পচনশীল ক্ষত, বছরে ২ লাখের বেশি মৃত্যু

পচনশীল ক্ষত অসুস্থতা ও মৃত্যুর বড় কারণ। বাংলাদেশে নানা বয়সী প্রায় সাড়ে ১১ লাখ মানুষ বছরে পচনশীল ক্ষতের শিকার হয়। আর এর কারণে মারা যায় ২ লাখের বেশি মানুষ।

পচনশীল ক্ষত বা সেপসিসের কারণে মৃত্যুর এই অনুমিত হিসাব দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মানির জেনা ইউনিভার্সিটি, ব্রাজিলের সাও পাওলো ফেডারেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষক ও বিজ্ঞানীরা। ১৯৯০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও ১৯৫টি দেশে সেপসিসে আক্রান্ত ও সেপসিসের কারণে মৃত্যুর তথ্য তাঁরা বের করেছেন। তাঁদের গবেষণা প্রবন্ধটি ব্রিটিশ জনস্বাস্থ্য সাময়িকী ল্যানসেটের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছে।

প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে বৈশ্বিকভাবে সেপসিসে ৪ কোটি ৮৯ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল। আর ওই বছর সেপসিসসংশ্লিষ্ট কারণে ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ মারা যায়। এটি মোট মৃত্যুর ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ। 

প্রবন্ধে সেপসিস বা পচনশীল ক্ষতের একটি সংজ্ঞাও দিয়েছেন গবেষকেরা। তীব্র সংক্রমণের উপস্থিতিতে কোনো অঙ্গের নতুনভাবে অকার্যকর হওয়াই সেপসিস। সেপসিস গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সমস্যা।

বাংলাদেশে কত মানুষ সেপসিসে আক্রান্ত হয় বা কত মানুষ সেপসিসসংশ্লিষ্ট কারণে মারা যায়, তার কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা প্রথম আলোকে বলেন, প্রসবের পরে কত প্রসূতি সেপসিসে আক্রান্ত হয়, সেই পরিসংখ্যান প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞরা বলতে পারেন। কোন অ্যান্টিবায়োটিক কোন সেপসিসে পুরোপুরি বা আংশিক অকার্যকর হয়ে পড়েছে, তারও কিছু তথ্য আছে। তবে সেপসিসে আক্রান্ত বা মৃত্যুর সামগ্রিক তথ্য নেই।

গবেষকেরা বলছেন, তাঁরা মোটা দাগে সেপসিসকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন—সংক্রমণসংশ্লিষ্ট সেপসিস, অসংক্রামক ব্যাধিসংশ্লিষ্ট সেপসিস ও জখমসংশ্লিষ্ট সেপসিস। বাংলাদেশের এই তিনটি ক্ষেত্রেরই পৃথক পরিসংখ্যান দিয়েছেন গবেষকেরা।

>

পচনশীল ক্ষত বা সেপসিস নিয়ে সামগ্রিক তথ্য দেশে নেই
এই বিশ্লেষণ নতুন পথের সন্ধান দিতে পারে

মৃত্যুর ২৮২টি অন্তর্নিহিত কারণ বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা বলছেন, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছিল সংক্রমণসংশ্লিষ্ট সেপসিসে। এই সংখ্যা ছিল ৭ লাখ ৮০ হাজার ১৯০ জন।  তবে বেশি মৃত্যু হয়েছিল অসংক্রামক ব্যাধিসংশ্লিষ্ট সেপসিসে। এই সংখ্যা ১ লাখ ১২ হাজার ২০০।

ল্যানসেটের প্রবন্ধে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী শিশুদের মধ্যে সেপসিসের সংক্রমণ বেশি থাকার বিষয়টি বিস্ময়কর। ২০১৭ সালের তথ্য বলছে, সেপসিসে আক্রান্তদের অর্ধেকের বেশি হচ্ছে শিশু, এদের একটি বড় অংশ নবজাতক। অর্থাৎ এদের বয়স ২৮ দিনের কম।

নবজাতকের এই তথ্য বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রযোজ্য। ইউনিসেফের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বছরে প্রায় ৮৮ হাজার নবজাতকের মৃত্যু হয়। এর ২৪ দশমিক ৭ শতাংশ সেপসিস ও অন্য সংক্রমণে মারা যায় বলে সর্বশেষ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপে দেখা গেছে।

গবেষকেরা বলছেন, সেপসিসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর ক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়। প্রকোপ সবচেয়ে বেশি আফ্রিকার সাব সাহারা অঞ্চল, ওশেনিয়া, দক্ষিণ এশিয়া, পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া।

প্রবন্ধের বিষয়বস্তু নিয়ে গতকাল শুক্রবার কথা হয় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক রশীদ–ই–মাহবুবের সঙ্গে। প্রবীণ এই চিকিৎসক বলেন, এই ধরনের গবেষণা বা বিশ্লেষণের সঙ্গে এ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা পরিচিত নন। তবে এই নতুন জ্ঞান সমস্যা সমাধানে পথের সন্ধান দিতে পারে। এ নিয়ে আইইডিসিআরের কাজ করা উচিত।