'ধর্ষণ করে হত্যার পরও স্বাভাবিক ছিলেন বাসচালক সোহেল'

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

১৯ বছর বয়সী তরুণী মমতা আক্তার বাসে ওঠার পর সঙ্গে সঙ্গে বাসচালক সোহেল খান বাসের বাতি নিভিয়ে দেন। এরপর বাসের ভেতর ফেলে মমতাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। শেষে লাশ রাস্তার পাশের একটা জঙ্গলে ফেলে রাখা হয়। ঢাকার সাভারের ধামরাইয়ে মমতাকে হত্যার দায় স্বীকার করে দেওয়া বাসচালক সোহেল খানের জবানবন্দিতে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

১০ জানুয়ারি ধামরাইয়ের হিজলীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশের জঙ্গল থেকে মমতা আক্তারের লাশ উদ্ধার করা হয়। মমতা ধামরাইয়ের বিলট্রেড ফ্যাক্টরির শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধামরাই থানার পরিদর্শক রাসেল মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, মমতা যখন বাসে ওঠেন, তখন বাসের ভেতর আর কেউ ছিলেন না। বাসে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বাসের সব লাইট নিভিয়ে ফেলেন বাসচালক সোহেল। এরপর তরুণীকে ধর্ষণ করেন তিনি। সবাইকে বলে দেবেন, এই ভয়ে মমতাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন সোহেল। একপর্যায়ে লাশ পাশের জঙ্গলে ফেলে দেন। মমতাকে ধর্ষণের পর হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে এমনই জবানবন্দি দিয়েছেন আসামি সোহেল।

মমতার বাড়ি ধামরাইয়ে। মা-বাবার সঙ্গে থেকে ওই কারখানায় কাজ করতেন। কারখানার বাসে করে তিনি আসা-যাওয়া করতেন। মমতার ভাই আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মমতার সেদিন (১০ জানুয়ারি) অফিসে কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল সকাল ছয়টায়। যে কারণে রাত সাড়ে চারটার সময় মাকে সঙ্গে নিয়ে মমতা কাঁঠালিয়া মান্নান মিয়ার রাইসমিলের সামনে আসেন। তখন কারখানার বাসটি আসে। বাসের ভেতর আর কেউ ছিলেন না। তাঁর মা মমতাকে কারখানার বাসেই উঠিয়ে দেন। অন্যান্য দিনের মতো মমতা দুপুরে বাসায় আসেননি। তবে বিকেলের পর থেকে পরিবারের লোকজন তাঁর খোঁজখবর শুরু করেন। থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

ধামরাই থানার পরিদর্শক রাসেল মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, মমতা কোনো মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন না। তখন তাঁর খোঁজ করার জন্য মমতার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। জানতে পারেন, মমতা যখন বাসে ওঠেন, তখন আর কেউ বাসে ছিলেন না। যে কারণে তাঁরা বাসচালক সোহেল খানকে সন্দেহ করেন। কিন্তু মমতার খোঁজ তখনো মেলেনি। আশপাশের সব স্থানে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে রাত ১১টার দিকে মমতার লাশের সন্ধান পাওয়া যায়।

রাসেল মোল্লা আরও বলেন, মমতা যে কারখানায় কাজ করেন, সেই কারখানাতে চাকরি করেন সোহেল। তাঁর মুঠোফোন সংগ্রহ করেন। মোবাইল ফোন বন্ধ পান। এরপর সোহেলকে তাঁর শ্বশুরবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন সোহেল মমতাকে ধর্ষণ করে খুন করার কথা স্বীকার করেন।

ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজিএম) আদালতে দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামি সোহেলের মুখে নখের আঁচড় রয়েছে। তাঁর ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলে আছে কামড়ের দাগ।

পুলিশ কর্মকর্তা রাসেল মোল্লা বলেন, ‘মমতাকে খুন করার পর স্বাভাবিক ছিলেন বাসচালক সোহেল খান। খুন করার পর আবার বাসে করে কারখানার অন্য শ্রমিকদের নিয়ে যান। দুপুরের পর আবার সেই শ্রমিকদের বাসে করে যাঁর যাঁর গন্তব্যে দিয়ে আসেন। আগের স্ত্রীর সঙ্গে সোহেল খানের বিচ্ছেদ হয়েছে। সাত মাস আগে আবার একটি বিয়ে করে শ্বশুরবাড়িতে থাকছিলেন তিনি। তাঁর স্বভাবচরিত্র খুবই খারাপ।’ অল্প সময়ের ব্যবধানে আদালতে এই মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

পুলিশ ও আদালত সূত্র বলছে, যে বাসের ভেতরে ফেলে মমতাকে খুন করা হয়, সেই বাসটি মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করেছে পুলিশ।