দুর্গন্ধময় সেই জায়গাটিই এখন সুরভি ছড়াবে

তরুণদের উদ্যোগে শেরপুরের নালিতাবাড়ী শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে প্রস্রাব বন্ধ করে সেখানে তৈরি করা হয়েছে ফুলের বাগান।  ছবি: প্রথম আলো
তরুণদের উদ্যোগে শেরপুরের নালিতাবাড়ী শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে প্রস্রাব বন্ধ করে সেখানে তৈরি করা হয়েছে ফুলের বাগান। ছবি: প্রথম আলো

শেরপুরের নালিতাবাড়ী পৌর শহরকে ‘সবুজ শহর’ হিসেবে গড়ে তুলতে উপজেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধিরা নানা কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। কিন্তু স্থানীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে প্রস্রাব বন্ধ করাটা ছিল দুরূহ ব্যাপার। স্থানীয় একটি সংগঠনের তরুণদের প্রচেষ্টায় প্রস্রাব বন্ধ করে সেই স্থানে তৈরি করা হলো ফুলের বাগান। এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে পৌরসভার সচেতন নাগরিক সমাজ।

শহরের উত্তর বাজার এলাকায় ৪০ শতাংশ জমি নিয়ে স্বাধীনতার পর স্থানীয় শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। এই শহীদ মিনারের পশ্চিম সীমানা ঘেঁষে পৌরসভার আটটি দোকান রয়েছে। উত্তর পাশে গ্রিল দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। তার পাশে গড়ে উঠেছে চারটি চায়ের দোকান। শহীদ মিনার চত্বরে দক্ষিণ অংশে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চ রয়েছে। এর পশ্চিম পাশে প্রেসক্লাব ভবন। মাঠের পূর্ব পাশে রয়েছে শহীদ মিনার বেদি।

শহীদ মিনারের পাশে রয়েছে কাচারিপাড়া যুব পরিষদের ভবন। তার পাশে পৌর শহরের নির্ধারিত একটি গণশৌচাগার। কিন্তু শৌচাগারটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। পৌরসভার দোকানের পেছনের দিকে শহীদ মিনারের সামনের অংশে শহরের সাধারণ মানুষ ও আশপাশের দোকানিরা প্রতিনিয়ত প্রস্রাব করে পরিবেশ নোংরা করে রাখত।

পৌরসভার মেয়র আবু বক্করের সিদ্দিকের নির্দেশে স্থানীয় চায়ের দোকানের মালিক ও কাচারিপাড়া যুব পরিষদের তরুণ সদস্যরা মিলে শহীদ মিনারে এক মাস ধরে প্রস্রাব করা বন্ধ করেন। কেউ প্রস্রাব করতে চাইলে একযোগে সবাই হইহুল্লোড় শুরু করে দেন। এতে লজ্জায় প্রস্রাব করা বন্ধ করে চলে যান লোকজন। এক মাস ধরে এভাবে হুইহুল্লোড় করায় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে প্রস্রাব করা বন্ধ হয়ে গেছে।

এক সপ্তাহ ধরে প্রস্রাব করা অংশের মাটি তুলে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেখানে এখন বাইরে থেকে নতুন মাটি এনে ভরাট করে বিভিন্ন বৃক্ষরোপণসহ ফুলের বাগান করা হয়েছে। এই বাগানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘শহীদ মিনার মিনি গার্ডেন’। গত সোমবার সন্ধ্যায় এই বাগানের উদ্বোধন করেন পৌরসভার মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিক। বাগান রক্ষায় জাল দিয়ে বেড়া দেওয়া হয়েছে।

কাচারিপাড়া যুব পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আরমান আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, তাঁরা নিজেরা আর্থিক সহযোগিতা করে বাগান তৈরি করেছেন। শহীদ মিনার হচ্ছে শ্রদ্ধা নিবেদনের স্থান। এখানে প্রস্রাব করাটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার ছিল। এলাকার দোকানি ও যুব পরিষদের তরুণদের প্রচেষ্টায় তা বন্ধ করা গেছে।

পৌর শহরের আবদুল হাকিম স্মৃতি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক যোগেন রায় বলেন, তরুণেরা এগিয়ে এলে সবকিছু জয় করা সম্ভব। শহীদ মিনার হচ্ছে পবিত্র স্থান। শহীদদের শ্রদ্ধার জায়গা। নতুন প্রজন্ম পবিত্রতার বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারায় তাদের অভিনন্দন।

মুক্তিযোদ্ধা মোকছেদ আলী বেগ বলেন, তরুণদের এ প্রচেষ্টা সত্যি প্রশংসনীয়।

পৌরসভার মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, তিনি নিজে এখানে প্রস্রাব বন্ধে অনেককে নিষেধ করেছেন। শহীদ মিনারের ময়লা–আবর্জনা প্রায় প্রতি রাতে নিজ হাতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলেন। বিষয়টি উপলব্ধি করে কাচারিপাড়া যুব পরিষদের সদস্যরা উদ্যোগী হয়ে প্রস্রাব করা বন্ধ করে সুন্দর ফুলের বাগান তৈরি করেছেন। এখন দেখতেই ভালো লাগে। এই সৌন্দর্য রক্ষায় সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।