মশা মারতে হবে এখনই

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

রোগতত্ত্ব ও কীটতত্ত্ববিদেরা বলেছেন, পুরো ঢাকা শহরই এখন মশার ‘হট স্পট’ (মশার আধিক্য ও বংশবিস্তারপ্রবণ এলাকা)। এ বছরও ভয়াবহ আকারে ডেঙ্গু প্রকোপ দেখা দেওয়ার আশঙ্কা আছে। এডিস মশা ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক যুদ্ধে নেমে পড়ার এখনই উপযুক্ত সময়।

গতকাল রোববার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন আয়োজিত মতবিনিময় অনুষ্ঠানে রোগতত্ত্ব ও কীটতত্ত্ববিদেরা এ কথা বলেন। ‘কিউলেক্স ও এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে করণীয় সম্পর্কে কেন্দ্রীয় মতবিনিময় সভায়’ উত্তর সিটি করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলররাসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষকেরা উপস্থিত ছিলেন। মশা নিয়ন্ত্রণে উত্তর সিটি করপোরেশন কী করেছে, আগামী দিন কী করবে, তা অবহিত করার জন্য এই সভার আয়োজন করা হয়।

গত বছরের ডেঙ্গুর প্রকোপকে বড় ধরনের ‘আউট ব্রেক’ (প্রাদুর্ভাব)বর্ণনা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, মশা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায়। আজ যেখানে মশা কম, কাল সেখানে বেশি হওয়ার ঝুঁকি আছে। পুরো ঢাকা শহরই এখন মশার হট স্পট। তিনি বলেন, আক্রান্তদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবীরা বেশি আক্রান্ত হয়েছে। এর অর্থ এই যে, শিক্ষাঙ্গন, কর্মক্ষেত্র—নজরের বাইরে থেকে গেছে।

গত বছর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেছিল এপ্রিল মাসে। এ বছর জানুয়ারি থেকে শুরু করেছে। এ কথা উল্লেখ করে অনুষ্ঠানের শুরুতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান বলেন, ‘গত বছর ডেঙ্গুর যে ভয়াবহতা দেখেছি, আশা করি এ বছর তা আর দেখব না। এ জন্য সবার সহযোগিতা দরকার।’ মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকা উত্তর সিটির স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে কী করছে, তার বর্ণনা দেন উপপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লে. কর্নেল সারোয়ার। তিনি বলেন, কিউলেক্স ও এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে পাঁচ বছর মেয়াদি সমন্বিত বাহক ব্যবস্থাপনা কর্মপরিকল্পনা তৈরির কাজ চলছে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল হাই।

>

ঢাকা উত্তর সিটির মতবিনিময়
এখন এডিস মশা কম
ডেঙ্গু রোগীও কম
এখন মাঠে নামলে ভালো ফল পাওয়া যাবে

ঢাকা শহরে বছরে তিনবার মশা জরিপ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা। আলোচনায় অংশ নিয়ে রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক সানিয়া তহমিনা জানান, সর্বশেষ জরিপ হয়েছে ১৭ থেকে ২৭ ডিসেম্বর। জরিপের প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, গত বছর এই সময় যে পরিমাণ লার্ভা পাওয়া গিয়েছিল, এ বছর তার চেয়ে কম।

সানিয়া তহমিনা বলেন, ঢাকা শহরে চলমান বড় প্রকল্প এলাকার লার্ভা বা মশা নিধন করা কঠিন। এ বছর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে গণপূর্ত বিভাগ, আবহাওয়া অধিদপ্তর, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সবার সক্রিয় ভূমিকা দরকার। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বাড়তি তহবিলও দরকার।

সানিয়া তহমিনা ও মীরজাদী সেব্রিনা দুজনই বলেন, এখন ডেঙ্গু কম, ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশাও কম। কাজ করার এখনই উপযুক্ত সময়।

গত বছরের ডেঙ্গু পরিস্থিতির তথ্য–উপাত্ত উপস্থাপন করেন জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির উপকর্মসূচি ব্যবস্থাপক আফসানা আলমগীর খান। তিনি বলেন, গত বছর আক্রান্তদের ৫১ শতাংশ ছিল ঢাকা শহরের, ৪৯ শতাংশ রোগী ছিল ঢাকা শহরের বাইরের জেলাগুলোতে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে কীটতত্ত্ববিদ মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, এডিস মশার ডিম কোথায় কী পরিমাণ আছে, জানা নেই। অন্যদিকে অনেকে ভাবছেন পরপর দুই বছর ডেঙ্গুর বড় ধরনের প্রকোপ হওয়ার আশঙ্কা কম। এই ভাবনাও যথেষ্ট বিজ্ঞানভিত্তিক নয়। তিনি বলেন, এ বছরও পবিত্র কোরবানির ঈদের সময় ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেওয়ার আশঙ্কা আছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, পদ্ধতিগতভাবে না এগোলে মশা ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ হবে না। কী কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে, সেই কীটনাশক কীভাবে, কোথা থেকে আমদানি করতে হবে, তা ঠিক করা জরুরি। এ কাজ করার সময় এখনই।