ব্যবসায়ী হত্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চারজনের মৃত্যুদণ্ড

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

পাওনা টাকা পরিশোধের কথা বলে ডেকে নিয়ে ঢাকার চকবাজারের ব্যবসায়ী আবদুল হান্নান ওরফে বাহারকে (৪৫) হত্যার দায়ে চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে রায় পড়ে শোনান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ সফিউল আজম।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ভাঙ্গরা গ্রামের মো. নুরু মিয়া, লোকমান খান, মো. জিয়াউল হক ও একই উপজেলার কামারচর উত্তরপাড়ার কাদির হোসেন। তাঁদের মধ্যে জিয়াউল হক রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বাকি আসামিরা পলাতক।

মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার অম্বরনগর গ্রামের হান্নান ঢাকার চকবাজারে কসমেটিক ও ইমিটেশনের ব্যবসা করতেন। চকবাজারে তাঁর ‘বিপুল এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ছিল। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারেরা হান্নানের দোকান থেকে মালামাল কিনে নিয়ে যেতেন। প্রতিবছর ঈদ শেষে পাইকারদের কাছ থেকে বকেয়া টাকা আদায় করে ঢাকায় ফিরতেন তিনি। ২০১৪ সালের ৪ আগস্ট বেলা তিনটার দিকে তিনি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ভাঙ্গরা এলাকায় পাইকার লোকমান খানের কাছে বকেয়া আদায় করতে যান। তাঁকে আটকে রেখে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। পরিবার তিন লাখ টাকা দেয়। বাকি টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন লোকমান। ৬ আগস্ট রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তিতাস নদে ঘুমন্ত ও হাত-পা বাঁধা অবস্থায় হান্নানকে ফেলে হত্যা করা হয়। ৮ আগস্ট বেলা তিনটার দিকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির ছোট ভাই বেলাল হোসেন পরের দিন বাঞ্ছারামপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

বাঞ্ছারামপুর থানার তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা জাকির হোসেন খন্দকার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নুরু মিয়া, বাবুল মিয়া ও জিয়াউল হককে গ্রেপ্তার করেন। তিন আসামি হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। হত্যার ঘটনা প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০১৪ সালের ১০ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এই মামলায় কারাগারে ছিলেন আসামি বাবুল মিয়া। কারাগারে থাকা অবস্থায় ২০১৮ সালের ১৬ জুন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। এ জন্য জেল সুপারের এক প্রতিবেদনে বাবুলকে এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেন আদালত।

আদালতের রায় শুনতে নোয়াখালী থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হান্নানের পরিবারের লোকজন উপস্থিত হন। তাঁরা রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি এস এম ইউসুফ বলেন, ‘মামলার রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। এই রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’

আর আসামিপক্ষের আইনজীবী জসিম উদ্দিন আহমেদ উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা বলেন।