কাউন্সিলর পদে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী ৬৫

ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে কেবল আওয়ামী লীগ নয়, দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিকেও ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। ১২৯ ওয়ার্ডের মধ্যে ৪৬টিতে বিএনপির ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী রয়েছেন ৬৫ জন। 

এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২২টিতে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন ৩৪ জন। আর দক্ষিণ সিটিতে ৭৫টি সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে ২৪টিতে প্রার্থী ৩১ জন। তাঁরা সবাই নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে মাঠে আছেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির (ডিএসসিসি) চারটি ওয়ার্ডে এখন বিএনপি–সমর্থিত কোনো কাউন্সিলর প্রার্থী নেই। এর মধ্যে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন এবং ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এ দুটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ​নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া ১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি কাউকে সমর্থন দেয়নি। তবে ওয়ার্ড দুটিতে বিএনপির পাঁচজন নেতা–কর্মী প্রার্থী হয়েছেন। 

৩০ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটিতে ভোট গ্রহণ হবে। কাউন্সিলর পদে ভোট নির্দলীয় হলেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই এ পদে প্রার্থীদের দলগত সমর্থন দিয়েছে। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী আছে ৭৭টি ওয়ার্ডে।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, তৃণমূলের সমর্থন নিয়ে বা ভোটের মাধ্যমে দল​গুলো প্রার্থী ঠিক করেনি। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোও শৃঙ্খলা মানেনি। তাঁর মতে, যেহেতু কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে না, তাই দলের সমর্থনের বাইরেও একজন ব্যক্তি প্রার্থী হতেই পারেন। এটা তাঁর নাগরিক অধিকার। 

উত্তর সিটি

ঢাকা উত্তর সিটির ৩ নম্বর ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে বিএনপির সমর্থন পেয়েছেন আবু তৈয়ব। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে এখানে প্রার্থী হয়েছেন ছাত্রদল নেতা জামাল হোসেন। আবু তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, জামাল হোসেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কথাও মানছেন না। তাঁর কারণে দলীয় সমর্থকদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে। 

৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম। তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন স্থানীয় বিএনপি নেতা সাব্বির দেওয়ান। ৫ নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থী পল্লবী থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন। এখানকার আরেক প্রার্থী পল্লবী থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বুলবুল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত আমি দলের সমর্থনের আশা করছি।’

>বিদ্রোহীদের ব্যাপারে এখনো করণীয় ঠিক করেনি বিএনপি
তাঁদের বসিয়ে দিতে চেষ্টা করছে দলটি

৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির প্রার্থী মাহফুজ হোসেন খানের​ বিপরীতে বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন তিনজন। তাঁরা হলেন মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি রাহাদুল ইসলাম ভূঁইয়া, রূপনগর থানা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আমজাদ হোসেন মোল্লা ও বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান। রাহাদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘আজীবন দলের কাছে কিছুই চাইনি। নির্বাচনের আগমুহূর্ত পর্যন্ত দলের সমর্থন চাই।’

৭ নম্বর ওয়ার্ডে বিদ্রোহীর প্রার্থী দুজন। তাঁরা হলেন বিএনপির মহানগর উত্তরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ও স্থানীয় নেতা আলমগীর কবির চৌধুরী। এখানে দলের সমর্থন পেয়েছেন মিরপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন। 

৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিএন​পির প্রার্থী হলেন মহানগর উত্তরের সহসভাপতি ফেরদৌসী আহমেদ। এখানকার বিদ্রোহী প্রার্থী শাহ আলী থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান দেওয়ান। তিনি প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, দল যাঁকে সমর্থন দিয়েছে, ওয়ার্ডবাসীর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ নেই। তাই তিনি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচন করছেন।

২৩ নম্বরে দুজন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। তাঁরা হলেন বিএনপির মহানগর উত্তরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল মেছের ও যুবদল নেতা কামাল আহমেদ। এখানে বিএনপির প্রার্থী ২৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি হেলাল কবির। তিনি বলেন, ‘ভোটার ও সমর্থকদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন বিদ্রোহীরা।’ 

 ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম। তিনি এই ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। দলের সমর্থন পেতে ব্যর্থ হয়ে এখানে হাসেম মিয়া ও শেখ জিয়াউর রহমান নামে দলের দুই নেতা প্রার্থী হয়েছেন। শেখ জিয়াউর রহমান বলেন, তিনি নির্বাচনী মাঠ ছাড়বেন না। 

উত্তর সিটিতে মোট ২২টি ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে বিএনপির।

দক্ষিণ সিটি

ঢাকা দক্ষিণ সিটির ২৪টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন। এর মধ্যে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থী পল্টন থানা কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আব্বাস উদ্দিন সরকারের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন যুবদলের পল্টন থানার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম। 

বিএনপির ধানমন্ডি থানার সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক উদ্দিন ভূঁইয়া ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে দলের সমর্থন পেয়েছেন। এখানে প্রার্থী হয়েছেন দলের ওয়ার্ড কমিটির সহসভাপতি আবু নাছেরও। ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির প্রার্থী মহানগর দক্ষিণের সহসভাপতি সাব্বির আহমেদ। প্রতীক নিয়ে মাঠে আছেন বিএনপির ওয়ারী থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হকও।

৪১ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির সমর্থন পেয়েছেন ওয়ারী থানা বিএনপির সভাপতি লিয়াকত আলী। তাঁর বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন আপন ভাই ফরহাদ হোসেনও। এ বিষয়ে লিয়াকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ৩০–৩২টি মামলা আছে। সব মামলায় জামিনে আছি। তারপরও গ্রেপ্তার–আতঙ্কে আছি। তাই নিজের সাপোর্ট হিসেবে ভাইকেও বিদ্রোহী হিসেবে রেখেছি।’

৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির সমর্থন পেয়েছেন মো. ফারুক। তিনি বিএনপির এই ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি। দলের দুই নেতা তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। তাঁরা হলেন বিএনপির গেন্ডারিয়া থানা সাংগঠনিক সম্পাদক ঢালী মামুনুর রশীদ ও ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক মো. সোহেল।

মো. ফারুক বলেন, এই দুই বিদ্রোহী প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য দল থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা তা আমলে নেননি। 

কামরাঙ্গীরচরে ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির সমর্থন পেয়েছেন দলের ওয়ার্ড কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. সামির। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী এই ওয়ার্ডের সভাপতি শহিদুল হক। ৬১ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির কদমতলী থানা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জুম্মন মিয়া দলের সমর্থন পেয়েছেন। তিনি এই ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর। দলের স্থানীয় নেতা মো. শাহ আলমও প্রার্থী হয়েছেন।

৭৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী আকবর হোসেন। তাঁর বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন আপন ছোট ভাইয়ের স্ত্রী সোনিয়া হোসেন। নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডটি আগে নাছিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ ছিল। বিএনপি–সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন সোনিয়ার স্বামী প্রয়াত আবুল হোসেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করছেন তাঁরা। তবে বিদ্রোহীদের ব্যাপারে এখনো করণীয় নির্ধারণ করেনি বিএনপি।