শ্রীপুরে বন্ধের পথে তিনটি ক্লিনিক

জীর্ণ টিনের ঘর থেকে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন একজন সিএইচসিপি। রোববার বেলা ১১টায় শ্রীপুরের রাজাবাড়ি ইউনিয়নের কাফিলাতলী কমিউনিটি ক্লিনিকে।  ছবি: প্রথম আলো
জীর্ণ টিনের ঘর থেকে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন একজন সিএইচসিপি। রোববার বেলা ১১টায় শ্রীপুরের রাজাবাড়ি ইউনিয়নের কাফিলাতলী কমিউনিটি ক্লিনিকে। ছবি: প্রথম আলো

ভবনের অভাবে বন্ধ হওয়ার পথে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও একটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র। এগুলোর বেশির ভাগই দীর্ঘদিন ধরে কারও বাড়ির বারান্দায় বা কারও জীর্ণ ঘরে পরিচালিত হচ্ছে। গত শনিবার দুপুরে একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের ধরনা ভেঙে পড়ে আহত হয়েছেন এক কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)।

এসব কমিউনিটি ক্লিনিক সূত্রে জানা গেছে, পরিত্যক্ত ভবনের পরিবর্তে নতুন ভবন তৈরির আশ্বাস এসেছে বারবার। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি এখনো।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মইনুল হক খান সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই উপজেলায় তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবন পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। এ ছাড়া একটি ইউনিয়ন জনস্বাস্থ্য কেন্দ্র দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। ফলে বাধ্য হয়ে পাশের অন্য কোনো বাড়িতে উঠতে হয়েছে। এই চারটির মধ্যে একটি দীর্ঘদিন টং দোকানে চালাতে হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ভবন–সংকটের কারণে সেন্টারগুলো বন্ধ হওয়ার পথে।

লোহাগাছ এলাকার কমিউনিটি ক্লিনিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিএইচসিপি ফারজানা আক্তার ধরনার আঘাতে আহত হয়েছেন। তিনি এখন শয্যাশায়ী। তিনি জানান, মূল ভবনটি পরিত্যক্ত হওয়ায় দীর্ঘ ছয় বছর ধরে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম চলছে স্থানীয় একটি ক্লাব ঘরে। শনিবার বেলা দেড়টার দিকে হঠাৎ তাঁর মাথায় ভাঙাচোরা ঘরটির ধরনা ভেঙে পড়ে। এতে তিনি আহত হন। রক্ত পড়তে থাকে। তিনি বলেন, ‘এভাবে কোনো মানুষ থাকে না। যে মানবেতর অবস্থায় সেবা দিচ্ছি, এটাকে জীবন বলে না।’

রোববার বেলা ১১টায় কাফিলাতলী কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, পুরোনো টিনের তৈরি একটি ঘরে বসে আছেন জোসনা মল্লিক। তিনি ওই ক্লিনিকের সিএইচসিপি। জোসনা মল্লিক বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিকটি ১০–১২ বছর ধরে পরিত্যক্ত। ভবন পরিত্যক্ত হওয়ার পর কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম প্রায় তিন বছর চলেছে একটি টংদোকানে। এরপর সেটি পাশের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েক দিনের মধ্যেই ক্লিনিকের জমিদাতা তাঁর অন্য একটি জমিতে নার্সারির ভেতর টিনের ঘরে তাঁদের বসতে দেন।

লতিফপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি ভাবনা রানী প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৩ সাল থেকেই তাঁদের কমিউনিটি ক্লিনিকটির মূল ভবন পরিত্যক্ত। এরপর থেকে অন্তত সাতবার বিভিন্ন জায়গায় অফিস পরিবর্তন করতে হয়েছে। আজ এ–বারান্দায় তো কাল ও–বারান্দায় অফিসের মালামাল নিয়ে উঠতে হয়েছে। তিনি বর্তমানে জমিদাতার বাড়ির বারান্দায় জিনিসপত্র নিয়ে উঠেছেন। কিন্তু সেখানে বিদ্যুৎ, পানি ও শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই।

বরমী ইউনিয়ন জনস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপসহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, তাঁদের কেন্দ্রটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ভবনের ছাদে বটগাছ গজিয়েছে। বটগাছের শিকড়ের কারণে দেয়াল ফেটে গেছে। এমন পরিবেশেই সেবা দিতে হচ্ছে তাঁদের। তিনি বলেন, জায়গা আছে, শুধু ভবন দরকার।

এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তা মইনুল হক খান বলেন, ‘ভবন নেই। মানুষের বাড়ির বারান্দায় ক্লিনিক চালাতে হচ্ছে। এর মধ্যে একজন সিএইচসিপি আহত হয়েছেন। খুব দুঃখজনক ঘটনা এটি। কয়েক মাস আগে তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শনে এসেছিলেন কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউনুস আলী প্রামাণিক। তিনি এই তিনটি ক্লিনিকের নতুন ভবন অতি দ্রুত করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। এর মধ্যে লতিফপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবনের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। কাজ শুরু হওয়ার কথা।’

কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউনুস আলী প্রামাণিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ওই ক্লিনিক তিনটি পরিদর্শন করে অতি জরুরি ভিত্তিতে সেখানে ভবন তৈরির জন্যস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু তারা কেন এখনো উদ্যোগ নেয়নি, সে বিষয়ে খোঁজ নেব। একজন কর্মী সেখানে আহত হয়েছেন বলে শুনেছি। আমি খুবই মর্মাহত। এ বিষয়ে আমাদের চেয়ারম্যান মহোদয়ের সঙ্গেও কথা বলব। এখানে গড়িমসি হচ্ছে কেন দেখব।’