টাকা ও মোবাইল ফোন বাগাতে বন্ধুকে হত্যা: পুলিশ

ছবিটি প্রতীকী
ছবিটি প্রতীকী

একই গ্রামে পাশাপাশি বাড়ি সাইদুর রহমান ও মো. রানার। সাইদুর গ্রাম সম্পর্কে রানার ভাতিজা হলেও সমবয়সী হওয়ার কারণে তাঁরা ছিলেন বন্ধু। টাকার জন্য এই বন্ধুকেই খুন করেছেন বলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য দিয়েছেন রানা। ঘটনাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার।

পুলিশের ভাষ্য, একদিন সিগারেট কিনতে সাইদুরের মানিব্যাগ খুললে সেখানে ‘অনেক’ টাকা দেখতে পান রানা। ওই টাকা ও মুঠোফোন হাতিয়ে নিতে সাইদুরকে খুনের পরিকল্পনা করেন রানা। নিখোঁজের চার দিন পর সেপটিক ট্যাংক থেকে সাইদুরের (১৯) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় রানাকে (২০) গ্রেপ্তার করা হয়। 

গত ২৯ ডিসেম্বর রাত আটটার পর থেকে নিখোঁজ হন সাইদুর। ২ জানুয়ারি সকালে কসবা পৌর শহরের ইমামপাড়াসংলগ্ন একটি পরিত্যক্ত সেপটিক ট্যাংক থেকে তাঁর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় সাইদুরের মা হনুফা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন।

আজ সোমবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে পুলিশ লাইনসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জানান, নিহত সাইদুর কাঞ্চনমুড়ি এলাকার হুমায়ুন কবিরের ছেলে। সাইদুর একজন সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক ছিলেন। গ্রেপ্তার হওয়া রানা পেশায় রাজমিস্ত্রি।

গতকাল রোববার রাতে রানাকে উপজেলার শীতলপাড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রানার কাছ থেকে সাইদুরের ব্যবহৃত মুঠোফোনটি উদ্ধার করা হয়। সাইদুর ও রানা একসঙ্গে চলাচল করলেও এলাকায় চুরি ও নারী–সংক্রান্ত এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে রানা অন্য এলাকায় চলে যান। রানা উপজেলার শীতলপাড়ায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। একই সঙ্গে তিনি মাদকদ্রব্য কেনাবেচা করতেন। মাঝেমধ্যে বাড়ি যেতেন।

পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বলেন, মামলা করার পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদোন্নতিপ্রাপ্ত) আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে কসবা থানা-পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করে। ২৯ ডিসেম্বর বিকেল পাঁচটার দিকে রানা উপজেলার পৌর এলাকার সীমান্তে সিএনজিচালিত অটোরিকশার স্টেশনে যান। ওই সময় সাইদুরকে অটোরিকশার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন রানা। দুজনের কথাবার্তা বলার একপর্যায়ে সাইদুর রানাকে দুটি সিগারেট কিনে আনতে বলেন। রানা টাকা চাইলে সাইদুর মানিব্যাগ খুলে ১০ টাকা বের করে দেন। সে সময় সাইদুরের মানিব্যাগে ‘অনেক’ টাকা দেখতে পান রানা। আর সাইদুরের কাছে চার-পাঁচ মাস আগে কেনা একটি মুঠোফোনও ছিল।

পুলিশ সুপার বলেন, সাইদুরের মানিব্যাগের টাকা ও মুঠোফোনের প্রতি রানার লোভ হয়। টাকা ও ফোন হাতিয়ে নেওয়ার জন্য তিনি সাইদুরকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। রানা সাইদুরকে প্রস্তাব দেন, রাতে এক লোক ৫০০ ইয়াবা বড়ি নিয়ে আসবে। ইয়াবাগুলো উপজেলার নোয়াগাঁও পৌঁছে দিলে তাঁদের ৪ হাজার টাকা দেওয়া হবে। ওই প্রস্তাবে রাজি হয়ে সাইদুর অটোরিকশায় করে রানাকে পৌঁছে দেবেন বলে জানান। তখন রানা বলেন অটোরিকশা লাগবে না। তাঁরা হেঁটে পৌঁছাবেন। এরপর সাইদুর অটোরিকশা বাড়িতে রেখে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় কাঞ্চনমুড়ির ড্রেজার মাঠে যাওয়ার উদ্দেশে রানার সঙ্গে রওনা হন।

রানার বরাতে পুলিশ সুপার আরও জানান, ড্রেজার মাঠে পৌঁছে সাইদুর মুঠোফোনে এক মেয়ের সঙ্গে ১৫-২০ মিনিট কথা বলেন। ওই সময় মাঠ থেকে লাউগাছের বাঁশের খুঁটি তুলে পেছন থেকে সাইদুরের মাথায় আঘাত করেন রানা। সাইদুর মাটিতে পড়ে গেলে তাঁকে জাপটে ধরে গলায় মাফলার পেঁচিয়ে ধরেন। সাইদুর নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলে ক্ষুর দিয়ে তাঁর গলায় আঘাত করে হত্যা করেন। সাইদুরের মানিব্যাগ ও মুঠোফোন নিজের কাছে রেখে লাশ মাঠের পাশের পরিত্যক্ত সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেন রানা। ক্ষুরটিও ওই ট্যাংকে ফেলে দেন। ১ জানুয়ারি রানা ট্রেনে করে কুমিল্লায় নিজের ভাই সুজনের কাছে চলে যান। সেখানে দুই দিন থাকেন। পরে সেখান থেকে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে এক কলেজের ভবন নির্মাণের কাজে যোগ দেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন ও কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লোকমান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার আগমুহূর্তে সাইদুর তাঁর প্রেমিকার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলছিলেন। ওই সময় পেছন দিক থেকে রানা তাঁকে মাথায় আঘাত করলে মুঠোফোনটি সাইদুরের হাত থেকে নিচে পড়ে যায়। তবে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়নি। ফোনের কললিস্ট ধরে সাইদুরের প্রেমিকাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। পরে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে রানাকে গ্রেপ্তার করা হয়। রানাকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনের সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রেজাউল কবির, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কসবা সার্কেল) আবদুল করিম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর দপ্তর) আবু সাঈদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) মেহেদী হাসান, পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলাউদ্দিন, বিশেষ শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ডিআইও-১) ইমতিয়াজ আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।