চট্টগ্রাম বিএনপির ২৩ নেতা-কর্মী কারাগারে

নাশকতার মামলায় চট্টগ্রাম বিএনপির ২৩ নেতা-কর্মীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। রায় শেষে তাঁদের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বেলা তিনটা, চট্টগ্রাম আদালত চত্বর, ৬ জানুয়ারি। ছবি: সৌরভ দাশ
নাশকতার মামলায় চট্টগ্রাম বিএনপির ২৩ নেতা-কর্মীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। রায় শেষে তাঁদের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বেলা তিনটা, চট্টগ্রাম আদালত চত্বর, ৬ জানুয়ারি। ছবি: সৌরভ দাশ

চট্টগ্রামে নাশকতার অভিযোগে করা ‘গায়েবি’ মামলায় বিএনপির ২৩ নেতা-কর্মীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাক আহমেদ শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।

কারাগারে পাঠানো আসামিদের সবাই নগরের ডবলমুরিং থানা বিএনপির নেতা-কর্মী। তাঁদের মধে৵ চট্টগ্রাম মহানগর তাঁতী দলের সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান, কর্মীদের মধে৵ মো. আলমগীর, মো. সুজন, মো. বজল, মো. করিম, আবু নাঈম, মো. মামুন, সালাউদ্দিন, মো. মানিক, মো. মুছা, গোলাম শফি, হাসান রুবেল, আবু সামা, মো. শাহজাহান, মো. মোশারফ ও মো. শাহাদাত রয়েছেন।

২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে চট্টগ্রাম নগর ও জেলার ৩২ থানায় নাশকতার অভিযোগে মামলা হয়েছে ২৩২টি। এর মধ্যে শুধু অক্টোবর মাসেই হয় ১০৩ মামলা। এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াত ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের আসামি করেছে পুলিশ।

আদালত সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর নগরের ডবলমুরিং থানার পান্নাপাড়া এলাকায় পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ ও নাশকতার অভিযোগে বিস্ফোরক এবং পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় করা পৃথক দুই মামলায় ১৩২ জনকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ। এর মধ্যে ৪০ আসামি হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তাঁরা আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আজ দুপুর থেকে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের তৃতীয় তলায় ভিড় করতে থাকেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। বিকেলে শুনানি শুরু হওয়ার আগে ৪০ আসামি এজলাসে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়ান।

শুনানিতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের জামিনের আবেদন করেন আইনজীবী আহমদ কামরুল ইসলাম সাজ্জাদ। তিনি আদালতকে বলেন, আসামিরা সবাই হাইকোর্ট থেকে জামিনে ছিলেন। তাঁরা কেউ পুলিশের ওপর হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ কিংবা নাশকতার সঙ্গে জড়িত নন। যে দুটি মামলায় তাঁদের আসামি করা হয়েছে, এগুলো সম্পূর্ণ গায়েবি মামলা। ওই ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। শুধু বিএনপির রাজনীতি করার কারণে তাঁরা মামলার আসামি হয়েছেন। নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি অনেক সাধারণ মানুষও গায়েবি এসব মামলার আসামি। তাঁদের জামিন মঞ্জুর করা হোক। জামিনে থাকলে তাঁরা কোনো ধরনের অপরাধে জড়াবেন না। এখন সেই পরিস্থিতিও নেই।

ওই সময় রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করে চট্টগ্রাম মহানগর সরকারি কৌঁসুলি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, তাঁরা সবাই পুলিশের ওপর হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণ মামলার আসামি। জামিনে থাকলে পরিস্থিতির আবারও অবনতি ঘটাতে পারেন। বর্তমানে উন্নয়নে দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তা বাধাগ্রস্ত করতে পারেন।

উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত মহানগর তাঁতী দলের সভাপতি মনিরুজ্জামানসহ ২৩ জনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁদের চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেন। বাকি ১৭ জনের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। তাঁদের বেশির ভাগই অসুস্থ ও বয়োবৃদ্ধ।

জামিন আবেদন নামঞ্জুর হওয়ার পর আসামিদের কারাগারে নিয়ে যাওয়ার পথে পুলিশের উপস্থিতিতে জানতে চাইলে আসামিরা সবাই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেন। শাহজাহান নামের একজন বলেন, তিনি পান দোকানদার। কীভাবে আসামি হলেন, বুঝতে পারছেন না।