দৃষ্টিনন্দন পুকুর এখন ময়লার ভাগাড়

নারায়ণগঞ্জের দেওভোগের ভুঁইয়ারবাগ তালতলা পুকুরে ফেলা হয়েছে ময়লা-আবর্জনা। ২৭ ডিসেম্বর দুপুরে।  ছবি: দিনার মাহমুদ
নারায়ণগঞ্জের দেওভোগের ভুঁইয়ারবাগ তালতলা পুকুরে ফেলা হয়েছে ময়লা-আবর্জনা। ২৭ ডিসেম্বর দুপুরে। ছবি: দিনার মাহমুদ

পুকুরের চারপাশ ঘিরেই পরিচ্ছন্ন আরসিসি সড়ক। সড়ক ও পুকুরকে আলাদা করেছে কারুকাজ করা লোহার গ্রিল। গ্রিলের ভেতরে সারি সারি ফুলের টব। আছে বাঁধাই করা ঘাট। নারায়ণগঞ্জ শহরের ভূঁইয়ার তালতলা পুকুরটিকে তিন বছর আগে এভাবেই সংস্কার করেছিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। তবে রক্ষণাবেক্ষণ আর অযত্ন-অবহেলায় দৃষ্টিনন্দন পুকুরটি এখন পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে।

‘ডঙ্কু ভূঁইয়ার পুকুর’ নামে পরিচিত প্রায় ১ একর জায়গা নিয়ে থাকা প্রাচীন এই পুকুর এলাকাবাসীর যৌথ মালিকানাধীন। এই পুকুর ঘিরেই চলে ভূঁইয়ার এলাকার মানুষের নিত্যদিনের কাজকর্ম। অজু-গোসল থেকে শুরু করে রান্নার কাজেও ব্যবহৃত হয় এই পুকুরের জল। সকালে ও সন্ধ্যায় পুকুরের চারপাশে হাঁটতে যান আশপাশের এলাকার মানুষ। গুরুত্ব বিবেচনায় ২০১৬ সালে পুকুরের সংস্কার, সংরক্ষণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। স্থানীয়রা বলছেন, শুধু পুকুর সংস্কারের কারণেই পাল্টে গিয়েছিল এলাকার পরিবেশ। চারপাশে লাগানো ফুল–ফলের গাছ আর টলটলে জলের কারণে পুকুরটির বহুমুখী ব্যবহার শুরু হয়েছিল। নিত্যদিনের কাজকর্ম ছাড়াও আশপাশের এলাকার শিশুদের সাঁতার শেখানো হতো এখানে। কিন্তু গত দুই বছরে নষ্ট হয়েছে পুকুরের পরিবেশ। গৃহস্থালি বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত হওয়া পুকুরটি এলাকার পরিবেশকে অস্বাস্থ্যকর করে তুলেছে। 

গত ২৭ ডিসেম্বর বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, পুকুরের মোট পাঁচটি অংশে ফেলা হয়েছে প্রায় কয়েক টন গৃহস্থালি বর্জ্য। পুকুরের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে গৃহস্থালি বর্জ্যের স্তূপের একপাশ দখল করে দোকান তৈরি হয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে কাপড় বেঁধে নতুন করে বর্জ্য ফেলার জায়গা তৈরি করেছেন স্থানীয়রা। পুকুরের পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে পলিথিন আর আবর্জনা। আবর্জনার উৎকট গন্ধ সহ্য করেই সেখানে হাঁটছেন কয়েকজন বয়স্ক নারী। আবর্জনা সরিয়ে সেখান থেকেই পানি সংগ্রহ আর অজু-গোসলের কাজ সারছেন কেউ কেউ।

সেখানে কথা হয় এলাকার বাসিন্দা শহীদ মিয়ার সঙ্গে। তিনি অভিযোগ করেন, দুই বছর ধরে প্রতিদিন এলাকার বর্জ্য সংগ্রহ করে না সিটি করপোরেশন। তবু ১২০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বিল গুনতে হয়। এসব কারণে এলাকার অনেকেই তাঁদের গৃহস্থালি বর্জ্য পুকুরে ফেলছেন। স্থানীয় কাউন্সিলর বা অন্য কেউ এতে বাধা না দেওয়ায় ধীরে ধীরে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে পুকুরটি। পুকুর থেকে পানি নিতে আসা গৃহিণী নাজমা বেগম বলেন, ‘পুকুরের পানি দিয়ে আমরা রান্না করতাম। সিটি করপোরেশন নিয়মিত ময়লা নেয় না বলে এলাকার কয়েকজন পুকুরে ময়লা ফেলা শুরু করেন। আমরা বাধা দিলেও কেউ শোনেন না। এখন সবাই এখানে ময়লা ফেলে আমাদের খাবার জল নষ্ট করছেন। অথচ নিয়মিত ময়লা সংগ্রহ কিংবা পুকুর রক্ষার বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর কোনো উদ্যোগ নেননি।’ 

পুকুর পরিষ্কার করে নিয়মিত এলাকার বর্জ্য সংগ্রহ এবং এলাকাবাসীর সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়ে পুকুরটিকে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

অভিযোগ অস্বীকার করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শফিউদ্দিন প্রধান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনিয়মিত বর্জ্য সংগ্রহ এবং বর্জ্য সংগ্রহের অতিরিক্ত বিল আদায়ের অভিযোগ মিথ্যা। সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত বিল ৬০ টাকার বেশি নেওয়া হয় না। বর্জ্যও নিয়মিত সংগ্রহ করা হয়।’ বেশ কয়েকবার পুকুর পরিষ্কার করা হয়েছে জানিয়ে কাউন্সিলর বলেন, এলাকাবাসীর অসচেতনতায় পুকুর দূষিত হয়েছে। তাঁরা কথা শোনেন না।

শিগগিরই পুকুর পরিষ্কারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা আলমগীর হিরণ। তিনি বলেন, বর্জ্য অপসারণ ছাড়াও এলাকাবাসীর অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তা ছাড়া এলাকার পরিবেশ ঠিক রাখতে স্থানীয়দের সঙ্গে সচেতনতামূলক বৈঠক করা হবে।