মধু চাষে খরচ কম, বাড়তি আয়

বাড়ির পাশে সরিষাখেতে মধু চাষ করে বাড়তি টাকা আয় করছেন জর্ঝিনা চাকমা। পানছড়ি দক্ষিণ শান্তিপুর এলাকায়।  প্রথম আলো
বাড়ির পাশে সরিষাখেতে মধু চাষ করে বাড়তি টাকা আয় করছেন জর্ঝিনা চাকমা। পানছড়ি দক্ষিণ শান্তিপুর এলাকায়। প্রথম আলো

পানছড়ির উল্টাছড়ি ইউনিয়নে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মধু চাষ। ঘরের কাজের পাশাপাশি বাড়তি খরচ ছাড়াই একবার পুঁজি খাঁটিয়ে বারবার আয় করতে পারায় মধু চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। এই ইউনিয়নের চারটি গ্রামেই মধু বিক্রি করে সংসারে বাড়তি আয় করছে ৪০টির বেশি পরিবার।

সম্প্রতি পানছড়ি বাজার থেকে চার কিলোমিটার দূরে শান্তিপুর, দক্ষিণ শান্তিপুর কর্মাপাড়া ও ঝাগুর নালা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে, দেয়ালের পাশে কিংবা সরিষাসহ বিভিন্ন সবজিখেতের মাঝে কাঠের বাক্স রাখা। সেই বাক্সে মৌমাছি রেখে মধু চাষ করছেন চাষিরা।

মৌচাষিরা জানান, এক একটি কাঠের বাক্স বা কলোনি বানাতে খরচ হয় তিন হাজার টাকা। তা ছাড়া রানি মৌমাছি সহজে পাওয়া যায় না। যাঁরা জঙ্গল থেকে রানি মৌমাছি সংগ্রহ করেন তাঁরাও চড়া দামে বিক্রি করে থাকেন। এমন অনেক নতুন চাষি আছেন প্রশিক্ষণ না থাকায় তাঁরা অনেক সময় রানি মৌমাছি হারিয়ে ফেলেন। তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে মধুর উৎপাদন আরও বাড়বে।

দক্ষিণ শান্তিপুর এলাকার গৃহিণী জর্ঝিনা চাকমা (৩৫) বলেন, ‘চার বছর আগে একটি রানি মৌমাছিকে পাঁচ শ টাকায় কিনে নিয়ে এসে বাড়িতে একটি কাঠের বাক্সে রেখে দিই। কয়েক দিনের মধ্যে সেই কাঠের বাক্সের চারপাশে মৌমাছি আসা শুরু করে। মৌমাছিরা সারা দিন বন-জঙ্গল ঘুরে মধু সংগ্রহ করে এই বাক্সে জমা করে রাখে। প্রথম বছর তিন লিটার মধু বিক্রি করে তিন হাজার ছয় শ টাকা পেয়েছি। পরের বছর আরও একটি বাক্স বাড়াই। বর্তমানে তিনটি বাক্স থেকে বছরে নয় কেজির বেশি মধু পেয়ে থাকি।’

শুধু নয় জর্ঝিনা চাকমা নয় দক্ষিণ শান্তিপুর এলাকার গৃহিণী সুচন্দা খীসাও মৌচাষ করছেন। তিনি বলেন, পাঁচ বছর আগে তিনি ঘরের উঠানে তিনটি বাক্সে মৌমাছি রেখে চাষ শুরু করেন। বাজারে নিয়ে গেলেই প্রতি কেজি মধু এক হাজার থেকে এক হাজার দু শ টাকায় বিক্রি করা যায়। আত্মীয়-স্বজনদের দিয়েও প্রতিবছর মধু বিক্রি করে আট থেকে দশ হাজার টাকা পান তিনি।

এই ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিমাই নাথও মৌ চাষ করছেন। তিনি বলেন, ‘এই এলাকায় দায়িত্ব নেওয়ার পর জানতে পারি অনেক পরিবার মধু চাষ করে বাড়তি টাকা লাভ করছেন। প্রথমে বাড়ির জন্য পরীক্ষামূলকভাবে একটা বাক্সে রানি মৌমাছি নিয়ে এসে মধু চাষ করি। বর্তমানে আমার ১১টা মৌ বাক্স আছে যেগুলো আমি এই এলাকার বিভিন্ন খেতে ও গাছের নিচে বসিয়ে দিয়েছি। গত বছর ৩০ লিটারের মতো মধু বিক্রি করেছি।’

তিনি আরও বলেন, মধু চাষে তেমন কোনো পরিচর্যা করতে হয় না। খরচ কম, লাভ বেশি। শুধু দরকার একটি রানি মৌমাছি ও একটি বাক্স। ঘরের কোণে কিংবা উঠানে মৌমাছির রানি নিয়ে বাক্স বসিয়ে দিলেই মৌমাছি চলে আসে। সে জন্য অসচ্ছল ব্যক্তিদের জন্য এই চাষ খুবই সুবিধাজনক।

উল্টাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিজয় বিকাশ চাকমা বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা নিজেদের প্রচেষ্টার মধু চাষ করছেন। সরকারিভাবে যদি মৌচাষিদের প্রশিক্ষণ ও ঋণ দেওয়া হয় তাহলে মৌ চাষে অনেকে এগিয়ে আসবে এবং মৌচাষিরা উপকৃত হবেন।’