বাংলাদেশের সমৃদ্ধিতে ভারতের সম্ভাবনা দেখি: রীভা গাঙ্গুলী

প্রথম আলো কার্যালয়ে আসেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাস। কারওয়ান বাজার, ৩১ ডিসেম্বর। ছবি: খালেদ সরকার
প্রথম আলো কার্যালয়ে আসেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাস। কারওয়ান বাজার, ৩১ ডিসেম্বর। ছবি: খালেদ সরকার

ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাস বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সমৃদ্ধিতে আমরা ভারতের সম্ভাবনা দেখি। অব্যাহতভাবে ৮ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি, সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের অর্জন—এগুলোর সবই আমাদের জন্য সুযোগ। তাই আমরা প্রতিবেশী বাংলাদেশকে নিয়ে গর্ব করি।’

আজ মঙ্গলবার প্রথম আলো কার্যালয়ে এসে রীভা গাঙ্গুলী দাস দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে এই আশাবাদের কথা বলেন।

দুপুরে প্রথম আলো কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য এলে রীভা গাঙ্গুলী দাসকে স্বাগত জানান পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান। এ সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মুচকুন্দ দুবে, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান, বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক রওনক জাহান, সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর পিস অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইপিএসএস) প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান এবং প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

প্রথম আলো সম্পাদকের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে প্রথম আলো কার্যালয়ে আসেন বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাস। আরও এসেছিলেন ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মুচকুন্দ দুবে, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। কারওয়ান বাজার, ৩১ ডিসেম্বর। ছবি: খালেদ সরকার
প্রথম আলো সম্পাদকের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে প্রথম আলো কার্যালয়ে আসেন বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাস। আরও এসেছিলেন ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মুচকুন্দ দুবে, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। কারওয়ান বাজার, ৩১ ডিসেম্বর। ছবি: খালেদ সরকার

সৌজন্য সাক্ষাতের পর দুই দেশের সম্পর্কের পর্যালোচনার বিষয়ে এই প্রতিবেদককে রীভা গাঙ্গুলী দাস বলেন, ‘গত ১০ বছরে সম্পর্কে তো অনেক কিছু বদলেছে। বিশেষ করে গত ৫ বছরে। এ সময়টাতে অনেক উন্নতি আমরা দেখেছি। দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ সময়ের তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে স্থল সীমান্ত চুক্তির সমাধান ও সমুদ্রসীমার বিরোধ নিস্পত্তি। দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত দুই সমস্যার সমাধান হয়েছে।’ 

রীভা গাঙ্গুলীর মতে, দক্ষিণ এশিয়ার দুই নিকট প্রতিবেশীর সম্পর্ক এখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত হয়েছে। চিরাচরিতভাবে দুই দেশের সম্পর্ক যেখানটাতে যেমন—ব্যবসা-বাণিজ্য—এর পাশাপাশি সেটা ছাড়াও বিজ্ঞান প্রযুক্তি, সুন্দরবনের সুরক্ষা থেকে শুরু করে পরমাণু বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিসহ নানা ক্ষেত্রে দুই দেশ এখন একে অন্যকে সহযোগিতা করছে। সরকারী পর্যায়ে দুই দেশের প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় যে আলোচনা, তাতে গতি এসেছে।

রীভা গাঙ্গুলী দাস বলেন, দুই দেশের রাজনৈতিক বোঝাপড়া সাম্প্রতিক সময়ে বেশ ভালো। নিয়মিতভাবে সফর হচ্ছে। দ্বিপক্ষীয় সফরের পাশাপাশি বহুপক্ষীয় ফোরামের ফাঁকেও দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। বছরে তাদের মধ্যে অনেকবার দেখা হচ্ছে। সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে মহাত্মা গান্ধীর সার্ধশততম জন্মবার্ষিকীতে তিনি ছিলেন অন্যতম সাম্মানিক অতিথি। অক্টোবরে ইন্ডিয়ান ইকোনমিক সামিটের ফাঁকে তাঁদের দেখা হলো। নভেম্বরে ক্রিকেট কূটনীতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কলকাতায় গেলেন।

দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বৈষম্য কমানোর ওপর জোর দিতে গিয়ে রীভা গাঙ্গুলী দাস বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। দুই দেশের বাণিজ্যে অবশ্যই এখনো বৈষম্য আছে। সেটা কমানো দরকার। ভারতের বাংলাদেশের ব্যবসার ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনতে হবে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ভারতের ৩০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি আছে। এ ছাড়া পাইপলাইনে আছে আরও এক হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ। চট্টগ্রামের মিরেরসরাইতে ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হলে আরও অনেক বিনিয়োগ হবে।

ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ‘সংযুক্তির ক্ষেত্রে বিশেষ রেল, সড়ক ও অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহনের ক্ষেত্রে অগ্রগতি আছে। চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের ব্যাপারে আগে যে চুক্তি সই হয়েছে, তা বাস্তবায়নের জন্য এবার কার্যপ্রণালি বিধি সই হয়েছে। খুব শিগগির পরীক্ষামূলকভাবে দুই বন্দর ব্যবহার শুরু হবে। সব মিলিয়ে আমি এগুলোকে সম্পর্কের ক্ষেত্রে গ্যাম চেঞ্জার হিসেবে বিবেচনা করি।’

সংযুক্তির ওপর গুরুত্ব দিতে গিয়ে রীভা গাঙ্গুলী দাস বলেন, ‘আমাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর প্রেক্ষাপটে দেখলে এই সংযুক্তি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশের সমৃদ্ধিতে আমরা ভারতের সম্ভাবনা দেখি। এমন নজরকাড়া প্রবৃদ্ধি, বিশেষ করে অব্যাহতভাবে ৮ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি, সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের অর্জন, এগুলোর সবই আমাদের জন্য সুযোগ। তাই আমরা প্রতিবেশী বাংলাদেশকে নিয়ে গর্ব করি। বাংলাদেশকে দেওয়া তিনটি ঋণ চুক্তির আওতায় যে প্রকল্পগুলো আছে, তার মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি হচ্ছে অবকাঠামোর জন্য। রেলের ক্ষেত্রে ৬৫ সালের আগের সংযোগগুলো আমরা আবার চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলো কাজ করছে। সব মিলিয়ে এগুলো দিয়ে এবার সংযুক্তি হলে ব্যবসায়ীরা বুঝতে পারবেন, এগুলোয় কতটা সুযোগ আছে।’

সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে দুই দেশের সরকারের পাশাপাশি জনগণের মেলবন্ধন বিষয়ে বলতে গিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাস বলেন, ‘বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ভিসাপ্রক্রিয়া আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়েছে। ভাষা, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের কারণে স্বাভাবিক মেলবন্ধন তো আছেই। শিল্প আর সংস্কৃতির কারণে বাংলাদেশের জনগণের ভারতের প্রতি স্বাভাবিকভাবেই আকর্ষণ রয়েছে। সাংস্কৃতিক সংযোগ যথেষ্ট গতিশীল হয়েছে। মেডিকেল ভিসায় প্রচুর লোক ভারতে চিকিৎসা করতে যাচ্ছেন। আজকেই আমরা ১৫ লাখ ভিসা দেওয়ার লক্ষ্য পূরণ করলাম। তিনজন মুক্তিযোদ্ধাকে পাঁচ বছরের মাল্টিপল ভিসা দেওয়া হল। বেড়ানো, চিকিৎসা স্বজনদের সঙ্গে দেখা–সাক্ষাৎ, ব্যবসাসহ নানা কারণে বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক লোক ভারতে যাচ্ছেন।’