আরও ড্রিমলাইনার বিক্রি করতে চায় বোয়িং, এবার 'না' বিমানের

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

একটি–দুটি নয়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বহরে এখন ১৮টি উড়োজাহাজ। রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমানের সুপরিসর বোয়িং ৭৭৭ আর ড্রিমলাইনার ৭৮৭ উড়োজাহাজগুলো ডানা মেলে চলছে দূর গন্তব্যে। গত ডিসেম্বর মাসে দেশে আসে ‘সোনার তরী’ ও ‘অচিন পাখি’ নামে দুটি বোয়িং। জুন মাসের মধ্যে ড্যাশ-৮ কিউআর ৪০০ মডেলের তিনটি উড়োজাহাজ বিমানে নাম লেখাবে। উড়োজাহাজের সংখ্যাটি বেড়ে হয়ে যাবে ২১। সব মিলিয়ে একসঙ্গে এতসংখ্যক উড়োজাহাজ বিমানবহরে আগে কখনো ছিল না। তাই বিমান এখন দক্ষিণ এশিয়ার সেরা এয়ারলাইনস হওয়ার দৌড়ে নাম লেখাতে চায়।

চাওয়া-পাওয়া আর আশার স্বপ্ন কতটুকু বাস্তবে রূপ নেয়, সেটি হয়তো সময়ই বলে দেবে। তবে সেরা হওয়ার প্রতিযোগিতার নামার কথা শুনেই হয়তো উড়োজাহাজ নির্মাণের বড় বড় প্রতিষ্ঠান বিমানকে বিভিন্ন প্রস্তাবও দিচ্ছে। গত ২ জানুয়ারি ঢাকায় এসে বিমানের কাছে আরও দুটি ড্যাশ-৮ বিক্রির প্রস্তাব দিয়ে গেছেন কানাডার উড়োজাহাজ নির্মাণকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান কানাডিয়ান কমার্শিয়াল করপোরেশনের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ইভোনি চিন। বোয়িং কোম্পানিও বিমানের কাছে আরও চারটি ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে। বোয়িংয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী এয়ারবাসও বিমানের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে চায় বেশ জোরেশোরে। বোয়িংয়ের ড্রিমলাইনারগুলো কিনবে কি কিনবে না, সেটি নিয়ে বিমানের মধ্যে আলোচনা চলছে। তবে ড্যাশ-৮ দুটি কেনার ব্যাপারে বিমান কর্তৃপক্ষ বেশ ইতিবাচক।

যে চারটি ড্রিমলাইনার বিক্রি করতে চায় বোয়িং

২০১৮ সালে বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে ছয়টি ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার কেনার চুক্তি করেছিল ভারতের বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থা ভিসতারা এয়ারলাইনস। গুড়গাঁওভিত্তিক এই বিমান সংস্থা ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট ব্যাংকক ও সিঙ্গাপুরে রুট দিয়ে আন্তর্জাতিক রুটে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে। তবে দূরপাল্লার রুট হিসেবে নিউইয়র্ক ও সিডনিতে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য ছয়টি উড়োজাহাজ কিনতে বোয়িংয়ের সঙ্গে চুক্তি করেছিল ভিসতারা।

২৯৯ জন যাত্রী ধারণক্ষমতার ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৯ উড়োজাহাজ একটানা ১৫ ঘণ্টা উড়তে পারে। নিউইয়র্ক বা সিডনির মতো দূরপাল্লার ফ্লাইটে তাই কেবিন ক্রুদের জন্য বিশ্রামের জায়গার প্রয়োজন পড়ে। তবে বোয়িং যেভাবে ভিসতারার ড্রিমলাইনারগুলোর ভেতরের নকশা করেছিল, তাতে কেবিন ক্রুদের জন্য বিশ্রামের জায়গা ছিল না। এই চাহিদা পূরণ না করায় বোয়িংয়ের কাছ থেকে ছয়টির মধ্যে চারটি ড্রিমলাইনার কেনার চুক্তি বাতিল করে ভিসতারা এয়ারলাইনস। এই চারটি উড়োজাহাজ এখন বিমানের কাছে বিক্রি করতে চাইছে বোয়িং। বিমানকে নতুন করে চারটি উড়োজাহাজ বিক্রির জন্য বোয়িংয়ের প্রস্তাবের বিষয় চলতি জানুয়ারি মাসে বিদেশি গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

তবে ভিসতারা এয়ারলাইনস যে কারণে বোয়িংয়ের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে, একই সমস্যা রয়েছে বিমানের চারটি ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৮ মডেলের আকাশবীণা, হংস বলাকা, রাজহংস ও গাঙচিলে। ৭৮৭-৯ এর তুলনায় ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার আকৃতিতে কিছুটা ছোট হলেও এর যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ২৭১ জন। এটিও টানা ১৫ ঘণ্টা উড়তে পারে। কিন্তু বিমানের ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারে কেবিন ক্রুদের জন্য বিশ্রামের জায়গা রাখা হয়নি। তবে সদ্য কেনা দুটি ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনারের প্রতিটিতে কেবিন ক্রুদের জন্য ৮টি বিছানা রয়েছে। বিমানের বেশ কয়েকজন কেবিন ক্রু জানান, দূরপাল্লার ফ্লাইটের জন্য ড্রিমলাইনার কেনা হয়েছে। চীনের হাইনান এয়ারলাইনস না কেনায় ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার কিনেছে বিমান। নতুন দুটি বিশ্রামের জায়গা রয়েছে। তবে আগের চারটিতে কেন নেই, সেটি বিমান কর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারবে।

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

বিমান সূত্রে জানা গেছে, গত ডিসেম্বর মাসে ‘সোনার তরী’ ও ‘অচিন পাখি’ দেশে আনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে যায় বিমানের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল। সে সময়ই ভিসতারার চারটি উড়োজাহাজ বিমানকে কেনার প্রস্তাব দিয়েছিল বোয়িং। এমনই তথ্য জানান বিমানের প্রতিনিধিদলের এক সদস্য। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের এই কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বোয়িংয়ের পক্ষ থেকে ভিসতারার চারটি ড্রিমলাইনার কেনার প্রস্তাব বিমানকে দেওয়া হয়। তবে এখনই বিমান নতুন করে উড়োজাহাজ কেনার কথা ভাবছে না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণত একটি নতুন উড়োজাহাজ ২০ বছর ব্যবহারের উপযোগী থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উড়োজাহাজের কার্যক্ষমতা কমতে থাকে। এর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বেড়ে যায়। জ্বালানি তেলের চাহিদাও বাড়তে থাকে। তাই বড় বড় বিমান সংস্থা মেয়াদ ফুরানোর বহু আগে পুরোনো উড়োজাহাজ পরিবর্তন করে ফেলে। নতুন উড়োজাহাজে রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় কম। মুনাফাও বেশি থাকে।

বিমান সূত্রে জানা গেছে, নতুন করে আরও কয়েকটি উড়োজাহাজ কেনার পরিকল্পনা করছে বিমান। এ জন্য একটি প্রস্তাবও তৈরি করা রয়েছে। কারণ, বিমানের চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজের মধ্যে ‘পালকি’ ও ‘অরুণ আলো’ এরই মধ্যে ৯ বছর পেরিয়ে ১০ বছরে পা দিয়েছে। তাই ২০২২ সালের পর বিমান আরও বেশ কিছু উড়োজাহাজ কিনতে পারে।

বিমানের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বোয়িং চারটি ড্রিমলাইনার কেনার আমাদের প্রস্তাব দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু এ মুহূর্তে আমরা নতুন উড়োজাহাজ কেনার কথা ভাবছি। আমরা এখন নতুন রুট প্ল্যান নিয়ে কাজ করছি। নতুন উড়োজাহাজ কেনার জন্য অর্থের বিষয়ও আছে।’

নতুন উড়োজাহাজ কেনার বিষয়ে প্রস্তাব বোয়িংয়ের কাছ থেকে আসেনি বলে জানান বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মহিবুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ধরনের প্রস্তাব আমাদের কাছে আসেনি। আমরাও ভাবছি না। তবে কানাডার পক্ষ থেকে নতুন ড্যাশ-৮ বিক্রির প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের দেওয়া হয়েছে। তবে বিমানের বোর্ড (পরিচালনা পর্ষদ) এখন নেই। নতুন করে বোর্ড গঠন হলে ড্যাশ-৮ কেনার ব্যাপারে আলোচনা হবে।’