শিশু তুহিন হত্যা: বাবাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল

তুহিন মিয়া
তুহিন মিয়া

সুনামগঞ্জে নৃশংস কায়দায় শিশু তুহিন মিয়া (৫) হত্যার ঘটনায় পুলিশ তুহিনের বাবা, তিন চাচা ও এক চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। পুলিশ আজ সোমবার এই অভিযোগপত্র দেয়।

গত ১৩ অক্টোবর রাতে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কেজাউরা গ্রামে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরের দিন সকালে বাড়ির পাশের একটি গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় তুহিনের রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়। তুহিনের গলা, কান ও যৌনাঙ্গ কাটা ছিল। পিঠে বিদ্ধ ছিল দুটি ছুরি।

সুনামগঞ্জ পুলিশের কোর্ট পরিদর্শক আশেক সুজা মামুন বলেন, সুনামগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শুভদীপ পালের আদালতে আজ তুহিন হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করলে আদালত সেটি গ্রহণ করেন।

অভিযোগপত্র দেওয়ার পর দুপুরে নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, পুলিশ চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার আড়াই মাসের মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে। গ্রামে থাকা প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে তুহিনের পরিবারের লোকজন পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটান। এ ঘটনায় তুহিনের মা মনিরা বেগম অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন। এরপর পুলিশ তুহিনের বাবা আবদুল বাছির (৪০), চাচা নাসির উদ্দিন (৩৫), আবদুল মছব্বির (৪৫) ও জমসেদ আলী (৬০) এবং ১৭ বছর বয়সী চাচাতো ভাইকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর পুলিশ তিনজনকে রিমান্ডে নেয়। দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পুলিশের তদন্তে এই পাঁচজনই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। ঘটনার তিন দিন আগে আসামিরা এই হত্যার পরিকল্পনা করেন।

তুহিনের বাবা জড়িত থাকার বিষয়ে কীভাবে নিশ্চিত হলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘বাবার সঙ্গে একই খাটে তুহিন ঘুমিয়ে ছিল। বাবার সহযোগিতা ছাড়া তাকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বাবাই তাকে কোলে করে ঘর থেকে বের করে নিয়ে যান। এরপর আসামিরা মিলে তাকে হত্যা করে লাশ গাছে ঝুলিয়ে রাখেন। আবার যে দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন, তাদের কথায় আবদুল বাছির জড়িত থাকার বিষয়টি ওঠে এসেছে। বাবা ছাড়া অন্য কেউ তুহিনকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে গেছেন, এটা বললে অবাস্তব ও অবিশ্বাস্য হবে।’

পুলিশ সুপার আরও বলেন, গ্রামের একটি পক্ষের সঙ্গে ২০০০ সাল থেকে আবদুল বাছিরের পরিবারের বিরোধ আছে। হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে দুই পক্ষের মধ্যে। ২০০২ সালে গ্রামে মুজিব নামে এক ব্যক্তি খুন হন। ওই মামলায় শিশু তুহিনের বাবা আবদুল বাছির আসামি। আবার ২০১৫ সালে নিলুফা বেগম নামের এক নারী খুন হন। তিনি বাছিরের ভাতিজার স্ত্রী। এই হত্যা মামলায় বাছিরের প্রতিপক্ষের লোকজন আসামি। মুজিব হত্যা মামলাটি বিচারের শেষ পর্যায়ে আছে। আবার নিলুফা হত্যা মামলা নিয়ে বাদী ও আসামিদের মধ্যে আপসের কথাবার্তা চলছে। আবদুল বাছির ধারণা করছিলেন, তিনি মুজিব হত্যা মামলায় ফেঁসে যাচ্ছেন। তাই প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে তুহিন হত্যার পরিকল্পনা করেন। তুহিনের পিঠে বিদ্ধ থাকা দুটি ছুরির হাতলে বাছিরদের প্রতিপক্ষের দুই ব্যক্তি সালাতুল ও সুলেমানের নাম লেখা ছিল। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ছুরির হাতলে ওই দুটি নাম তুহিনের চাচা নাসির উদ্দিনই লিখেছিলেন।

নৃশংস কায়দায় হত্যার বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, আসামিদের উদ্দেশ্য ছিল জনমত তাদের পক্ষে নেওয়া। মানুষ যাতে এই নৃশংসতা দেখে প্রতিপক্ষের ওপর ক্ষুব্ধ হয়। এ কারণেই তুহিনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে।