বাংলাদেশে চাপের মুখে গণমাধ্যম

কঠোর গণমাধ্যম আইন, পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তার এবং সাংবাদিকদের স্বনিয়ন্ত্রণ (সেলফ সেন্সরশিপ)—সব মিলিয়ে চাপের মুখে আছে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম।

প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির খবর নিয়ে তৈরি প্রতিবেদনে এ মন্তব্য করেছে ভারতের সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল উইঅন (ওয়ার্ল্ড ইজ ওয়ান)। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরদিন গত শুক্রবার প্রতিবেদনটি প্রচারিত হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের শীর্ষ দৈনিক প্রথম আলোর প্রখ্যাত সম্পাদক মতিউর রহমানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এ ঘটনাকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর আঘাত বলে আখ্যায়িত করছেন সেখানকার অধিকারকর্মীরা। তাঁদের মতে, সম্পাদক মতিউর রহমানকে জড়ানো হয়েছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে। মানহানির অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে এর আগে ৫৫টি মামলা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে গত বছরের একটি মামলায়। প্রথম আলোর সহযোগী এক প্রকাশনার অনুষ্ঠানে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যায় এক স্কুলছাত্র। এ ঘটনায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে মামলা করা হয়। কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা শুধু যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করছে। তবে এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত নয় মানবাধিকার সংগঠনগুলো। তারা বলছে, এই পদক্ষেপ প্রতিহিংসামূলক।

উইঅনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালে মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে কিছু মামলা হয়। নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) তখন তাদের পর্যবেক্ষণে বলেছিল, এটা সম্ভবত বাংলাদেশের নিরপেক্ষ সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে সংঘটিত আক্রমণের অংশ। তখন থেকে বড় বড় কিছু বিজ্ঞাপনদাতা প্রথম আলোয় বিজ্ঞাপন দেওয়া বন্ধ করে দেয়। আর এখন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলো শীর্ষ এই সম্পাদকের বিরুদ্ধে।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো অভিযোগ করে আসছে, ক্ষমতাসীন সরকার ভিন্নমত মানতে পারছে না। দেশটির নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করা হচ্ছে। এই আইনের আওতায় কর্তৃপক্ষ যেকোনো সাংবাদিককে তল্লাশি বা আটক এবং কম্পিউটার ও অন্য ডিভাইস জব্দ করতে পারে। শুধু সন্দেহের ভিত্তিতে তারা এসব করতে পারবে এবং আদালতের কোনো পরোয়ানারও প্রয়োজন হবে না। শুধু ২০১৮ সালে এই আইনে ৭১টি মানহানির মামলা হয়েছে। আটক হয়েছেন ২০ সাংবাদিক। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে চার ধাপ অবনতি হয়েছে বাংলাদেশের, ১৮০টি দেশের মধ্যে অবস্থান এখন ১৫০তম।