ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, নেই কোনো ছুটি

সপ্তাহের সাত দিনই কাঠের সরু সেতু পাড় হয়ে জাহাজ থেকে পণ্য নামাতে হয় শ্রমিকদের। সার, সিমেন্ট, কয়লার গুঁড়া শরীরে লাগলেও নেই কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা। সম্প্রতি পাবনার বেড়া উপজেলার নগরবাড়ী নৌবন্দরে।  ছবি: প্রথম আলো
সপ্তাহের সাত দিনই কাঠের সরু সেতু পাড় হয়ে জাহাজ থেকে পণ্য নামাতে হয় শ্রমিকদের। সার, সিমেন্ট, কয়লার গুঁড়া শরীরে লাগলেও নেই কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা। সম্প্রতি পাবনার বেড়া উপজেলার নগরবাড়ী নৌবন্দরে। ছবি: প্রথম আলো

পাবনার বেড়া উপজেলার নগরবাড়ী নৌবন্দরে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছেন প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক। এসব শ্রমিক কয়লার গুঁড়া, রাসায়নিক সার, সিমেন্টসহ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন পণ্য মাথায় করে বহন করেন। জাহাজ থেকে এসব পণ্য নামাতে হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের সরু সিঁড়ি দিয়ে। অভিযোগ উঠেছে, শ্রম আইন লঙ্ঘন করে সপ্তাহের সাত দিনই শ্রমিকদের দিয়ে এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

 নগরবাড়ী নৌবন্দরটি বর্তমানে উত্তরাঞ্চলের প্রধান পণ্য সরবরাহের মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। এ নৌবন্দরের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলায় সার, কয়লা, সিমেন্ট, পাথর সরবরাহ হয়ে থাকে। এসব পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম, মোংলা, নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২টি জাহাজ এ নৌবন্দরে এসে ভেড়ে। এসব জাহাজ থেকে মাথায় করে পণ্য খালাসের পর তা ট্রাকে তুলে দেওয়ার কাজ করে থাকেন প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সপ্তাহের সাত দিনই তাঁরা বিরামহীন এ কাজটি করে থাকেন।

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করেন। কিন্তু সপ্তাহে কেউ এক দিন ছুটি কাটালে তাঁকে আর কাজে নেওয়া হয় না।

কয়েকজন শ্রমিক জানান, তাঁরা যেসব পণ্য বহনের কাজ করে থাকেন, তার মধ্যে কয়লার গুঁড়া, রাসায়নিক সার ও সিমেন্ট স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এসব বহনের সময় নেওয়া হয় না স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ কোনো ব্যবস্থা। ফলে মাথায় করে বহনের সময় সহজেই কয়লার গুঁড়া ও সিমেন্টের ধুলা শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে ঢুকে পড়ে তাঁদের ফুসফুসে। আবার সার বহনের সময় ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান পুরো শরীরে লেগে যায়। এতে করে যক্ষ্মা ও ক্যানসারের ঝুঁকিতে আছেন তাঁরা। কয়েকজন শ্রমিক জানান, জাহাজ থেকে পণ্য নামাতে হয় সরু কাঠের সিঁড়ি দিয়ে। পা পিছলে পড়ে গিয়ে প্রায়ই শ্রমিকেরা আহত হন। 

শ্রমিকদের অভিযোগ, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এই কাজ করে শ্রমিকেরা প্রতিদিন গড়ে ৬০০ টাকা মজুরি পান। সপ্তাহেও কোনো ছুটি থাকে না। ছুটির কথা বললে নৌবন্দরের ইজারাদার কাজ থেকে ছাঁটাই করার হুমকি দেন। বাধ্য হয়ে কাজ করতে গিয়ে স্বাভাবিক জীবন হারাতে বসেছেন তাঁরা।

সম্প্রতি বন্দরটিতে সরেজমিনে আবদুল জলিল নামের এক শ্রমিক বলেন, সাপ্তাহিক ছুটির বিষয়টি নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। শ্রমিকদের ঝুঁকিপূর্ণ পণ্য বহনের সময় নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়টিও বলা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ শুধু বলেছে, তারা বিষয়টি দেখবে।

নৌবন্দরের ইজারাদার এ এম রফিকউল্লাহ বলেন, বছরের এই সময়ে পণ্য পরিবহনের প্রচণ্ড চাপ থাকে। সাপ্তাহিক ছুটির কারণে জাহাজ থেকে পণ্য নামানো এক দিন বন্ধ থাকা মানেই পণ্য ও যানবাহনের জট লেগে যাওয়া। কিন্তু এরপরও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। বন্দরের শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও অবকাঠামো উন্নয়নের কাজও চলছে বলে জানান রফিকউল্লাহ।

শ্রমিকদের সাপ্তাহিক ছুটি না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পাবনা অঞ্চলের শ্রম পরিদর্শক মিজানুর রহমান বলেন, ‘নগরবাড়ীর শ্রমিকদের সমস্যা নিয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’