আমার ওপর ভরসা রাখুন: প্রধানমন্ত্রী

জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা
জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা

টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। আর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন বঙ্গবন্ধু–কন্যা শেখ হাসিনা, যিনি ক্ষমতাসীন দলটিরও শীর্ষ ব্যক্তি। তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর এক বছর কেটে গেছে।

গতকাল ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনা সরকারের এক বছরপূর্তি হয়েছে। এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জনগণকে তাঁর ওপরে ভরসা রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) তাদেরই (জনগণ) একজন হয়ে থাকতে চান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাধারণ মানুষকে ঘিরেই আমার সকল কার্যক্রম। আপনাদের (জনগণ) ওপর আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ অসাধারণ পরিশ্রমী এবং উদ্ভাবন ক্ষমতাসম্পন্ন। যেকোনো পরিস্থিতির সঙ্গে তাঁরা নিজেদের মানিয়ে নিতে সক্ষম। অল্পতেই সন্তুষ্ট এ দেশের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। জাতির পিতা আজীবন সংগ্রাম করেছেন এসব মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য, তাদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। তাঁর কন্যা হিসেবে আমার জীবনেরও একমাত্র লক্ষ্য মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। আমার ওপর ভরসা রাখুন। আমি আপনাদেরই একজন হয়ে থাকতে চাই।’


আজ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিওতে একযোগে সম্প্রচার করা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর সরকার গঠনের এক বছর পূর্ণ হলো। বিগত এক বছর চেষ্টা করেছি জনগণকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে। সব ক্ষেত্রে শতভাগ সফল হয়েছি, তা দাবি করা যাবে না। কিন্তু এটুকু জোর দিয়ে বলা যায়, চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। অতীতের ভুলভ্রান্তি ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাব। সামনে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসবে। সকলের সহযোগিতায় সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা হবে।’

একাদশ জাতীয় সংসদের নেতা শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত বছর সরকার গঠনের পর জাতির উদ্দেশে ভাষণে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের শোধরানোর আহ্বান জানিয়েছিলাম। আমি সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করি। মানুষের কল্যাণের জন্য আমি যেকোনো পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করব না।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। আবারও সবাইকে সতর্ক করে দিতে চাই, দুর্নীতিবাজ যে-ই হোক, যত শক্তিশালীই হোক না কেন, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি আহ্বান থাকবে, যে-ই অবৈধ সম্পদ অর্জনের সঙ্গে জড়িত থাকুক, তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসুন। সাধারণ মানুষের “হক” যাতে কেউ কেড়ে নিতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সম্প্রসারণের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি নির্মূল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মানুষ সচেতন হলে দুর্নীতি আপনা-আপনি কমে যাবে।’

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। পবিত্র ইসলাম ধর্মের অপব্যাখ্যা করে কেউ যাতে তরুণদের বিপথে পরিচালিত করতে না পারে, সে জন্য মসজিদের ইমামসহ ধর্মীয় নেতাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যেখানে হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি থাকবে না। সকল ধর্ম-বর্ণ এবং সম্প্রদায়ের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন। সকলে নিজ নিজ ধর্ম যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালন করতে সক্ষম হচ্ছেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পররাষ্ট্রনীতির সারকথা—সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। বিশেষ করে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও সৌহার্দ্য বজায় রাখাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। আলোচনার মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সমস্যা সমাধান করা হচ্ছে। এটি আমাদের দুর্বলতা নয়, কৌশল। এ কারণেই মিয়ানমারের দিক থেকে নানা উসকানি সত্ত্বেও সে ফাঁদে পা দিইনি। আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথ থেকে সরে যাইনি। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে মামলা হয়েছে। আশা করছি, এই আদালত থেকে একটি স্থায়ী সমাধান সূত্র খুঁজে পাওয়া যাবে।’

নবমবারের মতো আওয়ামী লীগ সভাপতি পদে নির্বাচিত হওয়া শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে, জনগণের রায়ই হচ্ছে ক্ষমতার পালাবদলের একমাত্র উপায়। যেকোনো শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে আওয়ামী লীগ স্বাগত জানায়। তবে অযৌক্তিক দাবিতে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডকে বরদাশত করা হবে না। বাংলাদেশের মাটিতে এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি আর হতে দেওয়া হবে না। তিনি আরও বলেন, সংসদকে কার্যকর করতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারি-বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা সংসদকে প্রাণবন্ত করেছেন।

জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত বছর দু–একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের প্রশ্রয় দেওয়া হয়নি। জড়িতদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে প্রশাসনিক এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো মহল গুজব ছড়িয়ে অরাজকতা সৃষ্টির মাধ্যমে ফায়দা লোটার চেষ্টা করেছে। সেসব অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিয়েছি। এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বর গত বছর সারা দেশে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া সত্ত্বেও বেশ কিছু মূল্যবান প্রাণহানি ঘটেছে এই রোগে। আমি শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। এডিস মশার বিস্তার রোধে আগে থেকেই সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিতে সবাইকে নির্দেশ দিচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ২০২০ সাল জাতীয় জীবনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বছর। এ বছর উদ্‌যাপিত হতে যাচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। আগামী ১৭ মার্চ বর্ণাঢ্য উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার শুভ সূচনা হবে। ইতিমধ্যেই ২০২০-২১ সালকে মুজিব বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপনের অনুষ্ঠানমালা যুগপৎভাবে চলতে থাকবে। এই উদ্‌যাপন শুধু আনুষ্ঠানিকতাসর্বস্ব নয়, এই উদ্‌যাপনের লক্ষ্য জাতির জীবনে নতুন জীবনীশক্তি সঞ্চারিত করা।

বক্তৃতার শেষ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাঙালি জাতি বীরের জাতি। এমন জাতি পৃথিবীতে কোনো দিন পিছিয়ে থাকতে পারে না। বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। আসুন, দলমত–নির্বিশেষে সকলে মিলে তাঁর স্বপ্নের ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার জন্য নতুন করে শপথ নিই।’

প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যে গত ১১ বছরে তাঁর সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন।