আতিকুল ও তাপস মনোনয়নপত্র জমা দিলেন

মনোনয়নপত্র জমা দিচ্ছেন ফজলে নূর তাপস। ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়, ঢাকা, ৩১ ডিসেম্বর। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ
মনোনয়নপত্র জমা দিচ্ছেন ফজলে নূর তাপস। ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়, ঢাকা, ৩১ ডিসেম্বর। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুই মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ও ফজলে নূর তাপস মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১২টায় তাপস এবং সাড়ে ১২টায় আতিকুল মনোনয়ন জমা দেন।

নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, প্রস্তাবকসহ পাঁচজনের বেশি ব্যক্তি নিয়ে প্রার্থীরা রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে আসতে পারবেন না। আবার কোনো বহরও নিয়ে যাওয়া যাবে না।

তবে আতিকুল ও তাপসের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে দুই রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে শতাধিক নেতা-কর্মী ভিড় করেন। শাসক দলের এই দুই মেয়র প্রার্থী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে এলে স্লোগান দিয়ে শতাধিক নেতা-কর্মী তাঁদের ঘিরে ধরেন।

আতিকুল আগারগাঁওয়ে উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাশেমের হাতে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর আতিকুল সাংবাদিকদের বলেন, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে বলে তাঁর আশা। নির্বাচনে হার-জিত আছে। কেউ যেন মাঝপথে নির্বাচন বর্জন না করেন।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে করণীয় নিয়ে প্রশ্নে আতিকুল বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে বিশ্বের অনেক দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। ইন্টিগ্রেটেড ভেক্টর ম্যানেজমেন্টের একটি নতুন কনসেপ্ট চালু করা হয়েছে। মশা থেকে মুক্ত করা জনগণের মৌলিক চাহিদার মধ্যে পড়ে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় ৩৬৫ দিন কাজ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবাই মিলে, সবার সহযোগিতা নিয়ে মানুষকে নিরাপদে রাখা সম্ভব হবে।

মনোনয়নপত্র জমা  দিচ্ছেন আতিকুল ইসলাম। উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়, ঢাকা, ৩১ ডিসেম্বর। ছবি: সাজিদ হোসেন
মনোনয়নপত্র জমা দিচ্ছেন আতিকুল ইসলাম। উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়, ঢাকা, ৩১ ডিসেম্বর। ছবি: সাজিদ হোসেন

নির্বাচন কমিশনের সামনে আসার পর আতিকুলকে ঘিরে জড়ো হন শতাধিক নেতা-কর্মী। এ সময় তাঁরা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে শুরু করেন। কিন্তু তখন স্লোগান বন্ধ করার জন্য আতিকুল অনুরোধ করেন।

নির্বাচন কমিশনের সামনে নেতা-কর্মীদের ভিড় নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আতিকুল বলেন, ‘রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আমরা পাঁচজনই এসেছি। বাইরে কোনো শোভাযাত্রা হয়নি। স্লোগান যখন হয়েছে, তখন বন্ধ করে দিয়েছি।’

আতিকুল বলেন, আজ আওয়ামী লীগ সমর্থিত বিভিন্ন কাউন্সিলর প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসেছেন। তাই ভিড় হতে পারে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উত্তরায় ৪ নম্বর সেক্টরে পুলিশের একটি গাড়ি আতিকুলের গাড়ির সামনে ছিল। ৩০টি ব্যক্তিগত গাড়ি ও মাইক্রোবাস নিয়ে তাঁর গাড়িবহর রওনা দেয়। গাড়িগুলো রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের খানিকটা দূরে ছিল।

আতিকুল আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনের সামনে এসে একটি গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করেন। তবে তিনি উত্তরার বাসা থেকে যখন বের হন, তখন অন্তত ৩০টি প্রাইভেট কার তাঁর সঙ্গে ছিল। আর তাঁর গাড়ির সামনে ছিল পুলিশের একটি গাড়ি। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে ‘পুলিশের কোনো গাড়ি ছিল না’ বলে দাবি করেন আতিকুল।

বেলা সোয়া ১২টায় দিকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে রাজধানীর গোপবাগের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে আসেন ঢাকা দক্ষিণের আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তাপস। এ সময় তাঁর সঙ্গে জাহাঙ্গীর কবির নানক, মাহবুবুল আলম হানিফ, সানজিদা খানম, বাহাউদ্দিন নাছিম, শেখ ফজলে শামস, আবু আহম্মদ মোন্নাফি, হুমায়ন কবীরসহ ১৫ থেকে ২০ জন নেতা ছিলেন। তাঁদের নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঢোকেন তিনি।

রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন তাপসের মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেন। যাতে আচরণবিধি লঙ্ঘন না হয়, সে বিষয়টি খেয়াল রাখার পরামর্শ দেন তিনি। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তাপসের সহযোগিতাও চান তিনি।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তাপস। তিনি বলেন, ‘দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ঢাকাবাসীকে শুভেচ্ছা জানাই।’

তাপস বলেন, আগামী বছর থেকেই ঢাকা দক্ষিণে পরিবর্তনের সূচনা ঘটবে। এ নগরীতে অনেক কাজ বা নাগরিক পরিষেবা বাকি আছে। নির্বাচিত হলে নাগরিকদের মৌলিক সমস্যাগুলো সমাধান করা হবে। ক্রমান্বয়ে নগরের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে একটি বাসযোগ্য শহর গড়ে তোলা হবে।

মেয়র সাঈদ খোকনের সমর্থন পাবেন কি না, এ বিষয়ে তাপস বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বৃহত্তর সংগঠন। এই সংগঠনের বাইরে আমরা কেউ নই। আমি সবাইকে নিয়েই নির্বাচনের কাজ করব। পাশাপাশি সুশীল সমাজ ও নাগরিক প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করব।’

১৫ থেকে ২০ জনকে সঙ্গে আনায় আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে তাপস বলেন, ‘আমি নির্দিষ্টসংখ্যক লোক নিয়েই ঢুকেছি। কিন্তু কার্যালয়ের ভেতরে অন্যান্য কাউন্সিল প্রার্থী ছিলেন। তাঁদের জন্যই লোক বেড়েছে।’

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঢোকার আগে আওয়ামী লীগসহ দলটির বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের কয়েক শ নেতা-কর্মী তাপসকে ঘিরে স্লোগান দিতে থাকে। তাঁরাও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঢুকতে চান। এ সময় পুলিশ বাধা দেয়। তবে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে কয়েকজন ভেতরে ঢুকে পড়েন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর আবার এই সমর্থকেরা স্লোগান দিতে থাকে।