বিপন্ন গাঙ্গেয় ডলফিনটি কবিরাজের জলাশয়ে

সুতিয়া নদীতে ধরা পড়া গাঙ্গেয় ডলফিন। গত বুধবার রাতে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নান্দিয়া সাঙ্গু গ্রামে।  ছবি: প্রথম আলো
সুতিয়া নদীতে ধরা পড়া গাঙ্গেয় ডলফিন। গত বুধবার রাতে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নান্দিয়া সাঙ্গু গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত গাঙ্গেয় ডলফিন। গাজীপুরের শ্রীপুরের নান্দিয়া সাঙ্গুন এলাকায় সুতিয়া নদীতে ধরা পড়েছে এই প্রজাতির একটি ডলফিন। জেলের জালে ধরা পড়ার পর প্রাণীটির গন্তব্য হয়েছে কবিরাজখানায়। কবিরাজ সেটিকে তাঁর ছোট জলাশয়ে বন্দী করে রেখেছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

জলজ এই স্তন্যপায়ী প্রাণী স্থানীয়ভাবে ‘শুশুক’ নামে পরিচিত। গত বুধবার সন্ধ্যায় শ্রীপুরের নান্দিয়া সাঙ্গুন এলাকায় সুতিয়া নদীতে জেলের জালে ধরা পড়ে একটি গাঙ্গেয় ডলফিন। স্থানীয় লোকজন জানান, তেল তৈরির জন্য এটিকে এক কবিরাজ নিয়ে গেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নান্দিয়া সাঙ্গুন গ্রামের এক তরুণ গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রথম আলোকে টেলিফোনে জানান, ডলফিনটি নিজের জলাশয়ে আটকে রেখেছেন ওই কবিরাজ। এক বন্ধুর কাছে তিনি ডলফিনের জীবিত থাকার খবর পেয়েছেন। তিনি জানান, বুধবার সন্ধ্যা সাতটায় সুতিয়া নদীতে স্থানীয় মোহাম্মদ মাসুদ নামের এক জেলের জালে ডলফিনটি ধরা পড়ে। পরে সেটি শ্রীপুরের নান্দিয়া সাঙ্গুন এলাকায় নদীর পাড়ে নিয়ে আসা হয়। ডলফিনটি জীবিত ছিল। তিনিসহ স্থানীয় কয়েকজন তরুণ এটিকে নদীতে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন জেলেকে। তিনি ছাড়েননি। এর মধ্যে খবর পেয়ে নদীর অপর পাশে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার নিগুয়ারী গ্রামের মোবারক হোসেন নামের এক কবিরাজ সেখানে যান। তিনি জেলের কাছ থেকে ডলফিনটি জীবিত অবস্থায় তাঁর বাড়িতে নিয়ে যান। ওই তরুণেরা জানান, কবিরাজ ডলফিন থেকে তেল তৈরি করার জন্য নিয়ে গেছেন।

রাহাত আকন্দ নামের আরেক তরুণ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডলফিন এখন নদীতে নেই বললেই চলে। এমন দুঃসময়ে এভাবে জেলের জালে ধরা পড়ায় প্রাণীগুলো বিলীন হওয়ার আশঙ্কা আছে। তাই আমরা এটিকে নদীতে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম।’

রাহাত আকন্দ বলেন, ডলফিনটির দৈর্ঘ্য আনুমানিক সাড়ে তিন ফুট। গায়ের রঙ ধূসর। মুখের আকৃতি লম্বাটে। তিনি জানান, বর্ষার সময় মাঝেমধ্যে সুতিয়া নদীতে এগুলোকে লাফাতে দেখা যায়। একসময় এই নদীতে অনেক গাঙ্গেয় ডলফিন ছিল বলে তাঁরা জানেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এদের সংখ্যা একদমই কমে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান বলেন, গাঙ্গেয় ডলফিন বিশ্বের সব জায়গা থেকেই একদম কমে গেছে। এটি এখন বিপন্ন প্রাণীর তালিকায়। এই প্রাণী ধরা, শিকার ও বিক্রি করা দণ্ডনীয় অপরাধ। এর শাস্তি সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড ও তিন লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড।

বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক অসীম মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা খবর পেয়েছি। প্রাণীটি উদ্ধারে আমরা চেষ্টা করছি।’