গাইবান্ধায় হাত-পা বেঁধে শিশুকে নির্মম নির্যাতন
গরু চুরির অপবাদে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে রাফিকুল ইসলাম (১৩) নামের এক শিশুকে হাত-পা বেঁধে বেধড়ক মারধর ও নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শনিবার সকালে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধুমাইটারি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর অসুস্থ শিশুটিকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ধুমাইটারি গ্রামে একটি গরু চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই রাতে ওই গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে রাফিকুল ইসলামকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই গ্রামের ফজলু মিয়া, ইয়াজল ও নাজমুল নামের তিন ব্যক্তি তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যান। তাঁরা রাফিকুলকে গরু চুরির অপবাদ দিয়ে সারা রাত ফজলু মিয়ার বাড়িতে বেঁধে রাখেন। পরের দিন সকাল নয়টায় রাফিকুলকে একই গ্রামের আফসার প্রামাণিকের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে হাত-পা বেঁধে অমানবিক নির্যাতন ও বেধড়ক মারধর করা হয়। ঘটনাটির ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি সবার নজরে আসে।
ভিডিওতে দেখা যায়, একজন রাফিকুলকে উল্টো করে ধরে আছেন। একজন রাফিকুলের মাথা দুই পায়ের ফাঁকে আটকে দিয়ে পা দুটি ওপরের দিকে ধরে রাখেন। পরে একজন একজন করে রাফিকুলের পায়ের তালুতে ও কোমরে লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন। এ সময় শিশুটি ‘ওরে বাবা’, ‘ওরে মা’ ও ‘বাঁচাও আমাকে’ বলে চিৎকার দিতে থাকে। তখন গ্রামের মানুষ চারদিকে গোল হয়ে বসে মারধর উপভোগ করছিল। কেউ রাফিকুলকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। বরং রাফিকুলের দু-একজন আত্মীয়স্বজন এগিয়ে গেলে তাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ধুমাইটারি গ্রামের তনু প্রামাণিক, তাজু প্রামাণিক, তুহিন প্রামাণিক, লেলিন প্রামাণিক, সাবু প্রামাণিক, মুসা প্রামাণিকসহ অসংখ্য লোক রাফিকুলকে পর্যায়ক্রমে উল্টো করে ধরে রেখে মারধর করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন শিশুটি কোনো কথা বলতে পারছে না। অপরিচিত কাউকে দেখলেই ভয়ে আঁতকে উঠছে। ঘটনার বর্ণনা জানতে চাইলে শুধু দুই চোখ দিয়ে পানি ঝরছিল তার।
এ ঘটনায় শিশুটির বড় ভাই রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে গতকাল রোববার রাতে সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা করেন। ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১২ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে মামলাটি করা হয়। ওই রাতেই পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার দুজন হলেন ধুমাইটারি গ্রামের আইজল হক ও বাবলু মিয়া।
এ বিষয়ে আজ সোমবার দুপুরে সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহিল জামান প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান চলছে।