কোপ খেয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে মহাসড়কে গাড়িচাপায় নাসিরের মৃত্যু, বলছে পুলিশ

নাসির উল্লাহ
নাসির উল্লাহ

কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার নাওতলা গ্রামের চা–দোকানদার নাসির উল্লাহ খুনের ঘটনায় দুজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে কুমিল্লার ৭ নম্বর আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জালাল উদ্দিন ১৬৪ ধারায় এই জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

জবানবন্দি দেওয়া দুজন হলেন চান্দিনা উপজেলার বাখরাবাদ গ্রামের মোফাজ্জেল ওরফে মোয়াজ্জেম ও নাওতলা গ্রামের অটোরিকশাচালক সানাউল্লাহ।

এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁর কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, অনৈতিক সম্পর্কের ঘটনায় জরিমানা দেওয়ার বিষয় নিয়ে ভর্ৎসনা করার জেরে নাসিরকে তাঁর দোকানে দা দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে তিনি প্রাণরক্ষায় দোকান থেকে বেরিয়ে মহাসড়কে দৌড়াতে থাকেন। একপর্যায়ে একটি বাস বা ট্রাকের চাপায় নাসিরের মৃত্যু হয়।

১৩ জানুয়ারি সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনা উপজেলার নাওতলা এলাকার অন্তত দেড় কিলোমিটার এলাকা থেকে নাসির উল্লাহর শরীরের টুকরো টুকরো অংশ উদ্ধার করে পুলিশ ও এলাকাবাসী। এ ঘটনায় নাসিরের বাবা রবিউল্লাহ বাদী হয়ে চান্দিনা থানায় ১৩ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম লিখিত বক্তব্যে বলেন, ১২ জানুয়ারি রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে নাওতলা গ্রামের সানাউল্লাহ চা পান করতে নাসিরের দোকানে যান। এ সময় দোকানে উপস্থিত ছিলেন বাখরাবাদ গ্রামের মোয়াজ্জেম। একপর্যায়ে চা–দোকানি নাসির একটি মেয়ের সঙ্গে অনৈতিক শারীরিক সম্পর্ক করে জরিমানা দেওয়ার বিষয়ে সানাউল্লাহকে ভর্ৎসনা করেন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। এরপর সানাউল্লাহ একটি সিগারেট নিয়ে দোকানের পাশে যান। একই সঙ্গে মোয়াজ্জেমকে ডেকে নেন। এরপর সানাউল্লাহ বলেন, ‘আজকে নাসিরকে মারব। আমি আবার নাসিরের দোকানে এলে তোকে বললে, তুই দোকানের বাইরের লাইট অফ করবি।’ এরপর রাত আনুমানিক ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে সানাউল্লাহ দোকানে আসেন। সানাউল্লাহর ইশারায় মোয়াজ্জেম লাইট অফ করেন। এ সময় দোকানে থাকা বঁটি দিয়ে সানাউল্লাহ অতর্কিতে নাসিরের মাথায় কোপ দেন। নাসির চিত্কার করে দোকান থেকে লাফিয়ে মহাসড়কে আসেন। এ সময় সানাউল্লাহ ও মোয়াজ্জেম ধর ধর বলে ধাওয়া দেন। পরে একটি বাস অথবা ট্রাক চাপা দিলে নাসির মারা যান। এরপর মোয়াজ্জেম ও সানাউল্লাহ আবার নাসিরের দোকানে ফিরে আসেন। পরে মোয়াজ্জেম বঁটির রক্ত পানিতে ধুয়ে ফেলেন। এরপর তাঁরা বাড়িতে ফিরে যান। ধারণা করা হচ্ছে, পরবর্তী সময়ে সারা রাত মৃতদেহের ওপর দিয়ে যানবাহন চলার কারণে সেটি ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে মহাসড়কে ছড়িয়ে পড়ে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ ইকতিয়ার উদ্দিন বলেন, বুধবার বেলা তিনটায় চান্দিনা বাজার থেকে মোয়াজ্জেমকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন ও সানাউল্লাহর নাম প্রকাশ করেন। পরে সানাউল্লাহকে রাত সাড়ে আটটায় মাধাইয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। কেউ যাতে তাঁদের সন্দেহ না করেন, তাই তাঁরা এলাকা ছাড়েননি। এরপর সানাউল্লাহর স্বীকারোক্তি মোতাবেক দোকান থেকে বঁটি উদ্ধার করা হয়।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ৭ জানুয়ারি রাত আটটার দিকে সানাউল্লাহসহ আরও কয়েকজন একটি প্রতিবন্ধী কিশোরীকে (১৫) ধর্ষণ করেন। এ ঘটনায় সালিস হয়। এতে সানাউল্লাহ ৩ হাজার টাকা জরিমানা দেন। এটা নিয়ে ভর্ৎসনা করায় নাসিরকে হত্যা করা হয়।

তবে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, মোয়াজ্জেমকে ১৫ জানুয়ারি পুলিশ আটক করে। এখন বলছে বুধবার (২২ জানুয়ারি)। আর ওই কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি। এলাকার লোকজনও তেমনটা জানেন না। তাই এ ঘটনার আরও অধিকতর তদন্ত হওয়া দরকার।
জানতে চাইলে বিকেলে পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মোয়াজ্জেমকে গত বুধবারই গ্রেপ্তার করি।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাখাওয়াত হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আজিম উল আহসান, নাজমূল হাসান, চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবুল ফয়সল প্রমুখ।