ফেসবুকে প্রচারে প্রতিমন্ত্রী, আচরণবিধি লঙ্ঘন কি না জানে না ইসি

জুনাইদ আহমেদ পলকের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া
জুনাইদ আহমেদ পলকের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

নির্বাচনে প্রচারের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম; বিশেষ করে ফেসবুক। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা প্রচারের নানা খবর এখানে জানাচ্ছেন। নিজ দলের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আইনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারি সুবিধাভোগী ও প্রার্থীরা প্রচার চালাতে পারবেন কি না, তা স্পষ্ট করা নেই। ইসি এ বিষয়ে কিছু জানেও না।

নির্বাচন কমিশনের আইনে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আচরণ বিধিমালায় বলা আছে, সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী নির্বাচন পূর্ব সময়ে নির্বাচনী এলাকায় প্রচার বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না। তবে এতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিষয়টি উল্লেখ নেই।

আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এবং ফ্যান পেজে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী ফজলে নূর তাপস ও আতিকুল ইসলামের পক্ষে নৌকায় ভোট চেয়ে পোস্ট দেন। এ ছাড়া প্রার্থীদের প্রচারের কিছু পোস্ট শেয়ারও করেন।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে জুনাইদ আহমেদ পলক প্রথম আলোকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালাতে তিনি কোনো আইনগত বাধা দেখেন না। সরকারি কোনো মাধ্যম বা পেজ ব্যবহার করে প্রচার চালাচ্ছেন না, ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ও পেজ ব্যবহার করেছেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন থেকে যদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো নির্দেশনা আসে, তা অবশ্যই মেনে চলব।’

ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন ৩০ জানুয়ারি। আওয়ামী লীগের উত্তরে প্রার্থী হয়েছেন আতিকুল ইসলাম এবং দক্ষিণে ফজলে নূর তাপস। বিএনপি থেকে উত্তরে তাবিথ আউয়াল এবং দক্ষিণে ইশরাক হোসেন প্রার্থী হয়েছেন। ১০ জানুয়ারি থেকে প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করেছেন। প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের চার প্রার্থীই ফেসবুকে নিজেদের প্রচারের ছবি, বক্তব্য শেয়ার করছেন। এ ছাড়া গণসংযোগ ও প্রচারের লাইভও দেখাচ্ছেন।

বিএনপির উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চেয়ে ইসিতে চিঠি দিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দেখেছি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা নেই। এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে যেকেউ প্রচার চালাতে পারবেন কি না. সে বিষয়টি পরিষ্কারভাবে জানতে আমি কমিশনে চিঠি দিয়েছিলাম।’ ৭ জানুয়ারি চিঠি দিলেও ইসি থেকে এখনো কোনো উত্তর পাননি বলে জানান।

জুনাইদ আহমেদ পলকের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া
জুনাইদ আহমেদ পলকের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ইসির যুগ্ম সচিব আবুল কাসেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিষয় আমাদের আচরণবিধিতে লেখা নেই। তাবিথ আউয়ালের একটি চিঠি পেয়েছি। সেটা আমরা কমিশনের দিয়েছি জানার জন্য। কমিশন সিদ্ধান্ত দিলে এটা নিয়ে বলা যাবে।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার প্রথম আসে ২০০৮ সালে। তখন স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচনে শামসুল হুদা কমিশন এ ব্যাপারে মৌখিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। মন্ত্রী পদমর্যাদা বা সরকারি সুবিধাভোগী কেউই কোনো মাধ্যম ব্যবহার করে প্রচার বা ভোট চাইতে পারবে না বলে জানিয়েছিল ওই কমিশন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার দিন দিন বেড়ে গেলেও এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন কোনো বিধিমালা বা আইন কিছুই করেনি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসি ‘গুজব, অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র’ ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ২৪ ঘণ্টা নজরদারিতে রাখার নির্দেশ দিয়েছিল।