জনগণের আদালতে আ.লীগের বিচার হবে: মির্জা ফখরুল

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি

জনগণের আদালতে আওয়ামী লীগের বিচার হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ বুধবার বিকেলে তিনি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কুমারপুর বিদ্যালয়ে বালিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আজ দেশের সব চিন্তাশীল মানুষ বলছেন, দেশ একেবারেই ভেঙে পড়েছে। দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। এই সরকারের কেউ সমালোচনা করতে পারেন না। খালেদা জিয়া সারা জীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে চলেছেন, তাঁকে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। প্রচলিত যে বিধান আছে, তাতে জামিন পাওয়া যায়। কিন্তু তাঁকে দেওয়া হয়নি। এর একটাই কারণ, দেশনেত্রী যদি বাইরে থাকেন, তবে সরকারের অপকর্মের প্রতিবাদ হবে। জনগণ রাস্তায় বেরিয়ে আসবে।

ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের বিচার হবে। বিচার হবে জনগণের আদালতে। বিচার হবে এ কারণে যে তারা এই বাংলাদেশকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চলছে। বিচার হবে এ কারণে যে তারা এ সমাজকে ধ্বংস করে দিয়েছে।

বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ১৯৭১ সালে বলেছিল, “আমরা যদি ক্ষমতায় আসতে পারি, দেশ যদি স্বাধীন হয়, তবে এ দেশে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র উপহার দেব। যে দেশে গণতন্ত্র থাকবে আর জনগণের ইচ্ছার ওপর ভিত্তি করে সরকার গঠিত হবে।” আওয়ামী লীগ তখনো প্রতারণা করেছে। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সালের মধ্যে এমন এক অবস্থা সৃষ্টি করেছিল, এ দেশে কোনো তরুণ-কিশোরেরা থাকত না। তখনো তারা বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করে সরকার পরিচালনা করার চেষ্টা করেছিল। যখন পারেনি, তখন একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। তারাই ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে একইভাবে প্রথমে সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করে; ক্ষমতায় চিরদিন টিকে থাকার জন্য নতুন আঙ্গিকে ছদ্মবেশী বাকশাল করেছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গত এক বছরে গণতন্ত্রের ন্যূনতম যেটুকু বাকি ছিল, সেটাও আওয়ামী লীগ শেষ করে দিয়েছে। এমন কোনো নির্বাচন নেই, যেখানে শুধু তারাই (আওয়ামী লীগ) ভোট দেয় আর কেউ ভোট দেয় না। ভোটারদের কেন্দ্রে যেতেই দেয় না। লাঠিসোঁটা, বন্দুক, পিস্তল দিয়ে ভোটারদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এ দেশটা সম্পূর্ণভাবে দুর্বৃত্তদের হাতে, সন্ত্রাসীদের হাতে ও একটি দল যারা সন্ত্রাস করছে, তাদের হাতে চলে গেছে।’

সরকারের দুর্নীতি প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, এ সরকারের দুর্নীতির কথা কল্পনা করা যায় না। তারা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দেশকে পঙ্গু করে দিয়েছে। সরকারের মন্ত্রী-নেতারা যেভাবে কথা বলেন, তাতে মনে হয় যে তাঁরাই শুধু গণতন্ত্রের চর্চা করেন, আর কেউ করে না। তাঁরাই দেশপ্রেমিক, আর কেউ দেশপ্রেমিক নয়।

সংসদে চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচন নিয়ে দেওয়া তোফায়েল আহমেদের বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তোফায়েল সাহেব বলেছেন চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচন খুব ভালো হয়েছে। তোফায়েল সাহেব, যিনি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের অন্যতম নেতা ছিলেন, যাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে দেশের মানুষ যুদ্ধে গেছে, সেই মানুষ যখন গণতন্ত্র নিয়ে মিথ্যাচার করেন, তখন তাঁর প্রতি আমাদের করুণা হয়।’

সরকারের বিভিন্ন উৎসব পালনের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর হতে যাচ্ছে। আর এ সরকার শুধু উৎসব করছে। কত ধরনের উৎসব? আর সাধারণ মানুষ কষ্টে, যন্ত্রণায় আর নির্যাতনে দিনাতিপাত করছে। যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, যারা সুস্থ দেশ গড়ে তুলতে চায়, তাদের আজকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে নিক্ষেপ করা হচ্ছে। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করার জন্য এক লাখের ওপরে মামলা দেওয়া হয়েছে আর আসামি করা হয়েছে ৩৬ লাখ মানুষকে।’