ছাত্রী ধর্ষণের বিচার না পেলে অনশনে বসবেন ঢাবির উপাচার্য

আন্দোলনের মধ্যেই ‘বঙ্গবন্ধু টিচার্স ক্রিকেট লীগ’-এর উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত
আন্দোলনের মধ্যেই ‘বঙ্গবন্ধু টিচার্স ক্রিকেট লীগ’-এর উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতকে গ্রেপ্তার ও ওই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করাসহ চার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনশনে বসেছিলেন চার শিক্ষার্থী। ওই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার অর্জনে সর্বোচ্চ চেষ্টার আশ্বাস দিয়ে মঙ্গলবার রাতে তাঁদের অনশন ভাঙিয়েছেন উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। এ সময় উপাচার্য বলেন, বিচার অর্জন করতে না পারলে তিনি নিজেই অনশনে বসবেন।

গত রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার পথে কুর্মিটোলা এলাকায় ধর্ষণের শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী। তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে। এই ঘটনায় রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা হয়েছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে রোববার মধ্যরাতেই অনশনে বসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ছাত্র সিফাতুল ইসলাম। পরে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের ছাত্র ও ডাকসুর সদস্য সাইফুল ইসলাম, ইতিহাস বিভাগের ছাত্র ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল সংসদের সদস্য আবদুর রহমান এবং তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের ছাত্র মোস্তাফিজুর রহমান।

চার দফা দাবিতে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা অনশন করেন তাঁরা। চার শিক্ষার্থীর অনশন ভাঙাতে মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে রাজু ভাস্কর্যে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন সহকারী প্রক্টর। এর কিছুক্ষণ পর সেখানে আসেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান, প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক। উপাচার্য ও তাঁর সঙ্গে থাকা শিক্ষকেরা ওই চার ছাত্রকে অনশন ভাঙার অনুরোধ করলে প্রথমে তাঁরা রাজি হননি। পরে উপাচার্য ও অন্য শিক্ষকেরা তাঁদের আশ্বস্ত করেন, এই ঘটনার বিচার আদায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সর্বোচ্চ তৎপর আছে। উপাচার্য তখন বলেন, ‘যে বা যারা আমাদের ছাত্রীটিকে ধর্ষণ করেছে, সে বা তারা কোনো মানুষ নয়, নরপিশাচ। এই নরপিশাচদের বিচার অর্জন করতে না পারলে আমি নিজেই অনশনে বসব।’ এরপর উপাচার্য জুস খাইয়ে চার শিক্ষার্থীর অনশন ভাঙান। পরে গুরুতর অসুস্থ মোস্তাফিজুরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অন্য তিন অনশনকারী শিক্ষার্থীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।

অনশন ভাঙানোর পর উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ তৎপর আছি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। ধর্ষককে বিচারের আওতায় আসতেই হবে।’

উপাচার্য ও প্রক্টরের উপস্থিতিতে অনশন ভাঙেন চার শিক্ষার্থী। ছবি: আসিফ হাওলাদার
উপাচার্য ও প্রক্টরের উপস্থিতিতে অনশন ভাঙেন চার শিক্ষার্থী। ছবি: আসিফ হাওলাদার

অনশন করা চার ছাত্র বলেন, তাঁরা সমাজকে বদলাতে চান। তাঁদের অনশন শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ষিত ছাত্রীর বিচারের জন্য নয়, বরং দেশে যত ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ও ঘটছে, সব ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের জন্য। ধর্ষককে গ্রেপ্তার ছাড়াও তাঁদের অন্য দাবিগুলো ছিল- ধর্ষণের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়কে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করতে হবে, ধর্ষণের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ নিতে হবে এবং দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার করে অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে।

এর আগে উত্তাল আন্দোলনের মধ্যেই মঙ্গলবার ‘বঙ্গবন্ধু টিচার্স ক্রিকেট লীগ’-এর উদ্বোধন করে সমালোচনার মুখে পড়েন উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। আন্দোলনের মধ্যে উপাচার্যের ক্রিকেট লিগ উদ্বোধনের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে ছবিটি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। ছবিটি শেয়ার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উপাচার্যের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ।