ফিরে এল পুরোনো বন্ধু, হারানো দিন

সহপাঠীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন পর দেখা। পুনর্মিলনীর এই আনন্দ ফ্রেমবন্দী করে রাখছেন একজন। গতকাল সরকারি তিতুমীর কলেজের ৫০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে।  ছবি: প্রথম আলো
সহপাঠীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন পর দেখা। পুনর্মিলনীর এই আনন্দ ফ্রেমবন্দী করে রাখছেন একজন। গতকাল সরকারি তিতুমীর কলেজের ৫০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে। ছবি: প্রথম আলো

চারধারে তারুণ্যের স্মৃতিঘেরা প্রিয় সব মুখ। এর সঙ্গে স্মৃতির ঝাঁপি খোলা। নিরন্তর আড্ডা–খুনসুটি যেন এক মুহূর্তেই ফিরিয়ে আনল বিগত সময়কে। আর তাতেই কর্মব্যস্ত নাগরিক জীবনের একঘেঁয়ে প্রাত্যহিকতার বাইরে এসে সবাই সিক্ত হলেন পুনর্মিলনীর আনন্দে।

গতকাল শনিবার সরকারি তিতুমীর কলেজের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত পুনর্মিলনীতে হাজির হয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানটির হাজারখানেক প্রাক্তন শিক্ষার্থী। পুরোনো বিদ্যাপীঠে, পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে একত্র হতে পেরে তাঁদের সবার চোখমুখে ছিল অতীতকে ছুঁয়ে দেখার উচ্ছ্বাস।

এদিন সকালে কলেজ প্রাঙ্গণে ‘আলোকিত ৫০’ শীর্ষক এই পুনর্মিলনী উৎসবের উদ্বোধন করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম ও কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন। 

উৎসব উদ্বোধনের আগেই কলেজ প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকেন প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানের জন্য কাচের তৈরি ব্যতিক্রমী উন্মুক্ত মঞ্চের নির্মাণশৈলী ও সাজসজ্জায় ছিল আধুনিকতার ছাপ। মূল মঞ্চের সামনে আরেকটি ছোট মঞ্চ তৈরি করা হয় আলোকচিত্রীদের জন্য। এর সামনেই সার বেঁধে রাখা চেয়ারে ছিল সবার জন্য বসার ব্যবস্থা।

আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর পুনর্মিলনী উপলক্ষে প্রকাশিত ‘ক্যাম্পাস এক্সপ্রেস’ নামের স্মরণিকা সবার মধ্যে বিতরণ করা হয়। এর পরেই কলেজের কৃতী শিক্ষার্থীদের মঞ্চে ডাকেন আয়োজকেরা। তাঁদের রোমন্থনে মুহূর্তেই মূর্ত হয়ে ওঠে অতীত দিনের স্মৃতি।

এরপরের পর্বে গান, নাচ, বিতর্ক, নাটকসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যেই সবাই একে অন্যকে খুঁজে নিচ্ছিলেন। আনন্দের মুহূর্তগুলো ফ্রেমবন্দী করে রাখার কাজে ব্যস্ত ছিলেন কেউ কেউ। ছোট–বড়র বিভেদ এখানে ছিল না। নিজেদের মধ্যে আসন ভাগাভাগি করে নেওয়ার পাশাপাশি অনুজ শিক্ষার্থীরা মুগ্ধ হয়ে শুনছিলেন অগ্রজদের স্মৃতিগাথা।

মুমিনুল হক নামের কলেজের এক সাবেক শিক্ষার্থী বর্তমানে একটা বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত। তিনি বলেন, ‘আমরা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডায় মেতে উঠতাম। কখন যে চায়ের কাপ ফাঁকা হয়ে যেত তা মনে থাকত না।’ 

শহীদুল আলম নামের আরেক সাবেক শিক্ষার্থীর ভাষ্য, ‘কলেজে পড়ার সময় মনে হতো কবে এই সময় শেষ হবে। কিন্তু এখন মনে হয়, জীবনের সেরা সময়টুকু ওটাই ছিল।’

মূল মঞ্চের এক কোণে সবার জন্য দিনভর ছিল কফির আয়োজন। আড্ডাবাজি আর ফিরে আসা দিনের স্মৃতি হাতড়াতে হাতড়াতে কেউ কেউ গলা ভিজিয়ে নিচ্ছিলেন কফির চুমুকে। 

এভাবেই দিন শেষ হয়ে আসে। কেউ একজন গেয়ে ওঠেন, হারানো লেত্তি হারানো লাট্টু/ সময় চলে যায় বেয়ারা টাট্টু/ বন্ধু, কী খবর বল/ কত দিন দেখা হয়নি।