সরিষাখেতে মৌ চাষ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার দুটি গ্রামে হলুদের সমারোহ। গ্রামের মাঠজুড়ে আবাদ হয়েছে সরিষা। ইতিমধ্যে সরিষা থেকে মৌমাছির সাহায্যে মধু সংগ্রহ শুরু হয়েছে। মধু সংগ্রহের কারণে সরিষার ফলনও বাড়ে।

কালিয়াকৈরের বামনাবহ ও দেওয়াইর এলাকায় মৌচাষি দিয়ে সরিষাখেতের পাশে মৌ চাষের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মৌচাষিদের দেওয়া হয় তাঁবুসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা।

কৃষক, মৌচাষি ও উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গত মৌসুমে মৌ চাষ উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম শুরু করে। কালিয়াকৈরের দেওয়াইর বাজারে উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্যোগে সরিষাখেতে মধু চাষের ওপর কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই এলাকায় কৃষকেরা এবার ব্যাপক সরিষার আবাদ করেছেন। সরিষাখেতে মধুর জন্য মৌ বাক্স বসানো হয়েছে। সরিষার পরাগায়ন থেকে মধু সংগ্রহ করে থাকে মৌমাছি। ফলে সরিষার ফলন ভালো হয় ও বাড়তি মধু পাওয়া যায়। প্রতিটি বাক্সে মাত্র একটি রানি মৌমাছি থাকে। মধু আহরণে কাজ করে ১৫-২০ হাজার শ্রমিক মৌমাছি। এবার উপজেলায় ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। সরিষার খেতে মৌমাছি ফুলের ওপর বসলে ফুলের পরাগায়নে ফসলের পুষ্টি বৃদ্ধি হয়। সরিষার ফলন ২০ ভাগ বৃদ্ধি পায়। মৌ চাষের কারণে এবার সরিষার ফলন ভালো হওয়ায় অন্য বছরের তুলনায় বেশি আয় হবে বলে জানান স্থানীয় কৃষকেরা।

জানা যায়, এবার গাজীপুর ও ধামরাই থেকে ১২০টি মৌ বাক্স বসানো হয়েছে। এ থেকে আড়াই মেট্রিক টন মধু আহরণ হবে। শুরুর দিকে দুই গ্রামের কৃষকেরা ফলন নষ্ট হবে ভেবে তাঁদের আবাদি জমিতে মৌ বাক্স বসাতে দেননি। অথচ মৌ চাষের ফলে সরিষার ২০ ভাগ ফলন বাড়ে। শুধু সরিষাই নয়, মৌমাছিরা ফুলের পরাগায়ন ঘটিয়ে নানা ধরনের বরিশস্যের ফলন বৃদ্ধি করে। পরে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে আবাদি জমির পাশে মৌমাছির বাক্স স্থাপন করতে সহযোগিতা করছেন সাধারণ কৃষক। বর্তমানে মৌ চাষে প্রতি বাক্স থেকে সপ্তাহে ৪-৫ কেজি মধু সংগ্রহ করা যায়। তবে অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে মধু সংগ্রহ বেশি হয়। ৩০টি বাক্সে ১২০ থেকে ১৫০ কেজি মধু সংগ্রহ করা হয়, যার বাজারমূল্য ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। মৌ চাষে অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে। মৌ চাষের কারণে একদিকে যেমন সরিষা উৎপাদন বাড়বে, অন্যদিকে অল্প খরচে মৌ চাষ করে দূর হচ্ছে বেকারত্ব। বাণিজ্যিক মৌ চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন কালিয়াকৈর উপজেলার আরও অনেকে।

বাংলাদেশ বি কিপার্স ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম বলেন, কালিয়াকৈরের গাজীপুর ও ধামরাই এলাকায় খামারিরা মধু আহরণ করেছেন। এরই মধ্যে প্রায় দুই টন মধু পাওয়া গেছে, যার মূল্য প্রায় ছয় লাখ টাকা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, এখানে কোনো মৌ চাষ নেই। তাই এখানে মৌ চাষ উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এখানকার মধু ভেজালমুক্ত। এলাকার মৌচাষিদের সাফল্যের কথা শুনে ও মৌ চাষ দেখে অনেকেই উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।