ্যোগ গোটা উপজেলায় ছড়িয়ে দিতে অন্যদেরও এগিয়ে আসা উচিত।’