ঢাকার দুই সিটিতে কাল থেকে মাঠে গড়াবে ভোটের লড়াই

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন আজ বৃহস্পতিবার। কাল শুক্রবার প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু করতে পারবেন প্রার্থীরা। এর মধ্য দিয়ে মাঠে গড়াবে ভোটের লড়াই। ভোট গ্রহণ করা হবে ৩০ জানুয়ারি।

নির্বাচন সামনে রেখে গতকাল বুধবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে বৈঠক করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল। তারা বলেছে, আওয়ামী লীগ একটি সুন্দর, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও স্বচ্ছ নির্বাচন চায়।

অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, ইসির সাফল্য অনেকটা নির্ভর করছে ভোটারদের উপস্থিতির ওপর। তিনি ভোটার উপস্থিতির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা কামনা করেন।

গত ২২ ডিসেম্বর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের তফসিল ঘোষণা করে ইসি। ৩১ ডিসেম্বর ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। যাচাই–বাছাই শেষে এখন পর্যন্ত উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে প্রার্থী আছেন ছয়জন। উত্তর সিটিতে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম আর বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। এখানে সাধারণ কাউন্সিলর পদে এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে বৈধ প্রার্থী যথাক্রমে ৩৫৯ ও ৮৭ জন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে মেয়র পদে প্রার্থী আছেন সাতজন। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নৌকা নিয়ে লড়ছেন শেখ ফজলে নূর তাপস। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষের প্রার্থী ইশরাক হোসেন। এই সিটিতে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪৩৪ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১০০ জন প্রার্থী আছেন।

আজ প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার পর দুই সিটিতে প্রার্থীর সংখ্যা কমতে পারে। আজ বিকেলে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা তৈরি হবে। 

দুই সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে দলের সমর্থন না পেয়েও আওয়ামী লীগের যেসব নেতা এখনো প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি, তাঁদের আজকের মধ্যে তা প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। কেউ প্রত্যাহার না করলে তাঁর বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দক্ষিণের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব মো. হুমায়ূন কবীর।

সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আচরণবিধি অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দের আগে নির্বাচনী প্রচারের সুযোগ নেই। ফলে এখনো মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারে নামেননি। পোস্টার, ফেস্টুন সাঁটানো বা ভোট চেয়ে মাইকিং—এসব শুরু হয়নি। তবে প্রার্থীদের অনেকে ঘরোয়া বিভিন্ন অনুষ্ঠান করছেন। কাল শুক্রবার থেকে প্রচার শুরু হবে।

তবে নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা নির্বাচনের প্রচার বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না। অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির তালিকায় আছেন প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা সমমর্যাদার পদে থাকা ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র। তবে তাঁরা সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার হলে ভোট দিতে পারবেন।

বিএনপি মহা সুবিধায়: আ.লীগ

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গতকাল দুপুরে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসির সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠক শেষে এইচ টি ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, দুই সিটি করপোরেশনেই এবার ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেওয়া হবে। তাঁরা চান, নির্বাচন সুন্দর, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও স্বচ্ছ হোক। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য তাঁরা ইসিতে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে যা যা সহায়তা দরকার, সরকার সবই দেবে।

এক প্রশ্নের জবাবে এইচ টি ইমাম বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সমান্তরাল পরিস্থিতির ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি অনেক ওপরে। আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ সাংসদ ঢাকায় থাকলেও আচরণবিধির কারণে প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। আওয়ামী লীগের মুখে কুলুপ আঁটা। বিপরীতে বিএনপির জন্য মহা সুবিধা। 

দুই সাংসদ তোফায়েল আহমেদ ও আমির হোসেন আমুকে প্রধান করে দুটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা আচরণবিধির লঙ্ঘন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে এইচ টি ইমাম বলেন, তাঁরা নির্বাচনের কার্যক্রম সমন্বয় করবেন, প্রচার করবেন না। প্রচার শুরু হলে তখন এ বিষয়ে দেখা যাবে।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মশিউর রহমান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, নির্বাহী সদস্য রিয়াজুল কবির প্রমুখ প্রতিনিধিদলে ছিলেন।

আইনের বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়: মাহবুব

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকে ইসির পক্ষে নেতৃত্ব দেন মাহবুব তালুকদার। তাঁর সঙ্গে ছিলেন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী এবং উত্তর সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাশেম ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন।

বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণ নিয়ে প্রয়োজনীয় আলোচনা হয়েছে। ইসি বলেছে, বিদ্যমান আইনে যা আছে, তার বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়। অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা কেউ নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে এমপি, মন্ত্রীরা পড়েন। তাঁরা শুধু নির্বাচনী প্রচার নয়, নির্বাচনী কার্যক্রমেও অংশ নিতে পারবেন না।