ধর্ষণের স্থানে পড়ে আছে মেয়েটির বই, ঘড়ি, চাবির রিং, ইনহেলার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে ধর্ষণ রুখে দেওয়ার শপথ নেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে ধর্ষণ রুখে দেওয়ার শপথ নেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনাস্থল চিহ্নিত করা হয়েছে। বিমানবন্দর সড়কে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের কাছে গলফ ক্লাব সীমানার শেষ প্রান্তে ঝোপের মধ্যে মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয়। ঝোপের মধ্যে মেয়েটির ইনহেলার, ক্লাসের নোটবুক, লেকচার শিট, চাবির রিং পড়ে ছিল। এ ছাড়া সেখান থেকে জুতা ও কালো রঙের একটি জিনস প্যান্ট পাওয়া গেছে। পুলিশের ধারণা, ধর্ষক একজন।

পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের জায়গা নির্দিষ্ট করে জানাতে না পারায় সকাল থেকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের আশপাশের এলাকায় অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।


গতকাল রোববার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে বান্ধবীর বাসায় যেতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হন ওই ছাত্রী। বান্ধবীর বাসা শেওড়া হলেও ভুল করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে বাস থেকে নেমে যান তিনি।

আজ সোমবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যেতে বাঁ পাশে কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ড থেকে ৪০০ গজ সামনে পুলিশ আলামত সংগ্রহ করছে। জায়গাটি গলফ ক্লাবের সীমানার শেষ প্রান্তে যাত্রীছাউনি ছাড়িয়ে। ঘটনাস্থল থেকে ১০ হাত দূরে একটি বিজ্ঞাপনী বিলবোর্ড রয়েছে। যে জায়গায় ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে, সেখানে ফুটপাত আছে। অনেকগুলো ল্যাম্পপোস্ট আছে। লোকজনের চলাচলও থাকে। জায়গাটিতে কয়েকটি মেহগনিগাছ আছে। ছোট ছোট বরইগাছ আছে অনেকগুলো। ঝোপঝাড় ও লতাগুল্ম আছে। সেখানেরই একটি ঝোপে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। আজ ভোর থেকে র‌্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দুই ভাগে ভাগ হয়ে আলামত সংগ্রহ শুরু করে। আর সকাল ১০টা থেকে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) আলামত সংগ্রহ শুরু করে।

ঘটনাস্থলে পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, জায়গাটি কিছুটা বিচ্ছিন্ন। এখানে ফুটপাত আছে, লোকজন চলাচল করে। এখানের ঝোপে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। এখনো আলামত সংগ্রহ চলছে। ঘটনাস্থলে ক্রাইম সিন আছে। তাঁরাও আলামত সংগ্রহ করছেন। একটি ঝোপ থেকে ধর্ষণের শিকার ছাত্রীর চাবির রিং, দুটি ইনহেলার, নোটবুক পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, ঘটনাটি তদন্তে তথ্যপ্রযুক্তিরও সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। আশা করা যায়, ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ধরা যাবে। ধর্ষক একজন বলে মনে করা হচ্ছে।

গতকাল গভীর রাতে ওই ছাত্রীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাঁকে হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়েছে।

ওসিসি সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রীকে ধর্ষণের সব আলামত পাওয়া গেছে। আগে থেকে তাঁর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা ছিল। ধর্ষণের সময় মারধর করা হয়েছে। সব মিলিয়ে তাঁর শারীরিক অবস্থা ভালো নেই।

ছাত্রীর চিকিৎসার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মেডিকেল কর্তৃপক্ষ। ছয় সদস্যের ওই কমিটির নেতৃত্বে আছেন গাইনি বিভাগের অধ্যাপক সালমা রউফ।

ওই ছাত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) একটি হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।

দায়িত্বশীল ব্যক্তি ওই ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলার পর প্রথম আলোকে বলেন, কুর্মিটোলায় বান্ধবীর বাসায় যেতে গতকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ওই ছাত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে ওঠেন। বাস থেকে কুর্মিটোলা এলাকায় নামার পর অজ্ঞাতপরিচয় একজন তাঁর মুখ চেপে ধরে। পরে ধর্ষণ করা হয়। রাত ১০টার দিকে চেতনা ফেরার পর তিনি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে বান্ধবীর বাসায় যান। বান্ধবীকে ঘটনা জানান। এরপর সহপাঠীরা তাঁকে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসেন। পরে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: