হালি পেঁয়াজেই এখন ভরসা

পাবনার সাঁথিয়া ও বেড়ায় চাষ করা আগাম জাতের পেঁয়াজের এক-তৃতীয়াংশ তোলা হয়েছে। এখন কৃষকেরা ব্যস্ত হালি পদ্ধতিতে চাষ করা পেঁয়াজের পরিচর্যায়। সম্প্রতি বেড়ার বড়শিলা গ্রামে।  ছবি: প্রথম আলো
পাবনার সাঁথিয়া ও বেড়ায় চাষ করা আগাম জাতের পেঁয়াজের এক-তৃতীয়াংশ তোলা হয়েছে। এখন কৃষকেরা ব্যস্ত হালি পদ্ধতিতে চাষ করা পেঁয়াজের পরিচর্যায়। সম্প্রতি বেড়ার বড়শিলা গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

পাবনার সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলার এক-তৃতীয়াংশের বেশি জমি থেকে আগাম জাতের পেঁয়াজ ঘরে উঠেছে। কিন্তু তাতেও পেঁয়াজের দাম কমেনি, বরং দু–তিন দিন ধরে দাম আবার বেড়ে চলেছে। আমদানি কমে যাওয়ায় এমন অবস্থা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। নতুন করে আমদানির জন্য তাঁদের এখন ভরসা করতে হচ্ছে হালি বা মূল পদ্ধতিতে চাষ হওয়া পেঁয়াজের ওপর।

সাঁথিয়া ও বেড়া—দুই উপজেলাতেই এখন চলছে হালি বা মূল পদ্ধতির পেঁয়াজ চাষ। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে এ পেঁয়াজ উঠতে শুরু করবে। তখন দাম আবার কমে আসবে বলে ধারণা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

কৃষক ও স্থানীয় কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পাবনার সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলায় প্রচুর পেঁয়াজের আবাদ হয়ে থাকে। এর মধ্যে সাঁথিয়া উপজেলা পেঁয়াজের ভান্ডার নামে পরিচিত। এ উপজেলায় এবার ১৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর ও বেড়া উপজেলায় প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সাঁথিয়া উপজেলায় ৩ হাজার ও বেড়া উপজেলায় ৮০০ হেক্টর জমিতে আগাম পেঁয়াজের আবাদ হয়েছিল। দুই উপজেলার এক-তৃতীয়াংশ জমি থেকে কৃষকেরা আগাম জাতের পেঁয়াজ ঘরে তুলেছেন। 

কৃষক ও পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত পাঁচ থেকে ছয় বছরে পেঁয়াজচাষিরা আগাম ও হালি—দুই ধরনের পেঁয়াজেই টানা লোকসান দিয়েছেন। কিন্তু এবার তাঁরা বেশ ভালো লাভ করছেন। সাঁথিয়া উপজেলার করমজা হাটে পেঁয়াজ নিয়ে আসা শহীদনগর গ্রামের কৃষক শমসের আলী বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে আগাম পেঁয়াজের আবাদ করিছিল্যাম। আরও সপ্তাহখানেক জমিতে থাকলি পেঁয়াজগুল্যা পুরা পুষ্ট হতো। কিন্তু পেঁয়াজের দাম আবারও বাড়িছে দেইখ্যা জমি থেকে তুইল্যা বাজারে নিয়্যা আইল্যাম।’ 

পেঁয়াজের দাম ভালো দেখে দুই উপজেলার কৃষকেরা এবার পেঁয়াজ চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত এ উপজেলার ৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে হালি পদ্ধতির পেঁয়াজের আবাদ শেষ হয়েছে। দুই সপ্তাহের মধ্যে বাকি জমির পেঁয়াজের আবাদ শেষ হবে বলে জানা গেছে। ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে হালি পদ্ধতির পেঁয়াজ কৃষকের ঘরে উঠতে শুরু করবে।

বেড়া-সাঁথিয়ার বাজারে দু–তিন দিন ধরে পেঁয়াজের দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে। গতকাল শুক্রবার সাঁথিয়ার করমজা হাটে প্রতি কেজি আগাম জাতের পেঁয়াজ ১৫০ থেকে ১৭৫ টাকায় (পাইকারি) বিক্রি হতে দেখা গেছে। হাট ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজের আমদানি হয়েছে বেশ কম। হাটে আসা পেঁয়াজের সবই স্থানীয় আগাম জাতের বলে জানা যায়।

হাটের সবচেয়ে বড় পেঁয়াজের আড়ত আবদুল মুন্নাফের। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আগাম জাতের পেঁয়াজ সপ্তাহ দু–একের মধ্যেই হয়তো শেষ হয়ে যাবে। আমরা ভেবেছিলাম, আগাম জাতের পেঁয়াজ উঠলেই দাম কমে যাবে। কিন্তু তা আর হলো না। তাই এখন ভরসা হালি পেঁয়াজে। মাস দেড়েকের মধ্যে এই পেঁয়াজ বাজারে উঠলে দাম কমবে বলে আশা করছি।’

সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, ‘হালি বা মূল পদ্ধতির পেঁয়াজের ফলন ভালো হবে বলে আশা করছি। ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে হালি পদ্ধতির পেঁয়াজ কৃষকের ঘরে উঠতে শুরু করবে।’