সেই অস্ত্রের হদিস এবার মিলবে

নিহত ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাস। ছবি: সংগৃহীত
নিহত ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাস। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাসকে পিটিয়ে হত্যার আগে নগরের নালাপাড়া এলাকায় গুলি ছুড়ে আতঙ্ক ছড়ায় সন্ত্রাসীরা। এই ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার আসামির জবানবন্দিতে উঠে আসে আসামি জাহিদুর রহমানই সেই দিন পিস্তল উঁচিয়ে চার রাউন্ড গুলি করেছিলেন। কিন্তু ঘটনার দুই বছর পেরিয়ে গেলেও সেই পিস্তলের হদিস পায়নি পুলিশ।

গত শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে নগরের লালখান বাজার এলাকায় টহল পুলিশকে সহযোগীদের নিয়ে পাথর নিক্ষেপকালে লোহার রডসহ জাহিদুরকে গ্রেপ্তার করে খুলশী থানা-পুলিশ। বাকিরা পালিয়ে যান। হামলায় আহত হন তিন পুলিশ সদস্য। জাহিদ গ্রেপ্তারে লালখান বাজার এলাকায় স্বস্তি ফিরে এলেও সেই অস্ত্রটি আদৌ উদ্ধার হবে কি না, জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজির ছয়টি মামলা রয়েছে।

গ্রেপ্তার জাহিদ লালখান বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ এফ কবির মানিকের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য।

‘তিন নেতার কবজায় লালখান বাজার’ শিরোনামে ১৫ জানুয়ারি প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর নগরের সদরঘাট থানার দক্ষিণ নালাপাড়ার বাসা থেকে ডেকে নিয়ে সুদীপ্ত বিশ্বাসকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নগর ছাত্রলীগের সহসম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাস আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এ ঘটনায় তাঁর বাবা মেঘনাথ বিশ্বাস বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় সাত-আটজনকে আসামি করে মামলা করেন। সুদীপ্ত খুনের ঘটনায় ১৫-১৬ জনের নাম এসেছে। চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেসবুকে লেখালেখি করেন সুদীপ্ত। এ ঘটনার জেরে তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

 হত্যাকাণ্ডের ‘নির্দেশদাতা’ হিসেবে গত ৪ আগস্ট ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় দিদারুল আলম মাসুমকে। তিনি চট্টগ্রামের লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। ১২ জুলাই চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম সারোয়ার জাহানের আদালতে জবানবন্দি দেন আসামি মিজানুর রহমান। এ জবানবন্দিতে প্রথমবারের মতো নির্দেশদাতা হিসেবে দিদারুল আলমের নাম আসে। যদিও দিদারুল দাবি করেন, রাজনৈতিক কারণে তাঁকে এই মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।

এ দিকে গ্রেপ্তার একাধিক আসামি আদালতে জবানবন্দিতে জানিয়েছেন ঘটনার দিন (৬ অক্টোবর) পরিকল্পনামতো নগরের লালখান বাজার থেকে অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে করে নালাপাড়ায় সুদীপ্তের বাসার সামনে যান প্রায় ১৫ থেকে ১৬ জন। তাঁদের হাতে অস্ত্র, লোহার রড ও পাইপ ছিল। আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য ফাঁকা গুলিও ছোড়া হয়। আর গুলিটি ছোড়েন জাহিদুর রহমান। হাতে পিস্তুল ছিল।

 মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রামের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, আসামি জাহিদ জামিনে থাকায় তাঁকে রিমান্ডের আবেদন করা যায়নি। আদালতের অনুমতি নিয়ে প্রসিকিউশন শাখায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

খুলশী থানার ওসি প্রণব কুমার চৌধুরী জানান, পুলিশের ওপর হামলা ও কাজে বাধাদানের মামলায় লোহার রডসহ জাহিদুরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই ঘটনায় করা মামলায় তাঁর আরও দশ সহযোগীকে আসামি করা হয়েছে। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। একইসঙ্গে জাহিদকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। অনুমতি পেলে তাঁর কাছে থাকা অস্ত্র সম্পর্কে তথ্য আদায়ের চেষ্টা করবে পুলিশ।

সুদীপ্তের বাবা মেঘনাথ বিশ্বাস বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, দুই বছর পার হলেও আসামির কাছ থেকে ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি উদ্ধার হয়নি। অস্ত্রের উৎস পাওয়া গেলে জড়িত অনেকের নাম বেরিয়ে আসতে পারে।

আরও এক আসামি গ্রেপ্তার

সুদীপ্ত হত্যা মামলায় দীর্ঘদিন পলাতক থাকা আসামি মো. মুরাদকে গতকাল রোববার নগরের ওয়াসা মোড় থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রামের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, গোপন তথে৵র ভিত্তিতে মুরাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোমবার আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করা হবে। এই মামলায় গ্রেপ্তার আসামিদের জবানবন্দিতে মুরাদের জড়িত থাকার তথ্য রয়েছে।