শতবর্ষী রেলসেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ

ময়মনসিংহ শহরের কেওয়াটখালী এলাকাসংলগ্ন শম্ভূগঞ্জ রেল সেতুতে এমন অনেক স্থানেই দেখা মেলে ক্ষয় হয়ে যাওয়া স্লিপার।  ছবি: প্রথম আলো
ময়মনসিংহ শহরের কেওয়াটখালী এলাকাসংলগ্ন শম্ভূগঞ্জ রেল সেতুতে এমন অনেক স্থানেই দেখা মেলে ক্ষয় হয়ে যাওয়া স্লিপার। ছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহের সঙ্গে ভৈরব হয়ে চট্টগ্রামের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছিল ১৯১৫ সালে। তখন ট্রেন চলাচলের সুবিধার জন্য ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর এক কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রেলসেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। ব্রিটিশ শাসনামলে হার্ডিঞ্জ সেতু চালুর সময়ই শম্ভুগঞ্জ রেলসেতু নির্মিত হয়েছিল। 

শত বছর অতিক্রম করার পর আজও এই সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল করছে নিয়মিত। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সেতুটির একটি খুঁটি বোমা বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়েছিল। তখন দুটি গার্ডার ধসে পড়লে মোট তিনটি খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেতুটির পুনর্নির্মাণের কাজ শেষে পুনরায় সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছিল বলে জানান হানিফ আহমেদ নামে স্থানীয় প্রবীণ এক ব্যক্তি।

সেতুটি অনেক পুরোনো হলেও এটির রক্ষণাবেক্ষণ হয় না বললেই চলে। তাই দিন দিন সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে ট্রেন চলাচলের জন্য। ট্রেন পারাপার হতে গিয়ে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় কোনো দুর্ঘটনা এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় ব্যক্তি ও রেলওয়ের কর্মীরা। এ জন্য সেতুটির সংস্কারকাজ জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ এখনো সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় তাঁরা হতাশা প্রকাশ করেন।

সম্প্রতি ময়মনসিংহ শহরের কেওয়াটখালী এলাকাসংলগ্ন লোহার পাতের তৈরি এই রেলসেতুতে গিয়ে দেখা যায়, অনেক স্থানেই রং উঠে গিয়ে মরচে পড়েছে। নিচের পিলারগুলোতে কিছু স্থানে ইটের ওপর পলেস্তারা নেই। আবার কিছু অংশে দুটি ইটের সংযোগস্থলে সিমেন্ট সরে গিয়ে ফাঁকা হয়ে আছে। 

তবে সবচেয়ে শঙ্কার বিষয় হলো, অনেক স্থানে ক্লিপ নেই, কিছু অংশে নাটবল্টু নেই। কাঠের স্লিপারগুলো বেশির ভাগই ক্ষয় হয়ে গেছে। রেললাইনের মাঝে মাঝে কিছু অংশে স্লিপারই নেই। তারপরও এর ওপর দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন ট্রেন চলাচল করছে। প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহ ও ছবি তোলার সময় মহুয়া কমিউটার এবং জারিয়া লোকাল নামে দুটি ট্রেন তুলনামূলক ধীরগতিতে সেতু পার হচ্ছিল। তখন সেতুতে ঝাঁকুনি অনুভূত হয়েছে।

ময়মনসিংহ রেলস্টেশন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শম্ভুগঞ্জ রেলসেতুর ওপর দিয়ে প্রতিদিন বিজয় এক্সপ্রেস, হাওর এক্সপ্রেস ও মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস নামে তিনটি আন্তনগর, ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস ও ঈশা খাঁ এক্সপ্রেস নামে দুটি মেইল ট্রেন, মহুয়া ও বলাকা নামে দুটি কমিউটার এবং আরও আটটি লোকাল ট্রেন চলাচল করে। এ ছাড়া মালগাড়ি ও তেলবাহী ট্যাঙ্কারও চলে। প্রতিদিন ময়মনসিংহের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানের সব মিলিয়ে ৩০টি ট্রেন চলাচল করে বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহ স্টেশনের সুপার জহুরুল ইসলাম।

দুজন ট্রেনচালক বলেন, পুরোনো এই সেতুর ওপর দিয়ে তাঁরা সাবধানে, ধীরগতিতে ট্রেন চালান। গতি থাকে ২৫-৩০ কিলোমিটার। এরপরও এটি কেঁপে ওঠে। দুর্ঘটনার শঙ্কা তাঁরাও করেন। সেতুর তদারকি ও সংস্কার হলে এ ধরনের অবস্থার সৃষ্টি হতো না। 

রেলওয়ের ময়মনসিংহ অঞ্চলের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী সুকুমার বিশ্বাস সেতুটির দুরবস্থার কথা স্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, এই সেতুটি পুরোনো হয়েছে; তাই অনেক স্থানে পলেস্তারা ক্ষয় হয়েছে এবং অনেক স্থানে সিমেন্ট সরে গিয়ে ফাঁকা হয়ে গেছে। তিনি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল প্রধান কার্যালয়ে সংস্কারের আবেদন করেছেন। সেখান থেকে দরপত্র আহ্বান ও অর্থ ছাড় হলেই সেতুটির সংস্কারকাজ শুরু হবে।