অফিসপাড়ায় গণশৌচাগার নেই, প্রতিবন্ধীদের দুর্ভোগ

চলছে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার কাজ। পান্থকুঞ্জ পার্কসংলগ্ন গণশৌচাগার। ফাইল ছবি
চলছে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার কাজ। পান্থকুঞ্জ পার্কসংলগ্ন গণশৌচাগার। ফাইল ছবি

রাজধানীর ‘ব্যাংকপাড়া’ বলে পরিচিত মতিঝিল এলাকায় নেই কোনো স্থায়ী গণশৌচাগার। তবে আছে ছয়টি ভ্রাম্যমাণ শৌচাগার (টয়লেট)। এসব শৌচাগার প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য ব্যবহারের একদম অনুপযোগী। কর্মজীবী পুরুষেরাই এগুলো ব্যবহার করেন। নারীদের জন্য আছে মাত্র দুটি। তবে এগুলো ব্যবহারে অনেকেই আগ্রহী নন।

গণশৌচাগার না থাকায় মতিঝিলে আসা কর্মব্যস্ত মানুষেরা বিপত্তিতে পড়েন। পুরুষেরা কোনোরকম প্রয়োজন মেটাতে পারলেও নারীরা বেশি সমস্যায় পড়েন। অফিস থেকে বেরিয়ে হাঁটাপথে কোনো শৌচাগার নেই।

মতিঝিলে একটি সরকারি ব্যাংকে বছরখানেক ধরে কাজ করেন নোভা আহমেদ। পুরান ঢাকার ইসলামপুরের এই বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাসা থেকে বের হওয়ার পর রাস্তাঘাটে কোনো শৌচাগার ব্যবহার করিনি। অফিসে কিংবা বাসায় প্রাকৃতিক প্রয়োজন সেরে বের হই। কখনো ভুলে গেলে বা প্রয়োজন পড়লে চোখের কাছে কোনো ভালো পরিষ্কার গণশৌচাগার না পেয়ে কষ্ট করতে হয়েছে। তা ছাড়া বাইরের এসব গণশৌচাগার বা ভ্রাম্যমাণ শৌচাগারগুলো নিরাপদ হবে কি না, সে ভয় পাই। এগুলোর খুব পরিচ্ছন্নও নয়।’ তিনি জানান, মতিঝিল এলাকায় কোনো গণশৌচাগার তাঁর চোখে পড়েনি।

ব্যাংকপাড়া মতিঝিলে প্রায়ই কাজে আসতে হয় মো. ইউসুফকে। মণিপুরীপাড়ার এই বাসিন্দাও বললেন, এই এলাকায় কোনো স্থায়ী শৌচাগার তিনি দেখেননি। গতকাল সোমবার দুপুরে অগ্রণী ব্যাংকে কাজ শেষে বেরিয়েই তাঁর শৌচাগার ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। অনেক খোঁজাখুঁজি ও জিজ্ঞাসার পর চোখে পড়ে পূবালী ফিলিংস্টেশনের গাঘেঁষা তিনটি ভ্যানের ওপর স্থাপিত ভ্রাম্যমাণ শৌচাগারের। ৫ টাকা খরচ করে তিনি সেবা নেন। ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত বড় একটা এলাকা, কত মানুষের যাতায়াত। অথচ একটা ভালো মানের শৌচাগার নেই এখানে। এই ভ্রাম্যমাণ টয়লেটের ভেতরে অংশ আঁটসাঁট। আর অনেক দুর্গন্ধ। কোনোমতে ব্যবহার করা যায় আরকি।’

ফিলিংস্টেশন লাগোয়া এই তিনটি ভ্রাম্যমাণ শৌচাগারের মধ্যে পুরুষ ও নারীর জন্য পৃথক দুটি প্রস্রাবের জন্য এবং একটি পায়খানার জন্য ব্যবহার করা যায়। ওয়াটার এইড বাংলাদেশ ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে আরবান প্রকল্পের মাধ্যমে এই শৌচাগারগুলো বসানো হয়েছিল।

পুরো মতিঝিল এলাকা ঘুরে এমন ছয়টি ভ্রাম্যমাণ গণশৌচাগার চোখে পড়ল। এসব শৌচাগারের কোনোটিতেই কোনো র‌্যাম্প–সুবিধা নেই। প্রতিবন্ধী বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষের জন্য এসব শৌচাগার ব্যবহার এককথায় অসম্ভব।

এই ছয়টি শৌচাগার দেখাশোনা করেন মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন সকাল সাতটা থেকে রাত দশটা থেকে পর্যন্ত মতিঝিলের ছয়টি শৌচাগার খোলা থাকে। দিনে প্রায় দুই হাজারের বেশি মানুষ এই শৌচাগারগুলো ব্যবহার করে থাকেন। পুরুষেরা বেশি ব্যবহার করে থাকেন। নারীরা খুব কম এগুলো ব্যবহার করেন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা এইগুলো ব্যবহার করতে পারে না।

মতিঝিলে নিয়মিত চলাচলকারী অন্তত পাঁচজন নারী বলেন, তাঁরা অফিস বা কার্যালয়ের গণশৌচাগার ব্যবহার করে থাকেন। বাসা থেকে অফিসে যাতায়াতের সময়ে প্রয়োজন হলেও ভালো মানের গণশৌচাগার নেই বলে তাঁরা শৌচাগারের খোঁজ করেন না। অনেকে অফিস বা বাসা থেকে রওনা দেওয়ার আগে পানি পান করা বন্ধ করে দেন।

ওয়াটারএইড বাংলাদেশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক রাজু বসাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকায় ২০১৩ সাল থেকে ২৯টি গণশৌচাগার স্থাপনে আমরা কাজ করেছি। কিন্তু মতিঝিলে প্রতিদিন কত লোক যাচ্ছেন, কখন বের হচ্ছে, কখন বাসায় ফিরবেন অনেকে নিজেও জানেন না। অথচ এ এলাকায় কোনো গণশৌচাগার নেই। বাণিজ্যিক এলাকা হওয়ায় এখানে স্থায়ী কোনো শৌচাগার স্থাপনের জন্য জায়গা পাওয়া যায় না। আর এ সমস্যাটিকে গুরুত্ব দিয়েও বিবেচনা করা হচ্ছে না। এ কারণে মতিঝিলে স্থায়ীভাবে গণশৌচাগার বানানো যাচ্ছে না। তিনি বলেন, মতিঝিলে গণশৌচাগার স্থাপনে নীতিনির্ধারকদের সদিচ্ছার অভাবও আছে। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ যদি মতিঝিলে একটি স্থায়ী শৌচাগার বানাতে চায় তাহলে ওয়াটারএইডের পক্ষ থেকে সহযোগিতা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।