৩০ কিলোমিটারে ঘের দিয়ে মাছ শিকার

নওগাঁর আত্রাই নদে ঘের দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে। গতকাল মান্দা উপজেলার লক্ষ্মীরামপুর এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
নওগাঁর আত্রাই নদে ঘের দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে। গতকাল মান্দা উপজেলার লক্ষ্মীরামপুর এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

নওগাঁর মান্দা উপজেলায় আত্রাই নদের ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গাছের ডালপালা ও বাঁশ ফেলে এর চারপাশে জাল দিয়ে ঘিরে মাছ শিকার করা হচ্ছে। ফলে নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ঘেরগুলোয় মাছের খাবার দেওয়ায় স্থানীয় লোকজন নদের পানি ব্যবহার করতে পারছে না। প্রাকৃতিক মৎস্যসম্পদ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হলেও প্রশাসন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

আত্রাই নদ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুঘাট এলাকা হয়ে নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার শিমুলতলী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সেখান থেকে নওগাঁর পত্নীতলা, মহাদেবপুর, মান্দা ও আত্রাই উপজেলা হয়ে নাটোরের চলনবিলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

আত্রাই নদের মহাদেবপুর উপজেলা সদর থেকে মান্দার মিঠাপুর পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদের প্রায় শতাধিক স্থানে মাছের ঘের তৈরি করা হয়েছে। নদের কোথাও তীরবর্তী, কোথাও কোথাও মাঝ–নদে ডালপালা, বাঁশ ফেলে ঘের তৈরি করা হয়েছে। কোথাও কোথাও নদে আড়াআড়িভাবে বাঁশের বেড়া ও জাল দিয়ে এমনভাবে মাছের ঘের তৈরি করা হয়েছে যে সেখানে নৌ চলাচলের কোনো পথও নেই। মহাদেবপুরের শিবগঞ্জ ঘাট থেকে মান্দার ত্রিমোহনী ঘাট, মান্দার বানডুবি থেকে মিঠাপুর এলাকায় সবচেয়ে বেশি ঘের দেখা গেছে।

নদতীরবর্তী স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুরুতে গাছের ডালপালা, কচুরিপানা ও বাঁশ ফেলা হয়। এরপর ওই স্থানে প্রচুর পরিমাণে মাছের খাবার ফেলার পর মাছ চলে এলে চারদিকে জাল দিয়ে ঘিরে মাছ আটকানো হয়। একে বলে ঝোপ। পরে এর ভেতরে চলে পোনাসহ মাছ শিকার।

উপজেলার পাঠাকাঠা এলাকার একজন মৎস্যজীবী বলেন, উন্মুক্ত নদে একসময় অনেক মাছ ছিল। নদে প্রচুর মাছ ধরা পড়ত। কিন্তু আট-দশ বছর ধরে নদে ঠিকমতো নামতে পারেন না তাঁরা। যেখানে-সেখানে ঝোপ তৈরি করায় মাছ ধরার নৌকা চালাতে পারেন না। ঝোপের আশপাশে মাছ ধরতে তাঁদের বাধা দেওয়া হয়। 

স্থানীয় বাসিন্দা ও মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, লক্ষ্মীরামপুর গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য ইউনুস আলী, একই গ্রামের আওয়ামী লীগের সমর্থক নজরুল ইসলাম ও মোজাম্মেল হক, ফেরিঘাট এলাকার মোহাম্মদ আলী, জুয়েল রানা, জোতবাজার এলাকার প্রদীপ কুমার, ফিরোজ হোসেনসহ ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতা-কর্মী মাছ শিকারের সঙ্গে জড়িত। গতকাল মঙ্গলবার ইউনুস আলী, নজরুল ইসলাম ও প্রদীপ কুমারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা সবাই নদে ঘের দিয়ে মাছ শিকারের কথা শিকার করেন।

জানতে চাইলে মান্দা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাইকিং করে নদে ঘের বানিয়ে মাছ শিকার করতে নিষেধ করা হচ্ছে। ঘেরগুলো সরিয়ে নিতে বলা হচ্ছে। নির্দেশনা না মানলে প্রশাসনের সহায়তায় প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফিরোজ আহাম্মেদ বলেন, ‘নদ-নদী দখল করে মাছ আটকে ঘের বা ঝোপ দেওয়া মৎস্য আইনে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এতে মৎস্যসম্পদ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। শিগগিরই প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে এসব দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’