মাঠ গরম করে রেখেছেন বিদ্রোহীরা

শেখ মোহাম্মদ হোসেন, ওসমান গনি, মোক্তার সরদার, শেখ আমির হোসেন, তৈমুর রেজা, সাজেদা আলী হেলেন
শেখ মোহাম্মদ হোসেন, ওসমান গনি, মোক্তার সরদার, শেখ আমির হোসেন, তৈমুর রেজা, সাজেদা আলী হেলেন

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩৪, ৩৫ ও ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি–সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা সকাল-বিকেল ছুটছেন ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে। পেতে চাচ্ছেন তাঁদের আশ্বাস। পাশাপাশি গণসংযোগের মাধ্যমে মাঠ গরম করে রেখেছেন দল দুটির বিদ্রোহী প্রার্থীরা।

৩৪ নম্বর ওয়ার্ড

জাফরাবাদ, রায়েরবাজার, বিবিরবাজার, শংকর, পূর্ব রায়েরবাজার, মধুবাজার ও পশ্চিম ধানমন্ডি নিয়ে এই ওয়ার্ড। ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত প্রার্থী শেখ মোহাম্মদ হোসেন নির্বাচন করছেন টিফিন ক্যারিয়ার প্রতীক নিয়ে। এখানে আওয়ামী লীগের কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী নেই। এ মুহূর্তে গণসংযোগ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এই কাউন্সিলর পদপ্রার্থী। নির্বাচিত হলে ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডকে একটা মডেল ওয়ার্ড হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে শেখ মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘একজন অতি সাধারণ মানুষ হওয়া সত্ত্বেও জননেত্রী শেখ হাসিনা আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। নেত্রী যেভাবে দেশকে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় শামিল করেছেন, নির্বাচিত হলে আমিও আমার ওয়ার্ডকে সেভাবে এগিয়ে নিতে চাই।’

ওয়ার্ডে বিএনপি–সমর্থিত প্রার্থী ওসমান গনি শাহজাহান দলের মোহাম্মদপুর থানা সভাপতি। তিনি ২০১৫ সালের নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিলেন। সেবার তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কাছে সাড়ে তিন শ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে এবার তিনি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী বলে জানান। এবার তাঁর প্রতীক ঝুড়ি। ওসমান গনি শাহজাহান বলেন, ‘নির্বাচিত হলে আমি প্রথমেই মাদকমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন ওয়ার্ড গড়ার কাজে মনোযোগ দিতে চাই। সেই সঙ্গে তরুণদের জন্য ব্যায়ামাগার তৈরি ও খেলাধুলার সুযোগ–সুবিধা বাড়াতে চাই। পাশাপাশি মশক নিয়ন্ত্রণ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের সঙ্গে সার্বিকভাবে এলাকার অগ্রগতির দিকে মনোযোগ দিতে চাই।’

এই ওয়ার্ডে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুম খান। ঠেলাগাড়ি প্রতীকের এই প্রার্থী ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক।

৩৫ নম্বর ওয়ার্ড

ডিএনসিসির ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত এলাকাগুলো হলো মগবাজার, গাবতলা, নয়াটোলা, পাগলা মাজার, আমবাগান, পেয়ারাবাগ, ইস্কাটন ও দিলু রোড। ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত প্রার্থী মোক্তার সরদার নির্বাচন করছেন কাঁটাচামচ প্রতীক নিয়ে। তিনি ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের দুজন বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন। তাঁদের একজন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আবুল বাশার চৌধুরী লড়ছেন ঘুড়ি প্রতীক নিয়ে। আরেকজন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফয়জুল মুনির চৌধুরী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ঠেলাগাড়ি প্রতীক নিয়ে।

একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও নিজের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন দলের সমর্থন পাওয়া মোক্তার সরদার। তিনি বলেন, ‘আমি এত দিন এলাকাবাসীর সঙ্গে ছিলাম, তাঁদের জন্যই কাজ করেছি। আশা করছি এবারও তাঁরা আমাকে মূল্যায়ন করবেন।’

এই ওয়ার্ডে বিএনপি–সমর্থিত প্রার্থী শেখ আমির হোসেন নির্বাচন করছেন এয়ার কন্ডিশনার প্রতীক নিয়ে। তিনি হাতিরঝিল থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। তাঁর কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী নেই। প্রচারণায় নেমে ভোটারদের ভালো সাড়া পাচ্ছেন জানিয়ে এই প্রার্থী বলেন, ‘সুষ্ঠু ভোট হলে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। ভোটাররা আমাকে সেই আশা দেখাচ্ছেন। কিন্তু নিকট অতীতের নির্বাচনগুলোর অভিজ্ঞতা আমার পাশাপাশি ভোটারদের মধ্যে একধরনের আস্থার সংকট তৈরি করেছে।’

৩৬ নম্বর ওয়ার্ড

মালিবাগ বাগানবাড়ি, ডিআইটি রোডের পশ্চিমাংশ, সোনালীবাগ, গ্রিনওয়ে গলির পূর্ব পাশ, মগবাজার টিঅ্যান্ডটি কলোনি, উত্তর ও দক্ষিণ নয়াটোলা, মীরবাগ ও মীরেরটেক এলাকা নিয়ে ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড।

ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করছেন বর্তমান কাউন্সিলর তৈমুর রেজা। তাঁর নির্বাচনী প্রতীক ঘুড়ি। তিনি বর্তমানে রমনা থানা আওয়ামী লীগের ১ নম্বর কার্যকরী সদস্য। এখানে আওয়ামী লীগের একজন বিদ্রোহী প্রার্থীও আছেন। তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ইসলাম চৌধুরী আজাদ। নির্বাচন করছেন ঠেলাগাড়ি প্রতীক নিয়ে। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি–সমর্থিত নাসির উদ্দিন সরকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ব্যাডমিন্টন র‌্যাকেট প্রতীক নিয়ে। আলমগীর নামের আরেক ব্যক্তি লড়ছেন লাটিম প্রতীকে।

ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত প্রার্থী তৈমুর রেজা নির্বাচনে এবারও জয়লাভের আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তাঁর ভাষ্য, নির্বাচিত হয়ে তিনি এবার তাঁর অসমাপ্ত কাজগুলো এগিয়ে নিতে চান। এগুলো হচ্ছে মধুবাগ কাঁচাবাজারকে বহুতল বিপণিবিতানে রূপান্তর করা। সেখানে শিশুদের জন্য একটা প্লে জোন থাকবে। কাঁচাবাজারসংলগ্ন খেলার মাঠের উন্নয়ন ও বিটিসিএল কলোনিকে জলাবদ্ধতার সমস্যা থেকে মুক্ত করা। পাশাপাশি সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নও তাঁর পরিকল্পনার মধ্যে আছে।

এই ওয়ার্ডে বিএনপি–সমর্থিত প্রার্থী হচ্ছেন সাজেদা আলী হোসেন হেলেন। সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সাবেক এই কাউন্সিলর ২০১৫ সালের নির্বাচনে সাধারণ ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। এবারও তিনি একই ওয়ার্ডে ঝুড়ি প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরই মধ্যে প্রচারের মাঠে নেমে ভোটারদের সাড়া পেয়ে ‘আপ্লুত’ এই প্রার্থী বলেন, ‘ভোটারদের প্রতি আমার বিশ্বাস আছে। কিন্তু কথা হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে। নির্বাচন যদি ৫০ ভাগও সুষ্ঠু হয়, তাহলেও আমাকে আটকে রাখা কঠিন হবে।’