বিদ্রোহী নিয়ে বিপাকে আ.লীগ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগেরই দুই বিদ্রোহী। চতুর্থ ধাপে ৩১ মার্চ এই উপজেলায় নির্বাচন হবে।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, নবীনগরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির সহসম্পাদক কাজী জহির উদ্দিন সিদ্দিক। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও মতিঝিল থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মনিরুজ্জামান মাঠে রয়েছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হালিম প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী সব জায়গাতেই আছে। যেহেতু প্রতীক নৌকা, নৌকার বাইরে বলার বা করার কোনো সুযোগ নেই। তিনি আরও বলেন, ‘দলীয় মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীসহ তিনজন সংবাদ সম্মেলন করেছেন। পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনও হয়েছে। দ্রুত বিচার আইনে একটি মিথ্যা মামলাও হয়েছে। ২২ মার্চ ঢাকায় উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা হবে। যাঁরা দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন, সাংগঠনিকভাবে তাঁদেরও আইনের আওতায় আনা উচিত।’

উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, নবীনগরে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নের জন্য দলের সহসভাপতি হাবিবুর রহমান ওরফে স্টিফেনের নাম কেন্দ্রে প্রস্তাব করা হয়। এরপর মনোনয়নবঞ্চিত জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল আমিন ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির সহসম্পাদক কাজী জহির উদ্দিন সিদ্দিক ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনজনই হাবিবুর রহমানের সঙ্গে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের আত্মীয়তার বিষয়টি তুলে ধরেন। হাবিবুর রহমানও নবীনগর উপজেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। মনোনয়নবঞ্চিত তিন প্রার্থীর কর্মী–সমর্থকদের প্রচারণার সময় বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবিসংবলিত পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগে মামলাও হয়। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ হাবিবুর রহমানকে বাদ দিয়ে কাজী জহির উদ্দিন সিদ্দিককে মনোনয়ন দেয়।
উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানান, আওয়ামী লীগ কাজী জহির উদ্দিন সিদ্দিককে মনোনয়ন দিলে সাংসদ এবাদুল করিমের আস্থাভাজন ও ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত নাছির উদ্দিন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। একাধিক প্রার্থী থাকায় উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। একদিকে সাংসদের ঘনিষ্ঠজন ও অন্যদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী। আবার কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন পাওয়া কাজী জহির উদ্দিন সিদ্দিকের নাম উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবে ছিল না। সব মিলিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভ রয়েছে।

নাসির উদ্দিন জানান, ‘আমি দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলাম। তবে এখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। মানুষের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি। শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকব।’
কাজী জহির উদ্দিন বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক সাংসদ ফয়জুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের অন্য নেতা-কর্মীরা সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছেন। আর আমি নিজের জন্য জয় চাচ্ছি না। নৌকা প্রতীকের জয় হওয়া দরকার।’ তিনি আরও বলেন, ২২ মার্চ দলীয় প্রার্থীকে কীভাবে জয়ী করার যায়, সেসব নিয়ে ঢাকায় উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বর্ধিত সভার আয়োজন করেছেন। চেয়ারম্যান পদে থাকা অপর দুই প্রার্থী ভোটে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
একটি পৌরসভা ও ২১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত নবীনগর উপজেলায় মোট ভোটারসংখ্যা ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৯৫২। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিনজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছয়জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানপদে পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।