নীলফামারী-ঢাকা রেলপথ নীলসাগরে আসন কমল ৯৩টি

নীলফামারী–ঢাকা পথে চলাচলকারী একমাত্র আন্তনগর ট্রেন নীলসাগর এক্সপ্রেসের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও আসন না বাড়িয়ে কমানো হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। তাঁরা প্রায় এক সপ্তাহ আগে চেষ্টা করেও আসন পাচ্ছেন না। এ কারণে প্রতিনিয়ত কটু কথা শুনতে হচ্ছে রেলওয়ের কর্মচারী-কর্মকর্তাদের।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, আগে এ জেলার ৪টি রেলওয়ে স্টেশনে ঢাকাগামী যাত্রীদের জন্য আসন বরাদ্দ ছিল ৪৭৯টি। সেখান থেকে ৯৩টি কমিয়ে করা হয়েছে ৩৮৬টি। ট্রেনের কোচবাহী বহর (র‍্যাক) পাল্টানোর কারণে এ আসনসংখ্যা কমেছে। গত শুক্রবার থেকে নতুন বহরে ট্রেনটি চলাচল শুরু করেছে।

জেলা শহরের শাহীপাড়ার মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘নীলসাগর ট্রেনের আসন জোগাড় করা আগে থেকেই সোনার হরিণ পাওয়ার সমান। স্টেশনে গেলে বলা হয় টিকিট নেই। এখন শুনছি, আসন আরও কমানো হয়েছে। এতে সমস্যা কতটা বাড়বে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।’

সদর উপজেলার শাহাপাড়া গ্রামের নিপুন রায় বলেন, ‘গত শুক্রবার ঢাকায় যাওয়ার জন্য সাত দিন ধরে ধরনা দিয়ে নীলসাগর ট্রেনের একটি টিকিট পাইনি। এমনিতে ট্রেনের সময়সূচিতে বিপর্যয় ঘটেছে। তার ওপর টিকিটেরও সংকট।’

রেলওয়ে সূত্রমতে, নীলফামারী থেকে ঢাকায় চলাচলকারী একমাত্র আন্তনগর ট্রেন নীলসাগর এক্সপ্রেস রাতে চলাচল করে। এটি চিলাহাটি থেকে ছেড়ে ঢাকার কমলাপুরে যায়। আগে এ ট্রেনে চিলাহাটি স্টেশন থেকে আসন ছিল ১০৭টি, বর্তমানে করা হয়েছে ১০১টি। ডোমার স্টেশন থেকে আসন ছিল ৮৭টি, এখন করা হয়েছে ৬৩টি। নীলফামারী স্টেশনে আসন ছিল ৯৭টি। এখন তা কমিয়ে করা হয়েছে ৬৬টি। সৈয়দপুর স্টেশন থেকে আসন ছিল ১৮৮টি, এখন করা হয়েছে ১৫৬টি। রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের করা আসন বরাদ্দের এ নির্দেশিকা গত শুক্রবার থেকে কার্যকর করা হয়েছে।

জলঢাকা উপজেলার শালনগ্রামের মোনায়েম হোসেন বলেন, ‘শীতকালে কুয়াশার কারণে বাসে চলাচল অনিরাপদ মনে হয়। এ কারণে ছেলেকে ঢাকায় পাঠাতে গত ২৪ ও ২৫ ডিসেম্বরের নীলসাগর ট্রেনের টিকিটের জন্য ধরনা দিয়েছি। না পেয়ে বাধ্য হয়ে বাসে পাঠাতে হয়েছে।’

>

কোন স্টেশনে কতটি আসন কমল

স্টেশন আগের বর্তমান কমল

সৈয়দপুর ১৮৮ ১৫৬ ৩২

নীলফামারী ৯৭ ৬৬ ৩১

ডোমার ৮৭ ৬৩ ২৪

চিলাহাটি ১০৭ ১০১ ৬

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের করা আসন বরাদ্দের এ নির্দেশিকা গত শুক্রবার থেকে কার্যকর হয়েছে।

নীলফামারী রেলওয়ে স্টেশনের বুকিং সহকারী সিহাব হোসেন বলেন, আগামী ২ জানুয়ারি পর্যন্ত নীলফামারী থেকে ঢাকায় যাওয়ার নীলসাগর ট্রেনের কোনো আসন খালি নেই। আগে আসন বেশি থাকা অবস্থায়ই যাত্রীদের প্রয়োজনীয় আসন দেওয়া যেত না। এখন আসন কমেছে, এ কারণে চাপও বেড়েছে বেশি। প্রয়োজনীয় আসন না পেয়ে যাত্রীরা নানা কটু কথা শুনিয়ে যান।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, নীলসাগর ট্রেনের আগের বহরটি ভারতের তৈরি ছিল। সেটি রাজশাহী-ঢাকা পথে চলাচলকারী ট্রেনে যুক্ত করা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার তৈরি আরেকটি বহর নীলসাগরে যুক্ত করা হয়েছে। ২৭ ডিসেম্বর থেকে এ বহরে ট্রেন চলাচল শুরু করেছে। আগের বহরের চেয়ে এ বহরে আসন কম। এ কারণে আগে নীলসাগর ট্রেনে আসন সমন্বয় করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে নীলফামারী স্টেশনে শোভন চেয়ার ৯০টি বরাদ্দ থাকলেও তা কমিয়ে ৫৪টি করা হয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেয়ার ৫টি ছিল, তা বাড়িয়ে ১০টি করা হয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিন ২টিই রয়েছে। এভাবে ৫টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেয়ার বাড়ানো হলেও শোভন চেয়ার কমানো হয়েছে ৩৬টি। ডোমার স্টেশনে শোভন চেয়ার ৭৫টির স্থলে করা হয়েছে ৫০টি। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেয়ার ১০টিই রয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিন ২টির স্থলে ৩টি করা হয়েছে। চিলাহাটিতে ৯৫টি শোভন চেয়ারের স্থলে করা হয়েছে ৭২টি। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেয়ার ১০টির স্থলে ২৫টি করা হয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ২টি কেবিন বাড়িয়ে ৪টি করা হয়েছে। সৈয়দপুর রেলস্টেশনে ১৬০টি শোভন চেয়ার কমিয়ে ১২০টি করা হয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেয়ার ২০টি থেকে বাড়িয়ে ৩০টি করা হয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিন ৮টি থেকে কমিয়ে ৬টি করা হয়েছে। এভাবে এ জেলার ৪টি রেলস্টেশনে ৯৩টি আসন কমানো হয়েছে।

জানতে চাইলে নীলফামারী রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, নীলফামারী থেকে নীলসাগর ট্রেনের আসনের বিপুল চাহিদা রয়েছে। এরই মধ্যে রেলের নতুন আসন বণ্টনের তালিকায় আসন আরও কমানো হয়েছে। এ কারণে যাত্রীদের চাহিদামতো আসন সরবরাহ করা যাচ্ছে না।